নির্বাচনের আগে উত্তপ্ত গাজোল, জমি দখল ঘিরে রাজনৈতিক বিবাদে চলল গুলি-বোমা

 

    নতুুন গতি,মালদা , ১২ ফেব্রুয়ারি : গাজোল থানার পান্ডুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের আলমপুর গ্রামে বিজেপির বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ । গুলি-বোমা চালিয়ে, তীর মেরে তৃণমূল কর্মীর পরিবারের জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে । বৃহস্পতিবার রাতে এই ঘটনার পর শুক্রবার আলমপুর গ্রামের হাটখোলা এলাকা রীতিমতো থমথমে।
    দুষ্কৃতীদের বাধা দিতে গিয়ে জখম হয়েছেন চারজন তৃণমূল কর্মী। আহতদের মধ্যে একজন বৃদ্ধাও রয়েছেন। সকলের প্রাথমিক চিকিৎসা হয়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে । এমনকি এই ঘটনায় বিজেপির জেলা সভাপতি নাম জড়িয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন আক্রান্ত তৃণমূল কর্মীর পরিবার। রাতে এই হামলার অভিযোগ দায়ের হতেই তদন্তে গিয়ে গাজোল থানার পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোল ভাঙা তিরের নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করে নিয়ে গিয়েছে তদন্তকারী পুলিশ কর্তারা বলে জানা গিয়েছে। এই হামলার ঘটনায় বিজেপির জেলা সভাপতিসহ আটজনের বিরুদ্ধে গাজোল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন স্থানীয় তৃণমূল কর্মী বিনয় সাহা এবং তার বৃদ্ধা মা পার্বতী সাহা। পুরো ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ।
    পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আলমপুর হাটখোলা এলাকার ৪১ শতক একটি ফাঁকা জমির দখল দাড়ি নিয়ে গোলমালের ঘটনাটি ঘটেছে। এব্যাপারে আক্রান্তের পরিবার কয়েকজনের বিরুদ্ধে গাজোল থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তবে এই ঘটনার পিছনে রাজনৈতিক কোন বিবাদ রয়েছে কিনা সে ব্যাপারে অবশ্য গাজোল থানার পুলিশ কোনো মন্তব্য করে নি।
    পুলিশ সুপার অলোক রাজুরিয়া জানিয়েছেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
    আক্রান্ত তৃণমূল কর্মী বিনয় সাহা বলেন, তাদের আলমপুর হাটখোলা এলাকায় ৪১ শতক পৈত্রিক সম্পত্তি রয়েছে। আর সেই জমি দখলের চেষ্টা চালায় স্থানীয় বিজেপি দুষ্কৃতীরা। এই ঘটনার পিছনে বিজেপির জেলা সভাপতির মদত রয়েছে । বৃহস্পতিবার আমাদের জমিতে চাটাইয়ের বেড়া দিয়ে ঘর তৈরি করেছিল বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা । তখনই আমরা প্রতিবাদ করি। সেই সময় ওরা বোমা-গুলি, তির নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমার বৃদ্ধা মা পার্বতী সাহাকে মারধর করেছে দুষ্কৃতীরা। যেহেতু আমরা তৃনমূল করি, তাই দল পরিবর্তন করে বিজেপিতে যোগদান করতে বলেছিল এলাকার ওই দলের কিছু নেতা। কিন্তু ওদের কথা না শোনার কারণে এখন জোর করে আমাদের জমি দখল করতে মরিয়া হয়ে পড়েছে। আমরা এই ঘটনার প্রতিবাদ করে পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছি।
    আক্রান্ত আলমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের অঞ্চল কমিটির সদস্য দিলীপ সাহা বলেন, কয়েকদিন আগে বিজেপির জেলা সভাপতি এলাকায় এসে আমাদের তৃণমূল ছাড়ার জন্য হুমকি দিয়েছিল। তার কথায় গুরুত্ব না দেওয়ায় বৃহস্পতিবার এলাকার কয়েকজন বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা জমি দখল করতে আসে। তাদের বাধা দিতে গেলে ওরা প্রকাশ্যে গুলি , বোমা ছুড়ে আমাদের খুনের চেষ্টা চালায়। এরপর এই এলাকায় চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রাতেই বিজেপির জেলা সভাপতিসহ আটজনের বিরুদ্ধে গাজোল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। পাশাপাশি তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বকেও পুরো ঘটনার কথা জানিয়েছি। দুষ্কৃতীদের হামলার পর আমরা এক প্রকার ঘরবন্দি হয়ে রয়েছি।
    আক্রান্ত বৃদ্ধা পার্বতী সাহা বলেন, আমার পরিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির দলকে সমর্থন করে , এটাই আমাদের অন্যায়। তার জেরেই ওরা এখন জোর করে জমি দখলের চেষ্টা করছে। আমাকে ওরা মারধর করেছে।
    এদিকে শুক্রবার আলমপুর হাটখোলা গ্রামে দুষ্কৃতীদের এই হামলার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে ফাঁকা জমিতে হাতে তৃণমূলের পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ দেখান আক্রান্তের পরিবারসহ স্থানীয় তৃণমূল কর্মী, সমর্থকেরা। এই রাজনৈতিক বিবাদ নিয়ে চরম উত্তেজনা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ওই এলাকায়।
    তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ মৌসুম নূর জানিয়েছেন, গাজোলে দলীয় একটি কর্মীর পরিবারের ওপর জমি দখলের নিয়ে হামলার ঘটনার কথা শুনেছি। বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীদের ঘটনাটি ঘটিয়েছে। পুলিশ যাতে অবিলম্বে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে সেই দাবি করা হয়েছে।
    এদিকে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ বিজেপির জেলা সভাপতি গোবিন্দ চন্দ্র মন্ডলের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তার সঙ্গে কোনো রকম ভাবে কথা বলা সম্ভব হয় নি। এপ্রসঙ্গে বিজেপির জেলার সহ-সভাপতি অজয় গাঙ্গুলী জানিয়েছেন, যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তৃণমূলের নিজেদের গোষ্ঠী কোন্দল এবং পারিবারিক বিবাদের জেরে এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। কিন্তু নিজেদের এই গোলমালকে এখন রাজনৈতিক রং লাগানোর চেষ্টা করছে এলাকার তৃণমূলীরা।
    গাজোল থানার পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।