গলসির লোয়া সন্তোষপুর গ্রামে সিআইডির ফরেন্সিক দল, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩৯

আজিজুর রহমান,গলসি : পূর্ব বর্ধমানের গলসি থানার অন্তর্গত লোয়া সন্তোষপুরে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় তদন্তে এলো কলকাতা সিআইডির ফরেন্সিক ফিঙ্গার টিমের বিশেষ দল। এই দলে রয়েছে সিআইডির ইন্সপেক্টর সৈবাল বাগচি সহ চার জন। এরদের মধ্যে একজন ফোটগ্রাফার ও দুজন ফিঙ্গারপিন্ট এক্সপাট রয়েছে। মঙ্গলবার সকালে এই টিম গলসী থানায় আসে। তারপর থানার একজন অফিসারকে সঙ্গে নিয়ে তারা সন্তোষপুরের গ্রামের উদ্দেশ্য রওনা দেয়। সেখানে গিয়ে আগুনে পুড়ে যাওয়া বাড়ি ও গাড়ি গুলি পরীক্ষা-নিরিক্ষা করেন। পাশাপাশি এলাকার চারিপাশ খতিয়ে দেখে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন সিআইডির ওই বিশেষ দল। জানা গেছে, গত পরশু অর্থাৎ রবিবার রাতে উৎপল ঘোষ খুনের ঘটনায় গ্রামে উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে। সোমবার তার মরদেহ গ্রামে ফিরতেই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। এদিকে আগুন লাগানোর ঘটনায় সন্তোষপুর এলাকা থেকে ৩৯ জন গ্রামবাসীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায় গলসি থানার পুলিশ। গলসি থানার সন্তোষপুর ও তার আশপাশ এলাকায় ধৃতদের বাড়ি। ঘটনার পর রাতভর তল্লাশি চালিয়ে পুলিস তাদের গ্রেপ্তার করে। ঘটনার বিষয়ে বেআইনি জমায়েত, হামলা, ভাঙচুর, সরকারি নির্দেশ অমান্য করা, পুলিসের উপর হামলা চালানো, অগ্নি সংযোগ ও খুনের চেষ্টার ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিস। ঘটনাস্থল থেকে পুলিস বেশকিছু জিনিস বাজেয়াপ্ত করেছে। ধৃতদের মঙ্গলবার বর্ধমান আদালতে পেশ করা হয়। তদন্তের প্রয়োজনে তপন বাগদি ওরফে মোরে, বাবলু বাগদি, সুবোধ বাগদি, রাজু বাগদি ও ধনেশ্বর মণ্ডল ওরফে নাড়ুকে তিনদিন নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়ে আদালতে আবেদন জানায় পুলিস। সেই আবেদন মঞ্জুর করেন সিজেএম। বাকিদের বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠিয়ে ১৯ এপ্রিল ফের আদালতে পেশের নিের্দশ দেন সিজেএম। পুলিস জানিয়েছে, রবিবার সন্ধ্যায় উৎপল ঘোষ (৩৩) এর মৃতদেহ গ্রামেরই আলিংগোর পুকুরের পাড়ে মোরাম রাস্তার পাশ থেকে উদ্ধার হয়। তাঁর মাথায় ও গালে গভীর ক্ষত চিহ্ন ছিল। তাঁকে খুনের অভিযোগে প্রতিবেশী মনোজ ঘোষকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনার কিছুদিন আগে মনোজের সঙ্গে উৎপলের অশান্তি হয়। সেই সময় মনোজ উৎপলকে খুনের হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। সোমবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের মের্গ মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করানো হয়। ময়নাতদন্তের পর বেলা পৌনে ৪টে নাগাদ মৃতদেহ গ্রামে পৌঁছয়। উত্তেজনা থাকায় গ্রামে পুলিস মোতায়েন করা ছিল। মৃত এবং ধৃতের বাড়ির কাছে পুলিস ছিল। মৃতদেহ এলাকায় পৌঁছনোর পর উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। পুলিসের নজর এড়িয়ে গলিপথ ধরে ৩০–৪০জন ধৃতের বাড়িতে হামলা চালায়। বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। গাড়ি ও বাইকে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। খড়ের পালুইয়ে অগ্নি সংযোগ করা হয়। মৃতের আত্মীয়দের বাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয়। পুলিসের উপস্থিতিতে সবকিছু ঘটে বলে জানা। সংখ্যায় কম থাকায় পুলিস প্রাথমিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়। পুলিস গণ্ডগোল থামাতে গেলে উত্তেজিত জনতা গালিগালাজ করে। পুলিসের উপরেও হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশাল পুলিসবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিস। গ্রামবাসীদের দাবী ৩৯ জন ধৃতের মধ্যে অনেকেই নির্দোষ রয়েছেন। তাদের অবিলম্বে ছেড়ে দিতে হবে এবং অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যারা মূল অভিযুক্ত তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে।