শিক্ষকের মৃত্যুতে তুলসিহাটা এলাকায় শোকের ছায়া

 
হরিশ্চন্দ্রপুর,মহ: নাজিম আক্তার,১৩ জানুয়ারি: মৌলভী মহম্মদ আফাজুদ্দিন(৮১) ছিলেন সকল ছাত্রদের প্রিয় শিক্ষক। হঠাৎ বার্ধক্যজনিত কারণে সোমবার দুপুর দু’টা নাগাদ হরিশ্চন্দ্রপুরের তুলসিহাটায় নিজের বাড়িতে মারা যায়। তার মৃত্যুতে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
জানা যায় হরিশ্চন্দ্রপুরের তুলসিহাটা উচ্চ বিদ্যালয়ে আরবির শিক্ষক ছিলেন। দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছর শিক্ষকতা করার পর অবসর হন। পরিবার সূত্রে জানা যায় দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত কারণে নানা অসুখে ভুগছিলেন। বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসাও চলছিল। এদিন হঠাৎ অসুস্থতার কারণে বাড়িতে মারা যায় বলে জানান। বাড়িতে রেখে গেলেন চার ছেলে, এক মেয়ে, স্ত্রী ও অগণিত ছাত্র।
তুলসিহাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র শাহাদাত হোসেন, মহম্মদ মিজানুর হক ও কৌশিক সাহা রায়রা জানান, চাকরি পাওয়ার শুরুর দিকে তিনি আদি বাড়ি হরিশ্চন্দ্রপুর থানার বরই জিপির পাঁচলা গ্রাম থেকে সাইকেল চালিয়ে প্রায় ১৩ থেকে ১৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেন তুলসিহাটা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে আসতেন। তিনি প্রায় ৪০ বছর ধরে তুলসিহাটা তে বাড়ি করে রয়েছে।তিনি সকলের কাছে একজন প্রিয় শিক্ষক ছিলেন।
শাহাদাত হোসেন ও মোহাম্মদ মিজানুর হকরা আরো জানান তুলসিহাটা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি না হলে আফাজুদ্দিন স্যারের মতো একজন শিক্ষকের দেখা পেতাম না। আশির দশকের প্রারম্ভে এক অজপাড়া গাঁ থেকে তুলসিহাটা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে এসেই শুনতে পাই আফাজুদ্দিন স্যারের কঠিন -কঠোর আপোষহীন ব্যক্তিত্বের কথা। ক্লাস শুরু হওয়ার পর দেখি সত্যি সত্যিই তাই।
প্রথম স্যারকে যেদিন ক্লাসে পেলাম মনে হলো-শ্রেণিকক্ষে কোনো এক সাহিত্যক ঢুকলেন। হাঁটার স্টাইল থেকে শুরু করে পরিচ্ছন্ন পোশাকের ভাঁজ- সবকিছুর মধ্যেই সাহিত্যক সাদৃশ্য উপস্থিতি।
স্যার আসার পর ক্লাসরুমে পিনপত্তন নীরবতা। কোনো শব্দ নেই। সংক্ষিপ্ত কুশল বিনিময়ের পর স্যার পড়াতে শুরু করলেন। শুদ্ধ উচ্চারণ আর চমৎকার বাক্যচয়নের বিমুগ্ধতা যেনো ছড়িয়ে পড়লো ক্লাস রুমে। সেই দিন থেকেই আফাজুদ্দিন স্যারের ছাত্র হিসেবে গর্বে বুকটা ভরে উঠলো। এরপর যত জায়গাতে যেতাম গর্বের সাথে বলতাম ‘আফাজুদ্দিন স্যার’ আমাদের ক্লাস নেন।ক্লাস শেষ করে স্যার যখন বই হাতে ধীর গতিতে ক্লাসরুম থেকে বের হতেন তখন সবাই যেনো মুক্ত মনে নিঃশ্বাস নিতে শুরু করতো।