|
---|
নতুন গতি নিউজডেস্ক : দুর্গা পুজোর দিনগুলিতেও পূর্ণ ছুটি মিলবে না মালদহের তৃণমূল কংগ্রেসের নেতানেত্রী ও জনপ্রতিনিধিদের। নিজেদের সুবিধা মতো সময়ে হলেও বেশ কিছুক্ষণ করে তাঁদের কাটাতে হবে জনসংযোগের কাজে। বাঙ্গালীর শ্রেষ্ঠ উৎসবের দিনগুলিতে রাস্তা জুড়ে মানুষের যে ঢল নামে দুর্গা পুজোর কয়েকদিন তৃণমূলের জন সংযোগের টার্গেট তাঁরাই বলে রাজ্যের শাসকদল সূত্রে জানা গিয়েছে।
তৃণমূলের জেলা সভানেত্রী মৌসম নুর বলেন, দুর্গা পুজো বাঙ্গালির শ্রেষ্ঠ উৎসব বলেই পরিচিত। উৎসবের দিনগুলিতে আমরাও মালদহের বাসিন্দাদের সঙ্গে নিরবিচ্ছিন্ন সম্পর্কে থাকতে চাই। এই বিষয়ে যথাশীঘ্র একটি বৈঠক ডাকা হচ্ছে। দলের নেতা কর্মীদের মতামত চাওয়ার পাশাপাশি উৎসবের দিনগুলিতে জনসংযোগ সংক্রান্ত দলের কিছু পরিকল্পনাও তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
উল্লেখ্য, দুর্গা পুজোর ধর্মীয় দিকটির সঙ্গে সচেতনভাবে ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে চলা সিপিএম-ও বিভিন্ন গণসংগঠনের ব্যানারে পুজোর দিনগুলিতে স্টল দেয়। মার্ক্সীয় পুস্তিকা বিক্রির পাশাপাশি আড্ডা, আলিঙ্গনের মাধ্যমে যথাসম্ভব সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে কুশল বিনিময় সারেন বাম নেতাকর্মীরা। নির্দিষ্ট দায়িত্ব নিয়ে দলের জেলাস্তরের প্রায় সব নেতাই থাকেন এই ধরণের স্টলগুলিতে।
বেশ কয়েক বছর যাবত একই রাস্তায় হাঁটছে বিজেপি’ও। সমমনোভাবাপন্ন সংগঠনের ব্যানারে মালদহ শহরের প্রাণকেন্দ্রে নিজস্ব স্টল থাকে বিজেপি’রও। ওই স্টলেও দলের প্রচার পুস্তিকার পাশাপাশি পাওয়া যায় বিজেপি’র নেতাকর্মীদেরও।
এবার তাই একই রাস্তায় হাঁটতে চলেছে তৃণমূলও। জানা গিয়েছে শুধু মালদহ শহরেই নয়, জেলা জুড়ে জনপ্রিয় বিশেষ বিশেষ মণ্ডপগুলির কাছেই থাকবেন স্থানীয় তৃণমূল নেতানেত্রীরা। শিশুদের হাতে বিস্কুটের প্যাকেট, চকোলেট, ছোটখাটো উপহার তুলে দিয়ে তাঁদের অভিভাবকদের কাছ থেকে টেলিফোন নম্বর চেয়ে নেওয়া হবে। এই ভাবে তৈরি হবে কনট্যাক্ট ব্যাঙ্ক। পরবর্তীতে ওই টেলিফোন নম্বরগুলির মাধ্যমে দলের বক্তব্য, কর্মসূচী পৌঁছে দেওয়া হবে নাগরিকদের কাছে। এমনকী তাঁদের মতামতও চাওয়া হবে বিভিন্ন বিষয়ে।
দেদার পানীয় জল, ঘাম মোছার টিস্যু পেপার পুজো দর্শনার্থীদের মধ্যে বিতরণের পাশাপাশি শিশু, কিশোর, কিশোরীদের জন্য প্রশ্নোত্তর পর্ব রাখার চিন্তাভাবনাও চলছে দলের মধ্যে। কাউকে পেন, কাউকে চকোলেট দেওয়া হবে প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিলেই।
এছাড়াও দলের স্টলে বিক্রি হবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা বিভিন্ন বইও। একই সঙ্গে থাকছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিভিন্ন ছবি। ১৯৮৪ সালে যাদবপুরের সাংসদ হিসাবে জনপ্রতিনিধির জীবন শুরু করা থেকে মুখ্য্যমন্ত্রী হিসাবে তাঁর বিভিন্ন মেজাজের ছবি ও ভিডিও দেখানো হবে স্টলগুলি থেকে। বিরোধী দলনেত্রী হিসাবে তাঁর ভূমিকা, লড়াই ও সংগ্রামের নানা দৃশ্য ভিডিওগুলির মধ্যে দেখা যাবে বলে জেলা তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে। শোনানো হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিভিন্ন ভাষণের ক্লিপিংও। তাছাড়াও, রাজ্য সরকারের বিভিন্ন জনহিতকর কর্মসূচীর ব্যাপক প্রচারও করা হবে এই স্টলগুলি থেকে।
একই সঙ্গে থাকবে, ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচীর ব্যাপক প্রচারও। এই কর্মসূচীর জন্য নির্দিষ্ট টেলিফোন নম্বর ছোট চিরকুটের মধ্যে বিলি হবে জনসাধারণের মধ্যে।
মৌসম বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জননেত্রী। মানুষের সঙ্গে তাঁর নিবিড় যোগাযোগ। আমরা তাই পুজোর সময় এই যোগাযোগকে এক অন্যমাত্রায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। আমি বিশ্বাস করি পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর পাশাপাশি আমাদের দলের নেতানেত্রী থেকে কর্মীরা সকলেই আমাদের জনসংযোগ কর্মসূচীর মাধ্যমে কিছুটা সময় মানুষের বৃহত্তর পরিবারের সঙ্গেও কাটাবেন।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, তৃণমূল বা বিজেপি কী করবে তা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। আমরা বাগাড়ম্বরে বিশ্বাস করি না। প্রতিবারের মতো এবারও আমাদের নিজস্ব জনযোগাযোগ ব্যবস্থা থাকবে।
তবে বিজেপি’র জেলা সভাপতি গোবিন্দ মণ্ডলের বক্তব্য, তৃণমূলকে আমরা অনুসরণ করব না। পুজোর দিনগুলি উৎসবের পাশাপাশি বছরে একবার বাপের বাড়িতে আসেন সপরিবারে। তা নিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে থাকেন আপামর হিন্দু বাঙালি। আমরা এই ধর্মীয় আবেগের দিনগুলিকে রাজনীতি দিয়ে ভারাক্রান্ত করতে চাই না। তবে সুযোগ পেলে মানুষের কাছে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় থেকে নরেন্দ্র মোদি সকলের কথাই বলব।