সংবিধানকে অমান্য করে ধর্মনিরেপেক্ষ ভারতে হিন্দু রাস্ট্রে প্রতিষ্ঠা,পূর্ব মেদিনীপুরে কাঁথিতে

নতুন গতি, তাহা আলি খান :1857 সালে মহা বিদ্রোহের পরে ইংরেজরা “ফুড ডালো আওর রাজ করো” নিতী অবলম্বন করলো যাতে ভারতীয় সমাজ বিভাজিত হতে পারে। জনগণের একতা সর্বদা সরকারের মনে আশঙ্কার বাতাবরণ সৃষ্টি করতে থাকলো। সাল 1862, ‘বুড’ ‘ফুড ডালো আওর রাজ করো” সিদ্ধান্তের  বর্ণনা স্পষ্টভাবে দিলেন, “আমি বিভিন্ন রেজিমেন্টে ভিন্নতা এবং প্রতিস্পর্ধার ভাবনাকে বিকশিত করতে চাই, যাতে যখন প্রয়োজন পড়বে তখন শিখ হিন্দুদের উপর, গোরখা শিখ এবং হিন্দুদের উপর, গোরখা-শিখ-হিন্দু মুসলিমদের উপরে কোনো কিছু না বুঝেই গুলি চালাতে থাকবে।” 1888 সালে ‘ডাফরিন’ 5 কোটি মুসলিমদের নিয়ে একটি রাষ্ট্রের স্থাপনা করলেন যারা একদিন দিল্লীর মসনদে ছিলেন। সমস্ত মিথ্যা গড়ে তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হলো।  তারপর ভিন্ন ভিন্ন নির্বাচক মন্ডলী গঠন করা হতে থাকলো যার ফলে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকলো। রাজা-বাদশা, শিক্ষিত মধ্যবিত্ত এবং সরকারি চাকুরিজীবীদের এই বিষয়ে কোনো মাথা ব্যথা ছিল না, কারণ তারা এই নিতীর অন্তর্ভুক্ত ছিলেনই না।

     

    বিংশ শতাব্দীতে এই নিতীকে ফুঁকে ফুঁকে পুনরায় আগুন জ্বালানো হলো। ইংরেজদের ভারতে আসার পরে 1809 সালে বেনারসে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা হয়। আর তারপর 1871-72 পর্যন্ত শৃঙ্খলাবদ্ধ ভাবে এই দাঙ্গার রেশ চলতে থাকে।

     

    ঐতিহাসিক সুমিত সরকার লিখেছেন- “সেই সময়ের প্রতিটি দাঙ্গা রাজনৈতিক পদাধিকারীরা তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য, তাদের লাভ তোলার জন্য করতেন। 1880 সালের পরে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা খুব সাধারণ ব্যাপার হয়ে গিয়েছিল।  সেই সময়েও গাই অর্থাৎ গরুকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার হাতিয়ার বানানো হতো।”

    এরপরে নতুন শতাব্দীতে গান্ধী আর জিন্নাহর প্রবেশ হলো। এই কালখন্ডও দাঙ্গায় ভর্তি পড়েছিল। যা ছিল পুরো আন্দোলন থেকে ভিন্ন, মুসলিম লিগ আর মুসলিম সমাজের স্বার্থানেস্বী মানুষের দল একদিকে আর ইংরেজদের দালাল-চাটুকার হিন্দুত্ববাদীরা একদিকে। এদের কাজ ছিল শুধু দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে ঘৃণা ছড়ানো। ফলস্বরূপ হলো বিভাজন আর 10 লক্ষের ও বেশী মানুষের মৃত্যু।

    আজ সাদা ইংরেজদের তো আমরা দেশছাড়া করে দিয়েছি কিন্তু কালো ইংরেজদের তাড়াতে পারিনি। আজ দেশে সেই কালো ইংরেজদের শাসন চলছে। এই কালো ইংরেজরা এখন সেই “ফুড ডালো আওর রাজ করো” নিতী অবলম্বন করছেন সেটা ক্রমশ পরিস্ফুট হচ্ছে। এরা হুমায়ুন, বাবর, আওরঙ্গজেব, আকবর আর রাণা প্রতাপের কবর খুঁড়েও ফুড ফেলতে চাইছেন। এই রকম উদাহরণ দেখতে পেলাম পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি শহরের, কাঁথি 2 নং ব্লকের চালতি  অঞ্চল অফিসের পাশে শ্মশানের ভিতরে থাকা কালী মন্দিরের গেটের সামনে। এটাকে হিন্দু রাষ্ট্র বলে ঘোষণা করে হিন্দু হৃদয় সম্রাটের ছবি দিয়ে পোস্টার লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকার, সিস্টেম, প্রশাসন সব চুপচাপ বসে তামাশা দেখছেন। একবার ভাবুন যদি এই পোস্টারের উল্টো একটা পোস্টার কেউ চক্রান্ত করে ঝুলিয়ে দিয়ে যায় লিখে দেয় “মুসলিম রাষ্ট্র-জিন্দাবাদ” তবে কি এই সিস্টেম, সরকার, প্রশাসন চুপ করে বসে থাকবেন? মোটেই নয়! এক্ষুনি এই পোস্টার ঘিরে দাঙ্গার আগুন জ্বলে উঠবে, কয়েকটা নির্দোষ মুসলিমকে জেলে ঠুসে দেওয়া হবে।

    আসলে এই সমস্ত কিছুই হচ্ছে রাজনৈতিক ক্ষমতাধারীদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার নিতী, স্বার্থ বজায় রাখার নিতী, তাদের লাভ তোলার নিতী। সাদা ইংরেজদের কাছ থেকে ধার করা কালো ইংরেজদের “ফুড ডালো আওর রাজ করো” নিতী। যার ফল হবে ভয়ঙ্কর, প্রাণ যাবে অসংখ্য সাধারণ মানুষের, বাস্তুচ্যুত হবে অসংখ্য মানুষ, চারিদিকে ধোঁয়ার কুন্ডলী আর ক্রন্দনের রোল, হাহাকার ছাড়া কিছুই শোনা যাবে না। সিস্টেম, প্রশাসন, সরকার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করবেই না, কারণ তারা ফুড ফেলছেন, কবর খুঁড়ে-শ্মশানে। কিন্তু এটা আপনাদের দায়িত্ব আপনারা সতর্ক থাকবেন।