|
---|
ইকাবুল সেখ, নদিয়া: আজ নাকাশিপারার সুধাকর পুর উচ্চ বিদ্যালয়ে এক আবেগপূর্ণ বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হলো। মরণব্যাধি করোনার কবলে পড়ে প্রায় দীর্ঘ এক বছর বিদ্যালয় বন্ধ থাকা কালে সুধাকর পুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্রী প্রদীপ কুমার রায় মহাশয়, ক্রিয়া বিভাগের শিক্ষক শ্রী শিব শংকর দাস মহাশয় ও শ্রী শৈলেন্দ্র দাস বৈরাগ্য মহাশয় অবসর গ্রহণ করেন।
“বিদায় মানে সব ভুলে যাওয়া নয় বরং বিদায় মানে হলো অতীত স্মৃতি মনে রেখে বেঁচে থাকার শুরু”
স্বাভাবিকভাবেই উক্ত সময়ে ওনাদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন বা বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয়নি। তাই আজ ‘বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা দিবস’ এ সেই অশ্রুসিক্ত ভরাক্রান্ত মনে বিষাদী সুরের বিদায় সম্বর্ধনার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় অনুষ্ঠানের আয়োজনের সুযোগ পায় নি শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেন বিদ্যালয়ের বর্তমান টি আই সি হিমাদ্রি সিংহ রায় মহাশয়। উনার একক অক্লান্ত পরিশ্রমে সোমবার দুপুর ১২ টার সময় স্কুল প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয় এই হৃদয়ে কম্পন সৃষ্টি কারি বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান।
প্রথমেই বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা তাঁদের প্রাণপ্রিয় প্রধান শিক্ষক, শ্রী প্রদীপ কুমার রায়, শ্রী শিব শংকর দাস ও শ্রী শৈলেন্দ্র দাস বৈরাগ্য মহাশয় দের পুষ্পস্তবক ও চন্দনের সহযোগে বরণ করে নেয়। তারপর, সকল শিক্ষক ও কিছু কিছু শিক্ষার্থী, একে একে এই বিদায় সভায় বক্তব্য রাখেন ও অবসর জীবনে পদার্পণ কারী শিক্ষকদের হাতে বৃহৎ থেকে ক্ষুদ্র উপহার তুলে দেওয়া হয়।
নক্ষত্র স্বরূপ এই শিক্ষকরা সুদীর্ঘ বছর এই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। ফলে তাঁদের বিদায় অনুষ্ঠানে শুধুমাত্র বর্তমান পাঠরত ছাত্র-ছাত্রী নয় বিগত ২০-২৫ বছরের পুরনো ছাত্র-ছাত্রী তথা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সাধারণ মানুষের ঢল নামে। আর এর থেকে বোঝা যায় যে, শিক্ষকতার জীবন তাঁদের কতটা উজ্জ্বল ছিল।
অনেকের মতে,”এনারা এক একজন শুধুমাত্র এই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিল না ছিল এই বিদ্যালয়ের একটি স্তম্ভ”। ওনাদের এইভাবে বিদায় দেওয়াটা সকলের পক্ষেই খুবই কষ্টকর। এছাড়াও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা বলেন, সরকারি চাকরি জীবনের সময়সীমা ফুরিয়ে গেলে অবসর নিতে হবে ঠিকই, তবে শিক্ষক তোমায় আমাদের হৃদয় গহনে থেকে।
তোমাদের কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষা, ভালোবাসা, প্রেম-প্রীতি ও সন্তান স্নেহ, বিগত ২০ বছরেও ভুলিনি আগামীতেও ভুলবো না।
এইদিন আয়োজন করা হয়েছিল কিছু সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের, যেখানে অংশগ্রহণ করেছিল কিছু শিক্ষকসহ প্রতিভাবান ছাত্র-ছাত্রীরা। যেখানে, নাচ, গান, আবৃতি, সঙ্গীত ও সমসাময়িক পরিস্থিতি সম্পর্কে বক্তব্য রাখা হয়।
উক্ত দিন বিষাদের এই বিদায় সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথি, শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষার্থীগণ ও স্থানীয় জনসাধারণ (বিগত ছাত্র-ছাত্রী) অশ্রুসিক্ত নয়নে বিদায়ী শিক্ষকের সংবর্ধনা (বিদায়ী মানপত্র) প্রদানকালে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। শিক্ষকের প্রতি এই ধরনের বিরল সংবর্ধনা সহসা চোখে পড়ে না। শিক্ষার্থীদের এ ধরনের অশ্রুসজল ও সম্মাননা প্রদানের মধ্য দিয়ে বিদায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলের হৃদয় স্পর্শ করে।