|
---|
রাজ্য জুড়ে ধর্মপ্রাণ হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে পালিত হয় যোগিনী একাদশী
শরিফুল ইসলাম, নতুন গতি
দেবসায়নীর পূর্বে আষাঢ়ের কৃষ্ণ পক্ষ বুধ বার, আজ রাজ্যজুড়ে পালিত হয় যোগিনী একাদশী l
উপবাস, ভগবান বিষ্ণুর নাম জপ, নিবেদন, সর্বমঙ্গল প্রার্থনার মধ্য দিয়ে ভক্তি প্রাণ হিন্দু সম্প্রদায় গভীর শ্রদ্ধা ও আবেগের সঙ্গে যাপিত করেন দিনটি l
নবধা ভক্তির অব্যবহিত পরই দশম ভক্তাঙ্গরূপে একাদশীর স্থান l হিন্দু ধর্মে বছরের বিভিন্ন সময় চন্দ্রিমা কেন্দ্রিক আবর্তিত একাধিক পুণ্যতিথির মধ্যে আষাঢ় মাসের কৃষ্ণ পক্ষের অনুষ্ঠিত একাদশী যোগিনী একাদশী নামে পরিচিত l
এদিন, হিন্দু পরিবারের বয়জ্যেষ্ঠ ও অন্যান্য যাঁরা এই একাদশী পালনে ব্রতী হন সকলেই উপবাস যাপন ও বিষ্ণু নাম ভজন ও ভগবান বিষ্ণু নামেই শ্রদ্ধা নিবেদন করেন l
এই ব্রত মহাপাপ বিনাশ করে জীবনের জটিল সমস্যার সমাপ্তি ঘটায় বলে তাঁদের বিশ্বাস l
পুরাণের ব্রহ্মবৈবর্ত অংশে ‘যুধিষ্টির কৃষ্ণ সংবাদ’ পর্বে আষাঢ় মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশী ব্রত পালনের মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়েছে l মহাপাপ স্খলন কারী এই তিথি মানুষেরও মুক্তি লাভের একমাত্র পথ হিসাবে শাস্ত্রে উল্লেখিত । ব্রত পালনকারীদের পক্ষে এটি সর্বশ্রেষ্ঠ ব্রত বলেও খ্যাত l পুরাণে এসেছে, অলকা নগরে শিবভক্ত কুবের নামে এক রাজা ছিল। নিয়মিত শিবপূজা করতেন তিনি l হেমমালী নামে তাঁর একজন মালী ছিল। প্রতিদিন শিব পূজার জন্য মানস সরোবর থেকে সে ফুল তুলে যক্ষরাজ কুবেরকে দিত। হেমমালীর এক পরমা সুন্দরী পত্নী ছিল। হেমমালীর পত্নীর নাম ছিল বিশালাক্ষী l হেমমালী তাঁর অসামান্য রূপবতি পত্নীর প্রতি প্রবল ভাবে আসক্ত ছিল। একদিন সে তার স্ত্রীর প্রতি কামাসক্ত হয়ে রাজভবনে যাওয়ার কথাও ভুলে গেল। বেলা দ্বিপ্রহর অতিক্রান্ত হলে অর্চনের সময় চলে যাচ্ছে দেখে রাজা যার পর নয় ক্রুদ্ধ হলেন। মালীর বিলম্ব তথা এহেন আচরণের কারণ অবগত হয়ে ক্রোধান্বিত রাজা দূত মারফত মালীকে তৎক্ষণাৎ হাজির হতে নির্দেশ দিলেন l এদিকে, মালী কুবেরের পূজার সময় অতিবাহিত হয়েছে বুঝতে পেরে অত্যন্ত ভীত l অপবিত্র অবস্থায় স্নান না করেই রাজার কাছে উপস্থিত হল। তাকে দেখামাত্র রাজা ক্রোধবশে ভৎসর্না করেন l এবং হেমমালীকে দেবপূজার পুষ্প আনতে অবজ্ঞার কারণে অভিসম্পাত দেন l কুবেরের অভিশাপে হেমমালি শ্বেতকুষ্ঠগ্রস্থ হয় এবং তাঁর স্ত্রী চিরবিচ্ছেদ ঘটে l অতঃপর স্থান ভ্রষ্ট হয়ে অধোগতি লাভ করে সে l
কুবেরের এই অভিশাপে হেমমালী পত্নীর সাথে স্বর্গভ্রষ্ট হয়ে দীর্ঘকাল যাবৎ কুষ্ঠরোগ ভোগ করতে লাগল। একদিন হেমমালী ভ্রমণ করতে করতে হিমালয়ে শ্রীমার্কন্ডেয় ঋষির আশ্রমে উপস্থিত হন । সব কিছু শোনার পরে মার্কন্ডেয় মুনি হেমমালীকে আষাঢ় মাসের কৃষ্ণপক্ষের ‘যোগিনী’ নামক একাদশী ব্রত পালন করতে নির্দেশ দেন l অতঃপর হেমমালী ঋষির আদেশমতো নিষ্ঠার সঙ্গে যোগিনী একাদশী ব্রত পালন করলেন l ঋষির কথা মতো যোগী একাদশী ব্রত পালনের মধ্যে দিয়ে হেমমালী সমস্ত রোগ থেকে মুক্ত হল ও পত্নীসহ সুখে জীবনযাপন করতে লাগল। যোগিনী একাদশী ব্রত পালন সহস্র ব্রাহ্মণকে ভোজন করানোর সমতুল্য l যে ব্যক্তি এই মহাপাপ বিনাশকারী ও পুন্যফল প্রদায়ী যোগিনী একাদশীর কথা পাঠ এবং শ্রবণ করে সে অচিরেই সর্বপাপ থেকে মুক্ত হবে, হিন্দু শাস্ত্র পুরাণে বর্ণিত l