|
---|
খান আরশাদ, বীরভূম:
রাজনগরের আড়ালি গ্রামে এক প্রতিবন্ধীর বাড়ি থেকে আবাস যোজনার টাকা চুরি গেল।
শনিবার গভীর রাত্রে ঘটে এই চুরির ঘটনা । রবিবার ভোরে ঘুম ভাঙতেই বাড়ির মালিক হিঙ্গুলী বাদ্যকরের নজরে পড়ে বিষয়টি।
রাজনগরের আড়ালি গ্রামে ডোমপাড়ায় একটি ভগ্নপ্রায় বাড়িতে বাস করেন হিঙ্গুলী বাদ্যকর নামে ৭০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা ও তার বছর কুরির একমাত্র প্রতিবন্ধী সন্তান।
ওই বৃদ্ধা বাংলা আবাস যোজনার টাকা ব্যাংক থেকে বাড়িতে এনে রেখেছিলেন বাড়ি তৈরি করবেন বলে। পাশাপাশি তিনি তার নিজের বৃদ্ধ ভাতার টাকা ও তার ছেলের প্রতিবন্ধী ভাতার টাকাও বাড়িতে এনে রেখেছিলেন। শনিবার রাত্রে প্রচন্ড গরমের জন্য ঘরের দরজা খুলে বাইরে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন তাঁরা। গভীর রাত্রে সেই সুযোগে চোরেরা তাঁদের বাড়ি ঢুকে দুটি বাক্স চুরি করে নিয়ে যায়। এই বাক্স দুটিতেই ওই বৃদ্ধা ও তার ছেলের ৩৪ হাজার টাকা রাখা ছিল।।
চোরেরা সমস্ত টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। রবিবার ভোরে ঘুম থেকে উঠে ঘরের ভিতরে ঢুকতেই চক্ষু চড়কগাছ ওই বৃদ্ধার। দেখেন তার বাড়িতে যে দুটি বাক্সে তার সমস্ত টাকা রাখা ছিল সেই বাক্স দুটি বাড়িতে নেই। তার বুঝতে অসুবিধা হলো না চোরেরা তার বাড়ির ভিতরে ঢুকে ওই টাকার বাক্স দুটি তুলে নিয়ে গেছে। হাউ মাউ করে কেঁদে ওঠেন ওই বৃদ্ধা। পাড়া-প্রতিবেশীরা বৃদ্ধার কান্না শুনে এসে দেখেন টাকার বাক্স দুটি চুরি করে নিয়ে গেছে চোরেরা। কিছুক্ষণ পরে খোঁজ পাওয়া যায় তার বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরে ওই বাক্স দুটি পড়ে রয়েছে কিন্তু টাকা উধাও।
মায়ের কান্না শুনে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে বছর কুড়ির প্রতিবন্ধী বাউল বাদ্যকর। বৃদ্ধার এই প্রতিবন্ধী সন্তান না ভালোভাবে কথা বলতে পারে, না চলাফেরা করতে পারে। এবাড়ি ওবাড়ি সাহায্য চেয়ে এবং বৃদ্ধা মায়ের তৈরি যৎসামান্য বাঁশের তৈরি কুলো পাখা বিক্রি করে যে আয় হয় তা দিয়েই খেয়ে না খেয়ে দিন গুজরান হয় এই দুই অসহায়ের।
ভগ্নপ্রায় একটি ঘরে মা ছেলে বাস করে। বর্ষায় ঘরে চালা ফুটে পড়ে জল। কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবারে আবাস যোজনার তালিকায় নাম আসে এই বৃদ্ধার এবং এই আবাস যোজনার বাড়ি তৈরির টাকা তিনি ব্যাংক থেকে কয়েকদিন আগে তুলে আনেন বাড়িতে।
আশা ছিল কোন রকমে তিনি বাড়িটা তৈরি করবেন। কিন্তু হতদরিদ্র এই দুই অসহায়ের সমস্ত আশায় জল ঢেলে দিয়ে গেল চোরেরা।
বৃদ্ধার নিজের বৃদ্ধ ভাতার ৫ হাজার টাকা, সন্তানের প্রতিবন্ধী ভাতার নয় হাজার টাকা এবং আবাস যোজনার টাকার মধ্যে কুড়ি হাজার টাকা তিনি ব্যাংক থেকে তুলে নিয়ে আসেন। সর্বমোটে ৩৪ হাজার টাকা দুটি বাক্সে রাখা ছিল। চোরেরা গভীর রাত্রে এসে এই দুইটি বাক্সকে চুরি করে নিয়ে যায়।
অসহায় এই দুই মা-ছেলের কান্না দেখে পড়শীদেরও চোখের জল পড়ছে।
বৃদ্ধা ও তার প্রতিবন্ধী ছেলের শেষ সম্বলটকুও নিয়ে গেল চোরেরা।
ফলে অসহায় হতদরিদ্র ওই বৃদ্ধা ও তার প্রতিবন্ধী সন্তান একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়লেন।