দুঃস্থের ছায়ার ফুড ব্যাংক

শেখ মোহাম্মদ ইমরান,নতুন গতি,মেদিনীপুর:-
মেদিনীপুর শহরের রাজা নরেন্দ্রলাল খান মহিলা মহাবিদ্যালয় বা গোপ কলেজের ইংরেজি বিভাগে ছিল নবীন বরণ উৎসব। কলেজে নবাগত ছাত্রীদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানোর পাশাপাশি অনুষ্ঠিত হয় নাচ-গান ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেই সাথে ছিল খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা। দুপুরে খাওয়ার শেষে দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের ছাত্রীরা লক্ষ্য করেন বেশ কিছু খাবার বেঁচে আছে।

বেঁচে যাওয়া খাবার নষ্ট হওয়ার বদলে যদি আধপেটে থাকা মানুষের পেটে যায়, এই ভেবে ছাত্রীরা দুঃস্থের ছায়ায় যোগাযোগ করেন। দুঃস্থের ছায়া খাবার বিতরণের দায়িত্ব নিতেই, কলেজের ছাত্রীরা সুন্দর প্যাকেট করে দুঃস্থের ছায়ার এক কর্মীর হাতে তুলে দেন। সেই খাবারগুলো নিয়ে সন্ধ্যায় দুঃস্থের ছায়ার কর্মীরা বেরিয়ে পড়েন শহরের রেলওয়ে স্টেশন, স্টেশন সংলগ্ন গির্জা ও উড়ালপুলের কাছে। ওখানে আধপেটে অবস্থায় ঘুমিয়ে থাকা সকলকে যত্ন ও আদরের সাথে পরিবেশন করানো হয় খাবার গুলো।
খাবার নষ্ট না করে অভুক্ত মানুষদের কথা মনে করার জন্য, দুঃস্থের ছায়ার পক্ষ থেকে অগাধ ভালোবাসা রইল রাজা নরেন্দ্রলাল খান মহিলা মহাবিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রীদের প্রতি। সহিষ্ণুতার আচরণ, অপরককে শ্রদ্ধা, পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর মানুষকে ভালোবাসা পাল্টে যাচ্ছে যে সময়ে, সেই সময়ে রাজা নরেন্দ্রলাল খান মহিলা মহাবিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রীদের এহেন দায়িত্বশীলতাকে সাধুবাদ জানাই দুঃস্থের ছায়ার কর্মীরা।

বিয়ে বাড়ি, অন্নপ্রাশন, পুজো, জন্মদিন, ঈদ, বিবাহবার্ষিকী সহ যেকোন অনুষ্ঠানে খাবার বেঁচে গেলে, নষ্ট না করে দুঃস্থের ছায়ায় যোগাযোগ করুন। দুঃস্থের ছায়ার কর্মীরা আপনার বাড়ি থেকে খাবার সংগ্রহ করে ওই ক্ষুধার্থ মানুষগুলোর কাছে পৌঁছে যাবে, যাদের দুবেলা পেট পুরে খেতে পাইনা।
খাদ্য অপচয় সারা বিশ্বের সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। সারা বিশ্বে খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে খাদ্য প্রস্তুতকরণ, খাবারের পর বেচেঁ যাওয়া পর্যন্ত অপচয়ের পরিমান মোট খাদ্যের প্রায় এক তৃতীয়াংশ। আমাদের দেশেও এর পরিমানটা কম নয়। যেখানে দেশের একটা নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠির মানুষ প্রতিদিন অর্ধাহারে অনাহারে দিনের পর দিন-রাতের পর রাত কাটাচ্ছে, সেখানে ভাল খাবার তো দুরের কথা, কিছু একটা খাবার জোটাটাই রীতিমত হিমশিমের ব্যাপার। জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুসারে বিশ্বে প্রতি নয়জন মানুষের মধ্যে একজন ক্ষুধার্ত। এই ক্ষুধার্ত মানুষগুলোর রোজকার খাবার যোগাবার জন্য বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী সংগঠনের পাশাপাশি খুব ক্ষুদ্র পরিসরে প্রচেষ্টা দুঃস্থের ছায়ার। খাবার গুলো আর নর্দমায় না ফেলে যোগাযোগ করবেন দুঃস্থের ছায়ার সাথে। আপনার বেঁচে যাওয়া খাবার, অসহায় মানুষের অন্তত এক বেলার আহারের যোগান দেবে।