|
---|
নিজস্ব সংবাদদাতা : স্রেফ পেশার টানে কাজ নয়, এ যেন নেশার টানে পেশা! না হলে কেন প্রথাগত শিক্ষণ পদ্ধতির বাইরে গিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য় এত উদ্যোগী হবেন বুদ্ধদেব দত্ত? তাঁর উদ্যোগেই তো গত দশ বছরে বাঁকুড়ার (bankura) জয়পুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চেহারা-ছবি বদলে গিয়েছে। পাঠ্যবিষয় এখন আর রসকষহীন লাগে না। রঙিন ছবির হাত ধরে সবটাই বড় ‘জীবন্ত’। সেই প্রিয় স্য়ার-ই কিনা এবার রাষ্ট্রপতির (president) হাত থেকে পুরস্কার (award) নেবেন? খবর পেতেই খুশির হাওয়া শিক্ষক, পড়ুয়া ও অভিভাবকমহলে।আগামী ৫ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর হাত থেকে ‘জাতীয় শিক্ষক সম্মান’ পাওয়ার কথা বুদ্ধদেব দত্তের। তবে সম্মানপ্রাপ্তির খবর শুনেই আনন্দের সীমা-পরিসীমা নেই জয়পুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক উজ্জ্বল কুমার পরামানিক যেমন বললেন,’উনি বিভিন্ন পদ্ধতিতে ছাত্রছাত্রীদের শিখিয়ে থাকেন। একটা চিরাচরিত পদ্ধতি তো রয়েছেই, তা ছাড়াও পাঠ্যবইয়ের বাইরে প্রকৃতিকে কাজে লাগিয়ে, তাঁর নিজের অভিজ্ঞতা ব্যবহার করেও একটা শেখানোর পদ্ধতি ছিল।’ প্রধান শিক্ষকের মতে, এই ভিন্ন কৌশলে তাঁরাও যাতে পড়ুয়াদের লেখাপড়া করান সেই ব্যাপারে উৎসাহ দিয়েছেন বুদ্ধদেব। কিন্তু যাঁকে ঘিরে শিরোনামে জয়পুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, তিনি কী বলছেন? বুদ্ধদেব বললেন,’এখন তো চিরাচরিত অর্থে শিক্ষণ বা টিচিং হয় না। এখন লার্নিং বা শিখন হয়। আমিও গতানুগতিক শিখন-পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এসে অন্য রকম ভাবে পড়াই। পাঠ্যবই নিই-ই না। যেমন ধরুন, চিরাচরিত দস্তুর হচ্ছে শিক্ষকরা প্রশ্ন করবেন, ছাত্রছাত্রীরা উত্তর দেবে। আমি এটিকেই অন্য রকম ভাবে ভেবেছি। উত্তরটা আমি বলে দেব। তার ভিত্তিতে আমার ক্লাসে যদি ৪০ জন পড়ুয়া থাকে, তারা চল্লিশ রকম প্রশ্ন করবে। এতে তাদের বিশেষ ধরনের চিন্তাপদ্ধতির বিকাশ হবে, সার্বিক উন্নয়ন ঘটবে।’ স্কুলের দেওয়ালে রঙিন ছবি আঁকার পিছনেও যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা রয়েছে, জানালেন বুদ্ধদেব। তাঁর মতে, শিক্ষক-শিক্ষিকা কোনও কারণে ক্লাসে না এলে পড়ুয়ারা যাতে আশপাশের দেওয়াল, স্কুলের পাঁচিল বা সীমানার দিকে তাকিয়ে থাকার সময়ও কিছু শিখতে পারে, সেইটা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত। তাঁর অভিনব উদ্যোগকে আগেই কুর্নিশ জানিয়েছে রাজ্য় সরকার। ২০২০ সালে ‘শিক্ষারত্ন’ পেয়েছেন তিনি। এবার ‘জাতীয় শিক্ষক সম্মান’। মজার বিষয় হল, ছোটবেলায় জয়পুর প্রাথমিক বিদ্যালয়েই লেখাপড়া করেছেন জয়পুর গ্রামের বাসিন্দা বুদ্ধদেব। পরে উচ্চশিক্ষা শেষ করে ১৯৯৯ সালে বিষ্ণুপুরের দেউলি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহ শিক্ষক হিসেবে কাজে যোগ দেন। এরপর বিভিন্ন স্কুল ঘুরে ২০১২ সালে নিজের শৈশবের শিকড়েই ফেরেন। তার পর থেকেই এই স্কুলই তাঁর ধ্যান-জ্ঞান।
স্বাভাবিক ভাবেি প্রিয় স্যারের সম্মানপ্রাপ্তির খবরে খুশির আমেজ সারা স্কুলে।