২৩ দিনের চিকিৎসার জন্য প্রায় পঁচিশ লক্ষ টাকা খরচ করেও ছেলেকে ফিরে পেলেন না বাবা।

নতুন গতি নিউজ ডেস্ক: একদিকে যখন কোভিডে জর্জরিত দেশ, ক্রমশ নাজেহাল পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে আমাদের রাজ্যজুড়ে। ভেঙে পড়ছে চিকিৎসা পরিকাঠামো। তখনই অন্যদিকে চিকিৎসার খরচ যোগাতে গিয়ে রোজই সর্ব শান্ত হচ্ছে না আমজনতা। কোথাও একদিনের বিল ৭০০০০ কোথাও বা বেসরকারি হাসপাতালে তিনদিনের বিল কয়েক লাখ টাকা। সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষের পক্ষে অসহায় মৃত্যু দেখা ছাড়া বোধ হয় গতি নেই। এর আগেও চিকিৎসাক্ষেত্রে একাধিকবার গাইডলাইন প্রদান করেছে রাজ্য। জানানো হয়েছে, কোন ক্ষেত্রে কত টাকা নিতে পারবে বেসরকারি হাসপাতালগুলো। কিন্তু নিয়মকে থোড়াই কেয়ার করে আইনের চোখের নিচেই চলছে বেআইনি ব্যবসা। এর জেরে তিনটি বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড রোগী ভর্তি নেওয়ার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে এর আগে। কিন্তু তাতেও কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই, হাসপাতালগুলির।

    এই মহামারীর সুযোগে রমরমিয়ে চলছে ব্যবসা। ফের একবার সামনে এলো এমনই এক রিপোর্ট। ২৩ দিনের চিকিৎসার জন্য প্রায় পঁচিশ লক্ষ টাকা খরচ করেও ছেলেকে ফিরে পেলেন না বাবা। উল্টে এখন সর্বস্বান্ত তিনি। মেটিয়াবুরুজের বাসিন্দা প্রবীণ মনু মল্লিকের ছেলে মিলন মল্লিক করোনা আক্রান্ত হয়ে মুকুন্দপুরের ?একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন গত ২ মে। ২৫ মে পর্যন্ত লড়াই চালালেও শেষ পর্যন্ত বাড়ি ফেরা হলো না তার। হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মিলন। এরপর বিল দেখেই মাথায় হাত পড়ে বাবার। ২৩ দিনের খরচ হয়েছে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা। কোনভাবে ১৯ লক্ষ টাকা জোগাড় করে হাসপাতালে জমা দিয়েছিলেন মনু মল্লিক। কিন্তু বডি ছাড়েনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শেষ পর্যন্ত আরও ৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার পর মৃত ছেলেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় বাবার কাছে।

    একই অবস্থা দেখা গিয়েছে বজবজেও। একটি সাধারন নার্সিংহোমে ভর্তি হতে গেলে রোগীর পরিবারকে ডিপোজিট রাখতে হচ্ছে প্রায় এক লক্ষ টাকা। মহেশতলার স্পেশাল হাসপাতালে সাধারণ ক্ষেত্রে ভর্তির জন্য ডিপোজিট দেওয়া হচ্ছে এক লক্ষ, আইসিসি হতে ভর্তির জন্য নেওয়া হচ্ছে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। সাধারণ বেড ভাড়া দৈনিক প্রায় সাত হাজার টাকা। স্বাভাবিকভাবেই এসব শুনলেই থরহরি কম্প শুরু হবে সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে, চিকিৎসা তো অনেক দূরের কথা। আর এর জেরেই সারা দেশ জুড়ে প্রায় বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন হাজার হাজার রোগী। অথচ হাসপাতালে ক্ষেত্রে দৈনিক বেড ভাড়া নিয়ম বেঁধে দেওয়া হয়েছে। বারবার বলা হয়েছে, আগে যা ছিল তার থেকে এক টাকাও বেশি নেওয়া যাবে না। কিন্তু কারো যখন সর্বনাশ তখনই তো কারোর পৌষ মাস। আর বাংলা প্রবাদকেই এখন যেন জীবনের মন্ত্র করে ফেলেছে বেসরকারি হাসপাতালগুলো।

    রাজা এমনও নিয়োগ করা হয়েছে যে রোগীর পরিবার যদি কমদামি ওষুধ ব্যবহার করতে চান তাহলে সেই সুযোগ দিতে হবে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিয়মের তোয়াক্কা না করেই সর্বস্বান্ত করা হচ্ছে রোগী পরিবারকে। একদিকে যখন ফ্রন্ট লাইনে দাঁড়িয়ে লড়াই করছেন চিকিৎসকরা, তখনই অন্য দিকে চিকিৎসাকে রীতিমতো ব্যবসা বানিয়ে লাখের ওপর লাখ টাকা কামাচ্ছেন মালিক গোষ্ঠী।