|
---|
নিজস্ব প্রতিবেদক:- পূর্ব পুরুষের রীতি মেনে বিগ্রহ তৈরি করে নিজের হাতে প্রথম পুজো দিয়ে জহুরা চন্ডীকে মন্দিরে পাঠালেন মৃৎশিল্পী। প্রাচীন কাল থেকে এই নিয়ম মেনেই জরুরা চন্ডীর বিগ্রহ তৈরি করে আসছেন মালদহ শহরের পাল পরিবার। এখন তেরো পুরুষের বর্তমান প্রজন্ম প্রাচীন জহুরা চন্ডীর বিগ্রহ তৈরি করে আসছেন। পাল পরিবারের সব বর্তমান পরিবারের অভিভাবক জ্যোতির্ময় পাল জহুরা চন্ডীর বিগ্রহ তৈরি করছেন। পূর্বপুরুষের নিয়ম মেনেই বর্তমান বাড়ির বড় ছেলে বিগ্রহ তৈরি করছেন। তিনি বারো তম উত্তরসূরি। তাঁর ছেলে বাবাই পাল তেরো তম উত্তরসূরি হয়ে বিগ্রহ তৈরিতে এখন থেকেই বাবাকে সাহায্য করছেন।প্রাচীন কাল থেকেই মালদহের ইংরেজবাজারের জহুরাতলায় পুজিত হয়ে আসছেন মা জহুরা। জহুরা চণ্ডীর নামেই গ্রামের নাম হয়েছে জহুরা তলা। প্রাচীন বাংলার রাজধানী গৌড়ে সেন বংশের আমলে তৈরি হয়েছিল এই জহুরা চন্ডী মন্দির। সেন বংশের কুলদেবি ছিলেন জহুরা। জহুরা ছাড়াও আরো তিনটি চন্ডী মন্দির তৈরি হয়েছিল সেন আমলে। সেগুলিরো অবস্থান বর্তমানে মালদায় রয়েছে। প্রাচীনকাল থেকেই বৈশাখ মাসের প্রতি শনি ও মঙ্গলবার পূজিত হন দেবী জহুরা চন্ডী। সেই নিয়ম আজও অব্যাহত। পূর্বপুরুষ ধরে জহুরা চণ্ডীর বিগ্রহ তৈরি করে আসছেন মালদা শহরের পাল পরিবার।জ্যোতির্ময় পাল বর্তমান মৃৎশিল্পী। নিয়ম মেনে চৈত্র মাসের কোন শনিবার বা মঙ্গলবার জহুরা চণ্ডীর বিগ্রহ তৈরি করেন মাটি দিয়ে। নিয়ম রয়েছে জহুরা চণ্ডীর বিগ্রহ তৈরির দিন বাড়ীতে নিরামিষ রান্না হতে হবে। উপবাস থেকে স্নান করে বিগ্রহ তৈরীর কাজ শুরু করতে হয়। যতক্ষণ না বিদ্রোহ তৈরীর কাজ শেষ হয় ততক্ষণ সেখান থেকে উঠতে পারবেন না। এই নিয়ম এখনো মেনে চলেন বর্তমান উত্তরসূরী। বিগ্রহ তৈরীর পর সেটিকে রোদে শুকানো হয় দীর্ঘদিন ধরেই। বৈশাখ মাসের প্রথম শনিবার বা মঙ্গলবার প্রথম জহুরা চণ্ডীর পুজো শুরু হয়। এবছর শনিবার মাসের প্রথম। তাই এদিন থেকেই শুরু হলো প্রাচীন জহুরা চণ্ডীর পুজো। রীতি মেনে পুজোর দিন সকালে বিগ্রহ রং করা হয়। জোহরা মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে পায়ে হেঁটে শোভাযাত্রার মাধ্যমে নিয়ে আসা হয় বিগ্রহ ঢাকা দেওয়ার কাপড়। প্রথমে জহুরা বিগ্রহের পুজো দেন মৃৎশিল্পী জ্যোতির্ময় পাল। ঢাক, শঙ্খ ও মহিলাদের উলুধ্বনির মধ্যে দিয়ে মৃৎশিল্পীর বাড়িতে প্রথমে নিষ্ঠার সাথে পুজো করা হয়। মৃৎশিল্পী জ্যোতির্ময় পাল পুজো দেওয়ার পর পরিবারের প্রত্যেককে একে একে পূজা দেন। নিয়ম রয়েছে মৃৎশিল্পীর বাড়ি থেকে বিগ্রহ না যাওয়া পর্যন্ত কেই খাবার খেতে পারবেন না। এমনকি বাড়িতে রান্না পর্যন্ত করা যায়না। দেবি বিগ্রহ পুজো করে বিদায় দেওয়ার পর বাড়িতে নিরামিষ রান্না করে খাওয়া দাওয়া হয়। জহুরা বিগ্রহকে পুজো শেষে শোভাযাত্রা সহকারে নিয়ে যাওয়া হয়।পথে প্রথমে মন্দিরের পুরোহিতের বাড়িতে পুজো হয়।তারপর মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত করে শুরু হয় পুজো। প্রথম দিনই জেলা সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু ভক্তের সমাগম ঘটে দেবী জহুরার পুজোর দিতে। পুজো কে কেন্দ্র করে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার একমাস ব্যাপী বর্তমানে মেলা অনুষ্ঠিত হয় মন্দির প্রাঙ্গণে।