প্রচারের আলোয় এসে স্বার্থসিদ্ধি করাই গর্গ চ্যাটার্জিদের মুল লক্ষ্য

জাকির হোসেন সেখ, নতুন গতি:

    এখন ব‍্যক্তি, সম্প্রদায় ও ধর্মের বিরুদ্ধে মারাত্মক ধরনের খিস্তি খেউড় দিয়েও কেউ কেউ অতি বিখ্যাত হ‌ওয়ার সুযোগ খোঁজে। কারণ তারা জানে যে, তাদের দেয়া ওইসব মারাত্মক ধরনের খিস্তি খেউড়ের পাল্টা হিসেবে, উল্টো দিক থেকে তাদের প্রতিও খিস্তি খেউড়ের ঝড় ধেয়ে আসবে। সমালোচনার ঝড় তুলে- সোস্যাল মিডিয়া, পত্র পত্রিকা, নিউজ পোর্টাল, টিভি চ্যানেল সহ আমজনতাও বেশ কয়েকদিন তাদের নামে মুখরিত থাকবে। সচেতন ভাবে এই উদ্দেশ্য পুরণের লক্ষ্যেই কিছু বাছাই করা শব্দ প্রয়োগে মুসলিম সম্প্রদায়কে আঘাত করা। বহুদিন ধরেই মুসলিম সম্প্রদায়কে আঘাত করে নিজেদেরকে আঞ্চলিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে বিখ্যাত করে তোলার এই সহজ পদ্ধতি চলে আসছে।
    সলমন রুশদি, করিম ভাই চাগলা, তসলিমা নাসরিনদের মতো কমবেশি বিখ্যাত কিছু মানুষ শুধু নয় বরং পশ্চিমবঙ্গের হোসেনুর রহমানের মতো অসংখ্য এলিতেলি ব‍্যক্তিও এমন পদ্ধতি অবলম্বন করে অল্পদিনেই নিজদের সেলিব্রিটি বানিয়েছে অতীতে।
    ভারতের বর্তমান সমাজে শুধুমাত্র রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার হিসেবে এই পদ্ধতিকে কাজে লাগাতে শুরু করে বিজেপি। আর বিজেপির এই দেখানো পথেই হাঁটতে চেয়েছে বাহ‍্যিকতায় তৃনমূল কিন্তু ভিতরে ভিতরে উগ্র মুসলিম বিদ্ধেষী গর্গ চ্যাটার্জিরা। তারা জানে যে, একমাত্র মুসলিম সম্প্রদায়কে আঘাত করলেই তাদের টিআরপি হু হু করে বেড়ে যাবে।
    হিন্দু নরমপন্থা অবলম্বন করা বর্তমান তৃনমূলের কাছে গর্গ চ্যাটার্জিদের নিরাপত্তা তো নিশ্চিত। দরকার ছিল শুধু বিজেপির কাছে বার্তা দেওয়া যে,- “আমরা তোমাদের জন্যও আছি।”
    অত‌এব এই ঘটনার পরে গর্গ চ্যাটার্জিদের নিয়ে বাইপাসের তৃণমূল অফিসের সাথে দিল্লির অমিত শাহের অফিসের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা চলবেই। সামনের লোকসভা নির্বাচনে ভোটের টিকিট পাইয়ে দেয়া। জনগণের রায় বিপক্ষে গেলেও অসুবিধা নেই। রাজ‍্যসভা আছে। কেন্দ্র এবং রাজ‍্য সরকার প্রযোজিত আরো কত পদ রয়েছে। কিছু একটা ভাগ‍্যে জুটবেই। বাবুল সুপ্রিয় উদাহরণ। গড়পড়তা যেমন হয়ে আসছে আরকি ! এ পদ্ধতি চলতেই থাকবে।

