|
---|
নতুন গতি ওয়েব ডেস্ক : পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শাসকদল নির্দেশ জারি করেছে যে, আগামী ১লা সেপ্টেম্বর থেকে দূর্গা পূজা উপলক্ষে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে মিছিল বের হবে। তাতে অংশ গ্রহণ করবে রাজ্যের সকল ধর্ম ও বর্ণের সাধারণ কর্মহীন মানুষ। এই মিছিলের মাধ্যমে এটা প্ৰমাণ করা হবে যে, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। এই সিদ্ধান্তকে গভীরভাবে উপলব্ধি করে অল ইন্ডিয়া ইমামস কাউন্সিল রাজ্য সভাপতি মাওলানা আব্দুত তাওয়াব বলেন যে, “আমাদের দেশ গণতান্ত্রিক দেশ। এই দেশ ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ। সকল নাগরিকের নিজস্ব ধর্ম থাকবে কিন্তু রাষ্ট্র বা রাজ্য বা কোন রাজনৈতিক দলের কোন ধর্ম থাকতে পারে না। ফলে কোন রাজনৈতিক দল তার নিজস্ব ব্যানারে কোন ধর্মীয় কাজ করতে পারে না, আর না পারে তার অনুসারী ও সমর্থকদের পার্টির নামে কোন ধর্মীয় কাজে অংশ গ্ৰহণ করার নির্দেশ দিতে। এটাই দেশের আদর্শ। ফলে রাজ্য সরকার আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে দূর্গা পূজার নামে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে যে মিছিল বের করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে তা বাতিল করতে হবে”। তিনি আরো বলেন “ধর্ম যার যার উৎসব সবার” এই কথা ধর্ম বিরোধী। রাজনীতিতে এই কথা চলতে পারে কিন্তু ধর্মে এই কথা চলবে না। এই ক্ষেত্রে ধর্মীয় ব্যক্তির সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে, কোন রাজনৈতিক দল বা নেতার কথা নয়। কোন সরকার বা রাজনৈতিক দলের কাজ দলীয়ভাবে ধর্ম পালন করা নয়, বরং তার অন্যতম কাজ হল ধর্ম নিরপেক্ষ থেকে সকল মানুষকে নিজ নিজ ধর্ম পালন করার ব্যবস্থা করে দেওয়া। ফলে দূর্গা পূজার নামে পার্টির ব্যানারে মিছিল বের করা ধর্মকে রাজনীতির স্বার্থে ব্যবহার করা ছাড়া কিছুই না। এটা ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলের কাজ হতে পারে না। এটা প্রত্যাখ্যান করতে হবে”।
তিনি পূর্বের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বলেন যে, “ধর্মের কাজ যখনই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হবে তখনই সমস্যা দেখা দিবে যেমন রাম নবমীর সময় হয়েছে, বিভিন্ন সময়ে ধর্মের নামে অস্ত্র মিছিলের সময় দেখা গিয়েছে। রাম নবমী পালন কোন নতুন বিষয় নয় কিন্তু সেটার যখনই রাজনৈতিক স্বার্থে করা শুরু হয়েছে তখনই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। বিজেপি শাসিত রাজ্যে এটাই রাজনীতি ও এটাই হয়ে থাকে। ফলে দূর্গা পূজার নামে টিএমসির ব্যানারে বিভিন্ন স্থানে সরকারি নির্দেশে মিছিল বের হলে সেটাই হবে যেটা বিজেপি করে থাকে। তাই দেশের বর্তমান সময়ে দূর্গা পুজোর নামে মিছিল বের করার সিদ্ধান্ত বাতিল করা উচিৎ”।
তিনি রাজ্য সরকারের নিকট দাবি করেন যে, “ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতির ফলে দেশ কোথায় গিয়েছে সেটা জানার পরেও এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক নয়। সরকারের দায়িত্ব হল বেকারত্ব দূর করা, রোজগারের ব্যবস্থা করা, সাংবিধানিক মূল্য বোধ রক্ষা করা, ধর্ম নিরপেক্ষতা বজায় রাখা এবং সকলের ব্যক্তিগত বিশ্বাসকে সম্মান করা। এই সব কাজ না করে পার্টির ব্যানারে দূর্গা পূজার নামে আয়োজিত মিছিলে সমর্থকদের অংশ গ্রহণ করার নির্দেশ দেওয়ার অর্থই হল ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ করা। কারণ ইসলাম অনুসারে অন্য ধর্মের কোন কাজ পালন করা বৈধ নয়। ধর্ম যেমন আপন আপন, ধর্ম কেন্দ্রিক সমস্ত উৎসব, কাজ, আচরণ সবই আপন আপন। ধর্ম ও ধর্ম কেন্দ্রিক উৎসব পৃথক বিষয় নয়। তাই যদি হয় তাহলে দূর্গা পূজা যে সময়ে হয়, দূর্গা উৎসব অন্য সময়ে হয় না কেন ? ঈদ যে সময়ে হয়, উৎসব অন্য সময় হয় না কেন ? তাই সরকারের উচিৎ নিজের দায়িত্ব পালন করা এবং ধর্ম ও ধর্ম কেন্দ্রিক সমস্ত কাজ করার পরিবেশ তৈরী করা। নিজে থেকে কোন ধর্মের অংশ হয়ে যাওয়া সরকার না কোন রাজনৈতিক দলের কাজ নয়। এমনটা হওয়া খুবই ভয়ঙ্কর বিপদ”।
তিনি জনগণের নিকট দাবি করেন যে, তারা যেন কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থক হতে গিয়ে ব্যক্তি অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার ও দায়িত্ব ভুলে না যায়। তাদের উচিৎ সচেতন হয়ে দেশের আইন কাজে লাগানো এবং সমর্থক হওয়ার নামে কোন দলের গুলামী না করা। কারন দেশের আইন শেষ কথা, কোন রাজনৈতিক নেতা বা দলের কথা ভুল হতেই পারে। অনুদান নয়, অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে। তবেই দেশ এগিয়ে যাবে।