মালদার দুর্গাবাড়ি মোড়েই আদি কংসবণিক বাড়ি,অতীতের সেই বৈদিক পৌরাণিক প্রথা মেনে প্রতিবছরই এখানে দুর্গাপুজো হয়

মালদা ২০ সেপ্টেম্বর ঃ  মালদার প্রাচীন শহর ইংরেজবাজার। সেই শতাব্দী প্রাচীন শহরের গা ঘেঁষে বয়ে গিয়েছে মহানন্দা। ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, প্রায় ৩৫০ বছর আগে মহানন্দার নিমতলা ঘাটে পাওয়া গিয়েছিল দেবী দুর্গার চণ্ডী রূপের একটি পাথরের মূর্তি। এক বৃদ্ধা স্বপ্নাদেশ পেয়ে সেই মূর্তিটি মহানন্দা নদী থেকে সংগ্রহ করে নিমতলা ঘাটে প্রতিষ্ঠা করেন। সেই থেকেই শুরু হয়েছিল দুর্গাপুজো।

    কালের নিয়মে বৃদ্ধা প্রয়াত হন। তাঁর মৃত্যুর পর শহরের এক জমিদার পরিবার পুজোর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তাঁদের বাড়িতেই প্রতিষ্ঠিত হয় দেবীর প্রস্তর মূর্তি। তারপর থেকে নিষ্ঠাভরে পাথরের মূর্তিতেই পুজো হত জমিদার বাড়িতে। তবে কালক্রমে জমিদার মশাইয়ের মৃত্যু হয়। পুজোর দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় মালদার আদি কংসবণিক পরিবারের হাতে। তারপর থেকে কংসবনিক পরিবারের মন্দিরেই পূজিতা হন জগন্ময়ী।

    মালদার দুর্গাবাড়ি মোড়েই আদি কংসবণিক বাড়ি। অতীতের সেই বৈদিক পৌরাণিক প্রথা মেনে প্রতিবছরই এখানে দুর্গাপুজো হয়। যে ঐতিহ্যে পুজো শুরু হয়েছিল জমিদার বাড়িতে, তা আজও অটুট। প্রথা মেনে পুজোর ঘট ভরতে একই সাজে পায়ে হেঁটে মহানন্দার নিমতলা ঘাটে যান আদি কংসবণিক পরিবারের সদস্যরা। পায়ে হেঁটে প্রায় আধ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে নিমতলা ঘাট থেকেই মহানন্দার জল তুলে পুজোর ঘট ভরে বাড়িতে ফেরেন। আদি কংসবণিক পরিবারের দুর্গা পুজো দেখতে প্রতিবছরই হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমান। কারণ, দর্শনার্থীরা আজও প্রায় সাড়ে তিনশ বছর আগের সেই ইতিহাসের গন্ধ খুঁজে পান। মালদার কংসবণিক পরিবারের ইতিহাসও কম জৌলুসের নয়। তাঁদের দুর্গা মন্দির ১৫২ বছরের ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। সেই মন্দিরেই স্থাপিত রয়েছেন সিংহ বাহিনী চণ্ডীমূর্তি। পুজোয় প্রতিদিনই হয় চণ্ডীপাঠ।

    এই মুহূর্তে আদি কংসবণিক পরিবারের সদস্যসংখ্যা প্রায় চারশ। পরিবারের সদস্য কুণাল দত্ত জানান, পুজোর দিনগুলিতে বাড়ির সকলে দুর্গা মন্দিরেই থাকেন। ডাকের সাজে দেবী দুর্গাকে সাজানো হয়। প্রাচীন কাল থেকে হয়ে আসা নিয়ম মেনে আজও দেবী পূজিত হন। বিসর্জনের ক্ষেত্রেও অব্যহত পুরনো রীতি। দেবীকে কাঁধে করে মহানন্দার ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর কিছুক্ষণ নৌকাবিহার শেষে দেবীকে বিদায় দেওয়া হয়।