|
---|
বালুরঘাটের গঙ্গারামপুরে একটি নির্বাচনী জনসভা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই সভায় তিনি বলেন যে মালদার এবং দেশের মানুষের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে বিজেপি-কে ক্ষমতা থেকে হঠাতে হবে।
তার বক্তব্যের কিছু অংশঃ
আজ এখানে অনেকে এসেছেন, নিজেদের বাড়ি, খেত খামার ছেড়ে।
আগে আমি গঙ্গারামপুর প্রায়ই আসতাম। আমার ছাত্র রাজনীতির দিন থেকে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে আমি এখানে অনেক বার এসেছি।
একবার হয়েছিল কী আমরা দলের এক নেতার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম, তার প্রার্থী হওয়ার কথা ছিল। বেশ রাত হয়ে গেছিল, তাই তার বাড়ির দরজা বন্ধ হয়ে গেছিল আর আমাদের পাঁচিল ডিঙ্গিয়ে ঢুকতে হয়েছিল। তখন বয়স কম ছিল…
এখানে বিভিন্ন স্টেডিয়াম, খেলার মাঠ করা হয়েছে, শিল্প কেন্দ্র, MSME সেন্টার, তাঁত হাব, সেতু, রাস্তা,
ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ সেন্টার হয়েছে, ৪০০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে, কলেজ, আই টি
আই, পলিটেকনিক কলেজ, মাল্টি সুপার হাসপাতাল করা হয়েছে, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে,
কৃষি বিদ্যালয় ক্যাম্পাস হচ্ছে। আই সি ইউ, সি সি ইউ, এইচ ডি ইউ, ন্যায্য মূল্যের
ওষুধের দোকান করা হয়েছে।
রেলমন্ত্রী থাকাকালীন অনেক নতুন ট্রেন ও রেল লাইন চালু করেছিলাম, অনেক কাজ শেষ হয়নি আমাদের
সরকার এলে আমরা আরও কাজ করব।
বিজেপির নেতারা বসন্তের কোকিল—নিজেদের প্রয়োজন মত আসে, আর প্রয়োজন ফুরালে ফিরে যায়।
সিপিএম ৩৪ বছরে এই রাজ্যের জন্য কিছুই করেনি। আমরা ক্ষমতায় আসার পরে আর্থিক সমস্যার মধ্যেও নানা রকম কাজ শুরু করেছি।
একবার ভাবুন কোন সরকার ২ টাকা কেজি দরে চাল দেয়, বিনামুল্যে ওষুধ ও চিকিৎসা দেয়, আরও কত প্রকল্প চালু করেছি আমরা।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম, স্বামী বিবেকানন্দ, রামকৃষ্ণ পরমহংস-র মতো মহাপুরুষেরা চির কাল বলে এসেছেন এবং লিখে গেছেন সর্ব-ধর্ম সমন্বয়ের কথা আর বিজেপি এখানে এসেছে তা ধ্বংস করার জন্যে।
বিজেপি সরকার নিজেদের প্রচার ছাড়া আর কি করেছে? চা-ওয়ালার আজ চা পাতা নেই, চিনি নেই এমনকি চায়ের জন্যে গরম জলও নেই। আর এখন উনি চৌকিদার সেজে বসে আছেন। কার এরকম চৌকিদার চাই?
উনি নোটবন্দী আর অন্যান্য প্রকল্পের মধ্যে দিয়ে দেশের প্রচুর ক্ষতি করেছেন। চাকরীর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২ কোটি লোকের চাকরি খেয়েছেন।
ওরা দিল্লী সামলাতে পারল না এখন নাকি বলছে বাংলা সামলাবে। বাংলায় কি আছে তার ওরা কি জানে?
আজ আমাদের রাজ্যে প্রায় সবাই কোনও না কোনও প্রকল্পের সাহায্য পাচ্ছেন।সবুজ সাথী, স্বাস্থ্য সাথী, কণ্যাশ্রী প্রকল্প চালু হয়েছে। কিষান ক্রেডিট কার্ড চালু হয়েছে। রাজ্যের প্রায় প্রতিটা মানুষ সাহায্য পাচ্ছে।
বাংলায় কৃষকদের জমির খাজনা ও মিউটেশন ফি মুকুব করে দেওয়া হয়েছে। কৃষকদের শস্য বীমার সব টাকা দেয় রাজ্য সরকার। কৃষক বন্ধু প্রকল্পে কৃষকদের বছরে ২ বার ২৫০০ টাকা করে মোট ৫০০০ টাকা দেওয়া হয়। প্রান্তিক চাষিরাও পাচ্ছে।
কিছু মানুষ আছে যারা কাজ করে আর কিছু মানুষ আছে যারা শুধু বাজে কথা বলে।
কিছুদিন অপেক্ষা করুন ভোটের ফলাফলের জন্যে- প্রতিটি রাজ্যে বিজেপি গোল্লা পাবে। উত্তর প্রদেশ, তামিলনাডু, কেরালা, কর্নাটকা, মহারাষ্ট্র ওডিষা সব রাজ্যে। আর বাংলায় কিছুই পাবে না। তাহলে ওদের ভোট দেবেন কেন?
ওরা এটা জানে বলে এখন টাকা দিয়ে ভোট কিনতে চেষ্টা করছে। ওদের ফাঁদে পা দেবেন না।
আমরা দার্জিলিং-এ, কুচবিহার, জলপাইগুড়িতে জিতব। এবাবের পালা মালদা ও বালুরঘাটের, এখানেও জিতব।
আমার আদিবাসী ভাই-বোনেরা, কি তোমরা সরকারী প্রকল্প থেকে সাহায্য পাও নি? তোমরা অন্য দলের থেকে কী আশা কর?
আমি হিন্দু ধর্মের সহনশীল রুপে বিশ্বাস করি, যেটা বিজেপি করে না। আমি বিশ্বাস করি সমস্ত মানুষ সমান। আমাদের ভাষা আলাদা হতে পারে আমরা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসতে পারি আমাদের আচার পদ্ধতি আলাদা হতে পারে, কিন্তু আমরা সবাই মানুষ, আমরা সবাই ভারতবাসী।
আমরা অনেক ভাষাকে সরকারী স্বীকৃতি দিয়েছি যেমন রাজবংশি, কামতাপুরি, গুর্মুখি।
সুতরাং দয়া করে তৃণমূলের জোড়া ফুলে ভোট দেবেন। সকাল সকাল ভোট দেবেন। মনে রাখবেন আপনারা যদি আপনাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে চান, উন্নয়ন চান, তাহলে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন, বিজেপি বলে কিছু থাকবেনা।
NRC ও নাগরিকত্ব বিলের নামে বৈধ ভারতীয়দের তাড়িয়ে দিতে চাইছে। আমরা সবাই নাগরিক। কিন্তু ওরা বলবে ছয় বছরের জন্য বিদেশী হয়ে যাও,তারপর ওরা নাগরিকত্ব দেওয়া নিয়ে ভাববে। কিন্তু ছয় বছরের জন্য এইসব নাগরিকদের কী হবে?
নিজের মাতৃভূমির কথা মাথায় রেখে ভোট দেবেন। বিজেপি আপনাকে আপনার মাতৃভূমি থেকে তাড়িয়ে দিতে চাইছে।
তাই এবার আর বিজেপি না, তৃণমূল কংগ্রেস শুধুমাত্র রাজ্যের প্রয়োজনে নয় দেশের প্রয়োজনে দরকার। নতুন যারা ভোট দেওয়ার অধিকার পেয়েছেন তারা এটা মনে রাখবেন।