|
---|
নতুন গতি নিউজ ডেস্ক: বসরী শাহ মসজিদ। এটি সারা ভারতের মধ্যেও অন্যতম প্রাচীন মসজিদ। কলকাতা পৌরসংস্থার হেরিটেজ তালিকার অন্তর্ভুক্ত এই মসজিদটি। কলকাতা শহর প্রতিষ্ঠার আগেই এই জায়গাতেই একটি পুরনো মসজিদ ছিল। তবে বর্তমান যে কাঠামোটি আমরা দেখতে পাচ্ছি, তা ১২১৯ হিজরি সালে, অর্থাৎ ইংরেজি ১৮০৪ সালে তৈরি করেন জাফির আলি নামে এক ব্যক্তি এবং নাম দেন বসরী শাহ মসজিদ। কিন্তু কে এই বসরী শাহ? কিভাবেই বা তৈরি হল?
কলকাতার প্রথম এই মসজিদ সম্পর্কে সবথেকে বেশি ও নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় ইতিহাসবীদ পীযুষকান্তি রায়ের Mosque in Kolkata নামক বইয়ে। আজকের কলকাতা নগরী যেখানে অবস্থিত, সেখানে মূলত তিনটি গ্রাম ছিল, সুতানুটি, গোবিন্দপুর এবং কলিকাতা। এই তিনটি গ্রামের জমিদারী ছিল সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের কাছে।
১৭ শতকের প্রথম দিক থেকে এই জায়গাগুলি ব্রিটিশরা অধিগ্রহণ করা শুরু করেন এবং এখানে তারা বসতি, কারখানা, শহর স্থাপন করা শুরু করেন। যার ফলে অন্যান্য গ্রাম থেকেও বাঙালি হিন্দু-মুসলিমরা এখানে এসে বসতি স্থাপন করতে থাকেন। কিছুদিনের মধ্যেই মুসলিমরা এখানে একটি মসজিদের অভাব অনুভব করতে থাকেন। এই অবস্থায় কাশিপুর এলাকায় তারা একটি পুরনো মসজিদকে নতুনভাবে তৈরি করেন, যার নাম দেওয়া হয় বসরী শাহ মসজিদ।
কয়েকবছর আগেও এখানে একটি ১৮০৪ সালের ভিত্তিপ্রস্তর ছিল, যা পরবর্তীতে হারিয়ে যায় বা চুরি হয়ে যায়। সেই ভিত্তিপ্রস্থর থেকে জানা যায়, এই জায়গায় একটি পুরনো মসজিদ ছিল। এরপর ১৮০৪ সালে জাফির আলি নামে এক ব্যক্তি এই মসজিদ নতুনভাবে তৈরি করেন এবং নাম দেন ‘বসরী শাহ মসজিদ’।
কিন্তু কে ছিলেন বসরী শাহ? জানা যায় ইরাকের বসরা শহর থেকে এক ইসলামপ্রচারক সুফি এদেশে আসেন। তিনি “বসরীয়া” নামে পরিচিত। তিনি ১৭৬০ থেকে ১৭৯০ সাল পর্যন্ত কলকাতায় বসবাস করেন। এরপর তাঁর মৃত্যুর পর তাকে এখানে কবরস্থ করা হয়। যে মাজারটি এখনও রয়েছে এই মসজিদের পাশেই, যেটি “বসরী শাহ মাজার” নামে পরিচিত। এটিও কলকাতা পৌরসংস্থার হেরিটেজ তালিকার অন্তর্ভুক্ত।
অনেকে মনে করেন মসজিদটির নির্মাতা জাফির আলি আসলে নবাব মীরজাফরেরই আরেকটা নাম। কিন্তু এই তথ্যের কোনো ভিত্তি নেই। কেননা মসজিদটি নতুনভাবে তৈরির অনেক আগেই অর্থাৎ ১৭৬৫ সালে মারা যান। আবার কিছু সুত্র মতে, মুর্শিদাবাদের প্রভাবশালী ব্যক্তি, সায়েদ মুহম্মদ রেজা খান, যিনি ঢাকার ডেপুটি গভর্নর হিসেবেও নিযুক্ত ছিলেন, তিনিও এই মসজিদ নির্মাণের সাথে যুক্ত ছিলেন।মসজিদটি মুর্শিদাবাদি আর্কিটেকচার স্টাইলে গঠিত। তিনটি গম্বুজ ও চারটি মিনার রয়েছে। সামনে রয়েছে ৩টি তোড়ন। ভিতরের দেওয়ালে রয়েছে ফুলের অঙ্কন। মসজিদটি পৌরসভার হেরিটেজ তালিকার অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর সংস্কারও হয়েছিল।
মসজিদে এখনও নিয়মিত নামাজ হয়। তবে মুস্লল্লি থাকেন অল্পসংখ্যক। পাশেই অবস্থিত মাজারে আসেন বিভিন্ন ধর্মেরই মানুষ। ফুল, টাকা দিয়ে মানত করেন নিজের মনস্কামনা পুরনের আশায়।