মালদায় অবৈধভাবে গাছ কেটে ফেলাকে ঘিরে শুরু হল রাজনৈতিক চাপনউতোর, এরকম উদ্বেগহীন কাজে ক্ষুব্ধ পরিবেশবিদ ও স্থানীয়রা

নতুন গতি ওয়েব ডেস্ক: মালদা জেলার বিখ্যাত আম, আর সেই বিখ্যাত আমের গাছ অবৈধভাবে কেটে ফেলা হচ্ছে। গাছে মুকুল এসেছে। এই অবস্থায় কীভাবে প্রশাসন, বন দফতরের নাকের ডগায় বৃক্ষ নিধন কর্মসূচি চলছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের বারদুয়ারি এলাকায় ওই গাছ কাটাকে ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতর। শাসকদলের মদতে ওই গাছ কাটা হচ্ছে বলে বিজেপি অভিযোগ তুলেছে! যদিও তৃণমূলের অভিযোগ, যারা গাছ কাটছেন, তারা বিজেপি কর্মী। ফলে বিজেপির মদতেই এসব হচ্ছে।

    এদিন গাছ কাটার খবর পেয়েই এলাকায় যান বন দফতরের কর্মীরা। সব খতিয়ে দেখে তারা গাছ কাটা বন্ধ করে দেন। সব খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে বন দফতরের তরফে জানানো হয়েছে। হরিশ্চন্দ্রপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বারদুয়ারি যাওয়ার রাস্তার পাশেই রয়েছে ওই আমবাগান। সেখানে রয়েছে শতাধিক আমগাছ। ওই আমবাগানের মালিক ভোলানাথ আগরওয়াল। তার ছেলে অনুজ আগরওয়াল নিজে দাঁড়িয়ে থেকে গাছগুলি কাটাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সেখানে গাছ কেটে ওই জমিতে শুরু হয়েছে বাড়িঘর তৈরির কাজও! কিন্তু গাছ কাটতে হলে একাধিক নিয়ম রয়েছে বলে বন দফতরই জানিয়েছে! অনুমতি নেওয়ার পাশাপাশি যে পরিমাণ গাছ কাটা হচ্ছে তা পরে রোপণ করতে হবে বলেও সরকারি নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু কোনও রকম অনুমতি ছাড়াই এরমধ্যে ৩০টি বড় গাছ মুকুল সমেত কেটে ফেলা হয়েছে। ওই ঘটনায় ব্যথিত পরিবেশপ্রেমী ও বৃক্ষপ্রেমী মানুষজন। যদিও রাস্তার পাশে এভাবে অবৈধভাবে একের পর এক গাছ কেটে ফেললেও প্রশাসন, বন দফতর কেন নীরব সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ফলে কার মদতে বা কার সঙ্গে আঁতাতে ওই বৃক্ষ নিধন পর্ব চলছে তা নিয়ে এলাকায় শুরু হয়েছে চর্চা।

    হরিশ্চন্দ্রপুরের এক সমাজসেবী তথা পরিবেশপ্রেমী চন্দ্রনাথ রায় ওই ঘটনায় ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, সরকার প্রচার করছে, একটি গাছ, একটি প্রাণ। বৃক্ষরোপণের জন্য টাকা খরচ করছে। তারপরেও কীভাবে প্রকাশ্যে অবৈধভাবে গাছগুলি কেটে ফেলা হল তা ভাবতে অএবাক লাগছে। তিনি এও বলেন, বিশেষ করে শুক্রবার গাছগুলি কাটা হচ্ছে। কারণ শনি ও রবিবার ছুটি। প্রশাসন, বন দফতর আইনমাফিক পদক্ষেপ না করলে পরিবেশপ্রেমীরা মিলে অবস্থানে বসব।

    অবৈধভাবে গাছ কাটার খবর পেয়েই এদিন এলাকায় যান বন দফতরের কর্মীরা। বন দফতরের এক কর্মী বলেন, ৩০টি গাঠ কাটা হয়েছে। অনুমতি ছাড়াই গাছগুলি কাটা হয়েছে! আমরা কতৃপক্ষকে রিপোর্ট পাঠাব।! তারাই যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবেন। আর যার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে, সেই অনুজ আগরওয়াল তিনি কোনো বক্তব্য দিতে চাননি।

    হরিশ্চন্দ্রপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ আদিত্য মিশ্র বলেন, ওই আমগাছ অবৈধভাবে কাটা হচ্ছে বলে শুনেছি। বিষয়টি প্রশাসনের পাশাপাশি বন দফতরকে জানিয়েছি। তারাই সব খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে। বিজেপির মালদহের জেলা সম্পাদক দীপঙ্কর রাম বলেন, তৃণমূলের মদতেই গাছগুলি কেটে ফেলা হচ্ছে। শাসকদলের মদত ছাড়া এও কাজ সম্ভব নয়। আম বাগানের মালিক বিজেপির কেউ নয়। হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি মানিক দাস বলেন, ওই বাগানের গাছ অবৈধভাবে কাটা হচ্ছে। বাগানের মালিক বিজেপি করেন। ফলে বিজেপির মদতেই উনি এই অবৈধ কাজ করছেন।

    সাঙ্ঘাতিক সব বিপদ আস্তে আস্তে চারপাশ থেকে আমাদের ঘিরে ধরছে। প্রতি মুহূর্তেই পৃথিবীর বুকে টলমল করছে আমাদের অস্তিত্ব। বিজ্ঞানীরা একের পর এক সতর্কবার্তা দিয়ে চলেছেন। কিন্তু মানুষ উদাসীন। মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরের বারোদুয়ারী এলাকায় বেপরোয়াভাবে গাছ কেটে চলেছে, আবার সেই গাছা কাটাতেও লেগেছে রাজনৈতিক রং। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। যদিও বন দপ্তরের তরফ থেকে জানানো হয়েছে বিষয়টি খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এ হেন ঘটনায় ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ।