বাঙ্গীটোলায় আর্সেনিক মুক্ত জলের ট্যাঙ্কে গাফিলতি, স্কুলের ট্যাপ দিয়ে বেরোচ্ছে লাল জল

নাজমুস সাহাদাত , মোথাবাড়ি :  মালদার মোথাবাড়ির বাঙ্গীটোলা অঞ্চলে একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে প্রায় ৫০০০০ জনসাধারণ এখনও আর্সেনিকমুক্ত পানীয়জল থেকে বঞ্চিত ! তথ্য সুত্রে ,  ঘটনাটি সত্যিই আশ্চর্যজনক ।  দিনের পর দিন আর্সেনিক মুক্ত জলাধার থেকে বিষাক্ত জল খেতে এবং ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন ওই বাঙ্গীটোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের জনসাধারণ ।  শনিবার মর্নিং স্কুল থাকায় অলিটোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহ-শিক্ষক সকালে স্কুলের মিড ডে মিল রান্না করার জন্য জল ভরতে গিয়ে দেখেন ট্যাপ দিয়ে লাল জল বেরোচ্ছে ।   তারপরেই তিনি ট্যাপ দিয়ে লাল জল বের হওয়ার ভিডিও করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে দেন বলে খবর । ওই ভিডিওটি মূহুর্তের মধ্যেই ভাইরাল হয়ে যায় এলাকাজুড়ে ।

    ভাইরাল ভিডিওর খবর পৌঁছে যায় কালিয়াচক ২ নং ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক রমল সিং বিরদি , বাঙ্গীটোলা অঞ্চলের প্রধান তহিদুর রহমান, পি.এইচ.ই. দপ্তরের এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার প্রশান্ত সরকারের কাছে ।  খবর পেয়েই ছুটে আসেন পি.এইচ.ই. এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার প্রশান্ত সরকার ।   তার সাথে আরও ছিলেন ৩ জন স্টাফ এবং বাঙ্গীটোলা অঞ্চলের জল-সরবরাহ এর দায়িত্বে থাকা সুফল মন্ডল ।  প্রথমেই তারা ওলি টোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান।  সেখানকার সমস্ত বিষয় তারা খতিয়ে দেখেন।  তারপর সেখান থেকে তারা বাঙ্গীটোলা হাসপাতালের PHE-র জলট্যাংক প্ল্যান্টে গিয়ে খোঁজ চালান।  তড়িঘড়ি ওখানকার সমস্ত স্টাফ কে ডেকে ওখানকার ফিল্টার মেশিন, চেম্বার, রিজার্ভার ট্যাংক, কেমিক্যাল সমস্ত কিছু নিজেরাই চেক করেন তারা।  এবং স্টাফদের হুঁশিয়ারি দিয়ে সবকিছু পরিষ্কার করার নির্দেশ দেন।  তার সাথে ফিল্টার প্রসেসের ট্রেনিং দেন তাদের।

    ইঞ্জিনিয়ার প্রশান্ত সরকার জানান,  খুব শিগগিরই ব্যবহার  যোগ্য এবং পানযোগ্য জল সরবরাহের আশ্বাস দেন জনসাধারণদের ।  তিনি আরও বলেন , ইতিমধ্যেই সরকার দুটি আর্সেনিকমুক্ত প্ল্যান্ট এর কাজ হাতে নিয়েছেন । একটা মথুরাপুরে এবং আরেকটি মেহেরাপুরে নির্মাণ হবে খুব শিগগিরই। ফলে কালিয়াচক-২ নং ব্লকে জলের সমস্যা খুব তাড়াতাড়ি দূর হয়ে যাবে। বাঙ্গীটোলা অঞ্চলের প্রধান তহিদুর রহমান বলেন,  “আমার অঞ্চলে পানীয় জলের সমস্যা দীর্ঘদিনের।  আমি নিজে বিডিও মহাশয়ের সাথে কথা বলেছি। তার নির্দেশ মতো আমরা সরজমিনে তদন্তে গিয়েছিলাম । ইতিমধ্যেই ‘জলস্বপ্ন’ প্রকল্প চালু হয়ে গেছে, কিন্তু যে ঠিকাদারী সংস্থা কাজের বরাত পেয়েছেন তাঁর গাফিলতির জন্য কাজ আটকে রয়েছে । খুব শিগগিরই কাজ চালু হয়ে যাবে ।

    এলাকাবাসী তথা সমাজকর্মী রবিউল ইসলাম জানান, “দীর্ঘদিন ধরে নেতা মন্ত্রীরা আশ্বাস দিয়ে গেলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি! ফলে প্রতিনিয়ত এই বিষাক্ত ব্যবহারের অযোগ্য জলপান করে হাজার হাজার শিশু এবং মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। সুদূর ভবিষ্যতে আর্সেনিকোসিস অসুখ হয়ে বহু লোক মারা যেতে পারে , তার সম্ভাবনাও রয়েছে ।  এই অঞ্চলের ভাঙ্গন পীড়িত লোকজনের কিনে জল খাওয়ার মত আর্থিক অবস্থা নেই। তাই জলের পরিমাণ নয় জলের গুনগত মানের উপর PHE দপ্তর কে খেয়াল রাখতে হবে এবং ভবিষ্যতে দীর্ঘস্থায়ীভাবে  সমাধান করতে হবে ।  নাহলে আমরা এলাকাবাসী বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।