অপরাধ জগতের সঙ্গে জড়িয়ে পড়া খুদেদের এবার সমাজের মুলস্রোতে ফেরাতে উদ্যোগী হলো হাওড়া সিটি পুলিশের সাঁতরাগাছি থানা

নিজস্ব সংবাদদাতা : বয়স মাত্র ১২ থেকে ১৬ বছর, প্রত্যেকেই সিদ্ধহস্ত কেপমারী থেকে বাড়ি বাড়ি চুরি করতে৷ ট্রেনে বা বাসে আপনার পাশে স্কুলের ছাত্র হিসাবে বসলেও কিছুক্ষণ পরেই দেখবেন আপনার মানিব্যাগ বা আপনার ব্যাগে থাকা পার্স নিমিষেই হাফিস ৷

    অপরাধ জগতের সঙ্গে জড়িয়ে পড়া এই সব খুদেদের এবার সমাজের মুলস্রোতে ফেরাতে উদ্যোগী হলো হাওড়া সিটি পুলিশের সাঁতরাগাছি থানা ৷ পুলিশের দাবি, বেশ কয়েকদিন ধরেই থানায় বিভিন্ন অভিযোগ আসতে শুরু করছিল৷ কারোর বাড়িতে চুরি তো কোনও ব্যক্তির মানি ব্যাগ, মোবাইল চুরি যাচ্ছে ৷তদন্তে নেমে পুলিশ বিভিন্ন সোর্স মারফত ও সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জানতে পারে, সাঁতরাগাছি এলাকার ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সি খুদেদের একটি গ্যাং এই সমস্ত অপরাধের সঙ্গে যুক্ত | অভিযুক্তদের বেশ কয়েকজনকে ধরে তাদের জুভেনাইল আদালতে পেশ করা হলেও কয়েকদিন জুডিসিয়াল হোমে থেকে ফিরে আবার সেই একই কাজে লেগে পড়ছিল এই খুদেরা৷

    খোঁজ খবর নিয়ে দেখা যায়, প্রত্যেকেই অতি নিম্নবিত্ত পরিবারের সদস্য৷ কারোর মা নেই তো কারোর বাবা মারা গিয়েছে, কারোর বাবা আবার ছেড়ে চলে গেছে অন্যত্র ৷ ফলে সংসারের হাল ধরতে এই সব কাজে সিদ্ধহস্ত হয়ে উঠেছে বাড়ির খুদেরাই৷ এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আবার স্কুলেও পড়াশোনা করে৷ কেউ কেউ আবার পড়াশোনার সাথে সাথে ফুটবল ক্রিকেটেও পটু ৷বার বার অভিযোগ আর ধরপাকড়ের রাস্তা ছেড়ে পুলিশ এবার এই খুদেদের সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হল৷ সাঁতরাগাছি থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক মৃণাল সিনহা এগিয়ে এলেন এই জনা কুড়ি খুদেদের নতুন পৃথিবী দেখতে ৷ খুদেদের মূলস্রোতে ফেরাতে গিয়ে প্রথম সমস্যা হল এদের সংসার চলবে কী করে ৷ পুলিশ প্রথমেই তাদের পরিবারের একজনের স্থানীয় এলাকায় কর্ম সসংস্থানের ব্যবস্থা করে, তারপর একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে এই সব সমাজের পিছিয়ে পড়া খুদেদের নিয়ে শুরু হয় কাউন্সিলিং ৷কাউন্সিলিং করতে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মনোবিদদের ৷ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়া এই খুদেদের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে বিভিন্ন প্রতিভা, অনেকের দাবি তারা পড়াশোনা করতে চায়, অনেকে আবার পড়াশোনার পাশাপাশি ফুটবল খেলোয়াড় হতে চায়৷ সব কিছু শোনার পরে পুলিশ সিদ্ধান্ত নেয়, এদেরকে নিয়ে সপ্তাহে একদিন অথবা দু’ দিন বিভিন্ন পাঠ পড়ানো হবে থানায় ৷ তাতে সাহায্য করবেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মনোবিদ থেকে শুরু করে শিক্ষকরা ৷

    পুলিশের তরফে জাগানো হয়েছে, এদের মধ্যে দু’ একজন পড়াশোনাতে খুব ভালো, এদেরকে পুলিশের দায়িত্বে ভালো স্কুলে ভর্তির সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে ৷ আর পুলিশের এই মানবিক কর্মকাণ্ডে আতঙ্কের পুলিশ এখন মাসিহা হয়ে উঠেছে এই খুদে খিলাড়িদের কাছে৷