চুমকি প্রিয়া থেকে স্যাক্সোফোন সিস্টার হয়ে ওঠার গল্প নিমার চিত্রনাট্যর থেকে কম নয়

পানাগড়,পশ্চিম বর্ধমান: স্যাক্সোফোন সচরাচর মেয়েরা বাজায় না। শেখার বিষয়েও উৎসাহ দেওয়া হয় না। আর মেয়েদের শখ! এগুলি সমাজ নির্ধারিত মানসিকতার বাইরে গেলেই বাতিল শুধু নয় তিরস্কারও মেলে! “মেয়েছেলে! এসব বাজিয়ে কী হবে?” হিসেবের বাইরে গিয়ে চুমকী- প্রিয়া এখন ‘স্যাক্সোফনিস্ট সিস্টার’! সাড়ে তিন ঘন্টা বাজিয়ে মিলছে বার হাজার টাকা। লকডাউনেই হাতেখড়ি। চুমকি -প্রিয়া দুজনেই মা। ইচ্ছে থাকলে বয়স -সংসার- বাধা সব পেরিয়ে উঠে দাঁড়ানো সম্ভব। একই পরিবারের দুই বৌমা সেই উদাহরণ গড়ল। ৪২% মহিলার শহরতলি পানাগড়। দামোদর -অজয় শক্তিশালী দুই নদীর মধ্যের অবস্থানে সমান্তরালভাবে দুই জায়ের স্বপ্ন বহমান।

    গান-বাজনা ঘরানার পরিবারে বিবাহ। দীর্ঘ লকডাউনে পরিবারে কাজ নেই। আবার ঘরে বসে সময়ও কাটে না। শ্বশুর পবন বাদ্যকারের কাছে আবদার করে দুই বৌমা। স্যাক্সোফোন শিখবে। তিন মাস টানা চেষ্টা করার পর একটা গান তুলে ফেলে দুইজন। মনোযোগী ছাত্রী পেয়ে উৎসাহের শেষ নেই শ্বশুরের। মিউজিক ট্রাকেও বাজাতে শিখে নেয় প্রিয়া-চুমকি খুব দ্রুত। চৌকাঠ পেরিয়ে জগত দেখার অপার আগ্রহ এই অসাধ্যসাধনে এগিয়ে দেয় দুইজনকে। বিদ্যালয়ে অষ্টম পার করা হয়নি ওদের। তার আগেই বিয়ে হয়ে যায়। সংসার ওদের স্বপ্নপূরণের সোপান হয়ে ওঠে।

    দেশজুড়ে মহিলাদের ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার গল্প। হত্যা আর হননের খতিয়ান। শরীরভিত্তিক এক সামাজিক নির্মাণের পারসপেক্টিভ ছড়াছড়ি। এক মেয়েকে দোষী চিহ্নিত করতে হাজার মহিলাদের উল্লাস ও ভিড় তৈরির সম্মতি আদায় চলেছে সন্তর্পণে । তার মধ্যে জেগে থাকে চুমকি -প্রিয়ারা। ক্ষমতার হাত ধরেই সমাজ অর্থনীতির সংজ্ঞায়িত সক্ষমতা অর্জনের মন্ত্র এরা ছড়িয়ে দেয়। কনজুগ্যাল লাইফ মানে শুধু আত্মসমর্পণ নয়,আত্মদর্শী হয়ে ওঠাও সম্ভব। শুধু দেখার আয়নাটা একান্ত নিজের হতে হবে! সোশ্যাল পাওয়ার ও স্টাটাসের এক ব্যতিক্রমী থিম নির্মাণের সাহসই এম্পাওয়ারমেন্টের মূল কথা। ফিমেল ডোমেন নির্মাণের ভিত এভাবেই শক্ত হোক। জেগে উঠুক সব প্রিয়া-চুমকিরা। ক্ষমতাহীন সত্তার মধ্যেই ক্ষমতার প্রতাপ জাগিয়ে রাখছে ওরা। মেয়েদের কাজ বলে কিছু নেই। হাতের কাছের সুযোগটুকু লোকে কী বলবে বলে হাতছাড়া না করার নামই মেয়েদের উচ্চাকাঙ্খা। মেয়েদের এই সামান্য উচ্চাকাঙ্খাই মেয়েদের সবরকম আর্থ-সামাজিক ডিস্যাডভান্টেজের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সরব হওয়ার হাতিয়ার। যা নির্ধারিত তা অনিবার্য নয়। যা অনিবার্য তা অন্যদের জন্য নির্ধারণ করে দেওয়ার কাজটা খুব জরুরি। চুমকি -প্রিয়ারা মেয়েদের জন্য এটুকু করে উঠতে পারছে মনে হয়!