    কথা সেটা নয়। কথা হলো আমাদের করণীয় কি ? এই ক্ষেত্রে আমাদের মতামতটাও কি একটা নির্দিষ্ট অভিমুখে স্থির রাখা উচিত নয় ? নাকি আমরাও সকালে এককথা বলে বিকেলেই তা থেকে পাল্টি খাবো ?
    গর্গ চ্যাটার্জি যে প্রসঙ্গে ত্বহা সিদ্দিকী, কামরুজ্জামান সহ অন্যান্য ইমাম সংগঠনের নেতৃত্বে মুসলিম জমায়েতের নিন্দা করে বিষ ছড়িয়ে দিলো ফেসবুকে, গর্গ চ‍্যাটার্জীর ফেসবুক পোস্টের আগে পর্যন্ত তথাকথিত অনেক মুসলিম দরদীকেও দেখেছি ওই এক‌ই প্রসঙ্গে তার থেকেও অনেক তীব্র ভঙ্গিতে ত্বহা সিদ্দিকী, কামরুজ্জামানদের নিন্দা করতে। হ্যাঁ তফাৎ একটা ছিল আর সেটা হলোঃ- ত্বহা সিদ্দিকী, কামরুজ্জামানদের তীব্র বিরোধিতা করতে গিয়ে তথাকথিত মুসলিম দরদীরা
    গর্গ চ‍্যাটার্জীর মতো “জামাত শুয়োরগুলো” শব্দ দুটি ব‍্যবহার করেনি। তারমানে গর্গ চ্যাটার্জি এবং গর্গ চ‍্যাটার্জীর ফেসবুক পোস্টের আগে করা তথাকথিত সেইসব মুসলিম দরদীদের কুৎসিত জঘন্য নিন্দার অভিমুখ ছিল এক‌ই দিকে। ত্বহা সিদ্দিকী এবং কামরুজ্জামান। তফাৎ ছিল খালি শব্দ আর ভাষাতে।
    অথচ গর্গ চ্যাটার্জি জন্মগত স্বভাবের দোষে যে মুহুর্তে ফেসবুক পোস্টে ত্বহা সিদ্দিকী, কামরুজ্জামানদের বিরোধীতায় “জামাত শুয়োরগুলো”র জমায়েত বলে গালাগালি করলো, গর্গ চ‍্যাটার্জীর ফেসবুক পোস্টের আগে যেসব তথাকথিত মুসলিম দরদী, ত্বহা সিদ্দিকী, কামরুজ্জামান সহ অন্যান্য ইমাম সংগঠনের নেতৃত্বে মুসলিম জমায়েতের তীব্র নিন্দা করে পোস্ট দিচ্ছিলো, লাইভে আসছিল– সেই তারাই অমনি ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে ত্বহা সিদ্দিকী, কামরুজ্জামান সহ অন্যান্য ইমাম সংগঠনের নেতৃত্বে মুসলিম জমায়েতের পক্ষে দাঁড়িয়ে গিয়ে গর্গ চ‍্যাটার্জীর বিরুদ্ধে নেমে পড়লো। মানুষ কি এগুলো দেখছে না ?
    আচ্ছা বলুন তো, ত্বহা সিদ্দিকী, কামরুজ্জামান, রুহুল আমিন ভাইজান, আব্দুল মাতিন, ইমতিয়াজ আহমেদ মোল্লা, সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী, ডাঃ র‌ইসুদ্দিন আহমেদ সহ অন্যান্য নেতৃত্বের আলাদা আলাদা বা এক‌ই সাথে করা কোনো মুসলিম জমায়েতকে আমরা নাইবা সমর্থন করলাম। নাইবা তাদের দাবি দাওয়ার সাথে সহমত পোষণ করলাম। নাইবা হলাম তাদের সমাবেশের অংশিদার। করলোই বা তারা ইমাম ভাতা বৃদ্ধি করার দাবি। উঠলোই বা কোনো সমাবেশ থেকে বিজেপি বা মোদির বিরুদ্ধে স্লোগান। তাতে আমাদের কি সত্যিই খুব ক্ষতি হচ্ছিল ? এইসব ইস‍্যু কি মুসলিম ঐক্যের পক্ষে খুবই অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় ? এতোসব না ভেবে আমরা অতি দ্রুততার সাথেই কেউ কেউ তাদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতে নেমে পড়ি। মুসলিম হয়ে মুসলিম ঐক্যের স্বার্থে কি একটুও চুপ থাকা যায় না ? না। তা থাকবো কেন ? আমি আমরা যে এখন নতুন যুগের ফেসবুক সেলিব্রেটি ? অত‌এব ত্বহা সিদ্দিকী, কামরুজ্জামান, রুহুল আমিন ভাইজান, আব্দুল মাতিন, ইমতিয়াজ আহমেদ মোল্লা, সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী, ডাঃ র‌ইসুদ্দিন আহমেদ ফারুক আহমেদ ইত‍্যাদি ব‍্যক্তিত্বদের বিরুদ্ধে লাগাও প্রচার ফেসবুকে।
    বলার কথা হলো, এগুলো আমাদের অবশ্যই ছাড়তে হবে ভাই।

    আমার ভুল হলে ক্ষমা করবেন। একথা বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, আমাদের মুসলমানদের মধ্যে কিছু জনের এই অপরিণামদর্শীতাই আজ গর্গ চ‍্যাটার্জীদের মতো বহুরুপী, ভীতু, কাপুরুষ, স্বার্থপর, সাম্প্রদায়িক মানুষদের ভেতরের লুকিয়ে থাকা মুসলিম বিদ্বেষের লকলকে জিভটাকে বেরিয়ে আসার সাহস জোগাচ্ছে।

    গর্গ চ‍্যাটার্জী তার আসল পরিচয় দিয়ে দিয়েছে তার ভাষাতে। আমরা বুঝতে পারছি তার মনের ভেতর লুকিয়ে আছে বিজেপি আরএসএসের থেকেও তীব্র মুসলিম বিদ্বেষ। এসবের প্রতিরোধে আমরা যত বেশি বিচ্ছিন্ন হবো তত বেশি ক্ষতি হবে আমাদের। মুসলিম হিসেবে আমাদের একে অপরের প্রতি আন্তরিকতার উদারতা দেখাতেই হবে।
    পরিশেষে বলি, গর্গ চ‍্যাটার্জীর বিরুদ্ধে র‌ইলো আমাদের একরাশ ধিক্কার। সরকারের কাছে দাবি করছি নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহন করা হোক।

    জাকির হোসেন সেখ।
    শিরাকোল, উস্থি, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা।