হরিশ্চন্দ্রপুরে একাধিক রেশন দোকানে অনিয়মের অভিযোগ, ডিলারকে ঘিরে বিক্ষোভ

 

    হরিশ্চন্দ্রপুর,১ এপ্রিল: মাসের প্রথম দিনেই রেশন দোকানগুলি পরিদর্শন করলেন হরিশ্চন্দ্রপুর-১ নং ব্লকের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ কেরামুদ্দিন আহমেদ। এদিন হরিশ্চন্দ্রপুর-১ নং ব্লকের মহেন্দ্রপুর,ভিঙ্গল, তুলসীহাটা ও হরিশ্চন্দ্রপুর সহ মোট চারটি অঞ্চল পরিদর্শন করেন বলে জানা যায়।

    কেরামুদ্দিন আহমেদ জানান, মমতা ব্যানার্জির নির্দেশে সারা রাজ্যের সাথে হরিশ্চন্দ্রপুরেও রেশন দোকানগুলিতে বিনামূল্যে চাল ও গম দেওয়া শুরু হয়েছে। এদিন পরিদর্শনে গেলে হরিশ্চন্দ্রপুর-১ নং ব্লকের ইসলামপুর, ভিঙ্গল ও মিসকিনপুর এলাকার রেশন ডিলারদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠে বলে জানান।

    জানা যায় উপভোক্তাদের কার্ড প্রতি দু কেজি চাল ও তিন কেজি ‌গম দেওয়ার কথা থাকলেও এক কেজি করে কম গম দেওয়ার অভিযোগ উঠে একাধিক রেশন ‌ডিলারের বিরুদ্ধে ।অভিযোগ উঠে মিসকিনপুর গ্রামের ডিলারের বিরুদ্ধে। নির্দেশিকা না মেনে গম ছাড়া মাত্র দু’ কেজি চাল দেওয়ার অভিযোগে স্হানীয়রা এদিন বিক্ষোভ দেখান। অপরদিকে এক কেজি করে কম গম দেওয়ার অভিযোগ উঠে ইসলামপুর ও ভিঙ্গল ডিলারের বিরুদ্ধে।এনিয়ে এদিন ইসলামপুর ডিলারকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান উপভোক্তারা। শুরু হয় ডিলার ও উপভোক্তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি।হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকা‌য় উত্তেজনা ছড়ালে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে বলে জানা যায়।

    কেরামুদ্দিন আরো জানান এই সংকটময় পরিস্থিতিতে ডিলাররা কারচুপি করলে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন।

    হরিশ্চন্দ্রপুর-১ নং ব্লকের বিডিও অনির্বাণ বসু জানান কার্ডহীন উপভোক্তারাও ১০ এপ্রিলের পর থেকে বিনামূল্যে চাল ও গম পাবে।

    উল্লেখ্য করোনা ভাইরাসের কারণে আর্থিক সংকট সর্বত্র শুরু হয়েছে। বাড়ি থেকেই বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বের হতে পারছেন না বহু মানুষ। রাজ্যে লকডাউন চলবে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত।এর জেরে সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছেন দিন আনা দিন খাওয়া মানুষেরা। তাদের কথা মাথায় রেখেই ১লা এপ্রিল থেকে আগামী ছয় মাস রেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি মতো ১লা এপ্রিল থেকে রেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে বিনামূল্যে চাল, গম ও আটা দেওয়া শুরু হয়েছে।

    এদিকে, সোমবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে স্বাস্থ্য দপ্তর সহ বিভিন্ন আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, রাজ্যের কোন মানুষ যেন অভুক্ত না থাকে। রেশন কার্ড থাকুক কিংবা না থাকুক সবাই যেন চাল-গম পায়।মুখ্যমন্ত্রীর কথামতো পহেলা এপ্রিল থেকে রাজ্যের সমস্ত জনগণ বিনামূল্যে খাদ্যশস্য পেতে শুরু করেছে রেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে।

    পাশাপাশি এদিন মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান,লকডাউনে রেশন কার্ড না থাকলেও মিলবে খাবার, অস্থায়ী রেশন কার্ডের ব্যবস্থা করা হবে, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর। ২০ লক্ষ মানুষকে অতিরিক্ত ৫ কেজি চাল দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।

    রেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে ৭ লাখ ৮৫ হাজার মানুষকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বিনামূল্যে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখন দু টাকা কেজি দরে মাসে ৫ কেজি করে চাল পাওয়া যায় রেশন থেকে। সেই চাল টাই এবার বিনামূল্যে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। করোনার জেরে যাতে রাজ্যের মানুষকে অভক্ত অবস্থায় দিন কাটাতে না হয় তার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

    লকডাউনের মধ্যে মানুষকে স্বস্তি দিতে প্রত্যেক রেশন কার্ডপিছু বিনামূল্যে চাল-গম দেওয়া শুরু হতেই ভেঙে গেল প্রশাসনের টেনে দেওয়া লক্ষ্মণরেখা। বুধবার সকালে হরিশ্চন্দ্রপুরের বিভিন্ন রেশন দোকানে গ্রাহকদের ভিড় সামলাতে গিয়ে হেনস্থার মুখে পড়তে হয় সিভিক ভলেন্টিয়ার্সদের। গ্রাহকদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি পর্যন্ত হয় পুলিশকর্মীদের। নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখেই প্রত্যেককে দাঁড়াতে অনুরোধ করা হয়েছিল। বুধবার থেকে তার উল্টো ছবি দেখা গেল হরিশ্চন্দ্রপুরের রেশন দোকান গুলিতে। সকাল থেকেই বিভিন্ন রেশন দোকানে ভিড় উপচে পড়ে। ভিড়ের আন্দাজ করে আগে থেকেই নির্দিষ্ট দূরত্ব অন্তর গোল দাগ কেটে দেওয়া হয়েছিল প্রশাসনের তরফে কিন্তু প্রশাসনের সেই দাগকে তোয়াক্কা না করে ভিড় জমতে থাকে রেশন দোকানগুলিতে। তখন গ্রাহকদের ভিড় সামলাতে যান সিভিক ভলেন্টিয়ার্স ও পুলিশকর্মীরাও। নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়াতে বললেই লোকজন বচসা শুরু করে দেন।