|
---|
খান আরশাদ, বীরভূম:
মুখ্যমন্ত্রীর ওপরেও কাউকে উনি নেতা বানাতে চাইছেন। বীরভূমে কোর কমিটির মিটিং প্রসঙ্গে কোর কমিটির আহবায়ক তথা বিধায়ক বিকাশ রায় চৌধুরীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এরকমই মন্তব্য করলেন বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি ফায়েজুল হক ওরফে কাজল শেখ।
কোর কমিটির বৈঠক না ডেকে আগামী ২৭শে এপ্রিল বীরভূম জেলা কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। এই প্রসঙ্গেই নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করে এরকমই মন্তব্য করলেন করলেন কাজল শেখ।
বীরভূম জেলায় তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব যেন থামতেই থামে না। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপেও বীরভূমের অন্তর্কলহ যেন দিন দিন বেড়ে চলেছে।
বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা কর্তৃক গরু পাচার মামলার অভিযোগে তিহার জেলে বন্দি। সেই সময় দল পরিচালনার জন্য স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বীরভূম সফরে এসে জেলা কোর কমিটি গঠন করে দেন। সর্বপরি জেলার দেখভালের দায়িত্বে থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী বলে ঘোষণা করেছিলেন। সেই মোতাবেক কোর কমিটি দ্বারাই জেলার দলীয় কাজকর্ম পরিচালিত হওয়ার কথা। পরপর দুটি নির্বাচনেও বীরভূমে কোর কমিটি ভালো করেছে এবং রাজ্যেও এজন্য বীরভূম কোর কমিটি প্রশংসিত হয়। এপর্যন্ত সব ঠিকঠাক থাকলেও অনুব্রত মণ্ডল জেল ফেরত আসতেই শুরু হয়ে যায় যুযুধান দুই গোষ্ঠীর চোরাস্রোত প্রবাহ। জেলা পরিচালনার ক্ষেত্রে দেখা দিল সমস্যা । জেলা সভাপতি ? না জেলা কোর কমিটি ? যদিও শেষ পর্যন্ত সভাপতি ও কোর কমিটিকে এক করে দলীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরেও এই কমিটির মধ্যেও দেখা দেয় হাজারও বিতর্ক। তবে এবার কোর কমিটির বৈঠক না হওয়া নিয়ে ফের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে । উল্লেখ্য এর আগেও এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন বীরভূম জেলা কোর কমিটির দুই সদস্য তথা জেলা সভাধিপতি কাজল সেখ ও বিধায়ক ডঃ আশীষ বন্দ্যোপাধ্যায়।
কোর কমিটির বৈঠক কেনো ডাকা হয়নি, সে বিষয়ে কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, “আমি কোর কমিটির আহ্বায়ক, আর অনুব্রত মণ্ডল দলের সভাপতি ও কোর কমিটির চেয়ারম্যান। তাই আমার চেয়ে ওনার গুরুত্ব বা ক্ষমতা বেশি। তিনি যেদিন বলবেন যেদিন ডাকবেন, সেদিনই কোর কমিটির বৈঠক হবে।
পাশাপাশি তিনি আরও দাবি করেন, আগের কোর কমিটির বৈঠকে নির্দিষ্ট করে কোনও তারিখ ঠিক করা হয়নি। বলা হয়েছিল অনুব্রত মণ্ডল অর্থাৎ কোর কমিটির চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে, তিনি ফাঁকা থাকলে দিন নির্ধারণ করা হবে।
অর্থাৎ, গোটা বিষয়টির দায় কার্যত অনুব্রত মণ্ডলের ওপরেই চাপালেন তিনি। যদিও মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং জেলা সফরে এসে নিজে হাতে জেলা পরিচালনার জন্য এই কোর কমিটি গঠন করেছিলেন। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এটি কার্যত প্রায় অচল সেটা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। অন্যদিকে জেলা সভাধিপতি কাজল সেখ বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বলেন উনার বয়স হয়েছে তাই ভূল ভাল বকছেন। গত ২২ শে মার্চ কোর কমিটির বৈঠক বসেছিল সেখানে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয় আগামী ১৯ শে এপ্রিল পরবর্তী কোর কমিটির মিটিং অনুষ্ঠিত হবে সিউড়ি দলীয় কার্যালয়ে। এখন পর্যন্ত কোর কমিটির বসার সময় হলো না। যার প্রেক্ষিতে মনে হচ্ছে কোর কমিটিকে এড়িয়ে যেতে চাইছে। মুখ্যমন্ত্রীর ওপরেও কাউকে উনি নেতা বানাতে চাইছেন।
মনে হয় বঙ্গজননী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এড়িয়ে যেতে চাইছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথাকে মান্যতা দিতে চাইছে না। বীরভূম জেলায় কিছু নেতা তৈরি হয়ে গেছে যারা নিজেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উর্দ্ধে ভাবছে।কোর কমিটির আহ্বায়ক এর কাছে বার্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে বার্তা, অভিষেক ব্যানার্জির যে বার্তা সেটাকে মান্যতা দেওয়ার চেষ্টা করুন। আহ্বায়কের চেয়ারটা তিনিই দিয়েছেন । সেই চেয়ারের মর্যাদা রাখার চেষ্টা করুন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিষেক ব্যানার্জির হাত মাথায় থাকলে আহ্বায়ক থাকবেন, না থাকলে কোথায় যাবেন সময় কথা বলবে।
বীরভূমে কোর কমিটির মিটিং প্রসঙ্গে এরকমই মন্তব্য করলেন বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি ফায়েজুল হক ওরফে কাজল শেখ।
অবশ্য কাজল শেখের এই প্রতিক্রিয়া নিয়ে কোর কমিটির আহবায়ক তথা বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন‚ কাজল আমাকে বয়স হয়েছে বলে কটাক্ষ করেছে। আমি ৫০ বছর ধরে রাজনীতি করছি। কাজল আমার ছোট ভাইয়ের মতো। ও কিছু বললে তার সঙ্গে তর্ক করা আমার সাজে না। তবে এ বিষয়ে অনুব্রত মণ্ডল ওরফে কেষ্ট মুখ খুলতে নারাজ।
তৃণমূলের এই অন্তরদ্বন্দ্বের প্রসঙ্গ এখন জেলা রাজনীতিতে এখন সরগরম।
জেলা তৃণমূলে দিন দিন বাড়ছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। এগিয়ে আসছে নির্বাচন। তৃণমূলের এই অন্তর কলহে বিজেপি কি নিজেদের ফায়দা তুলবে ?
জেলা রাজনৈতিক মহলে এটাই এখন চর্চা।