লাইলাতুল ক্কদরের গুরুত্ব

জাকির হোসেন সেখ, ১লা জুন, নতুন গতি, কলকাতা: “নিশ্চয়ই আমি এ কোরআন নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে। হে নবী! আপনি কি জানেন লাইলাতুল কদরের মর্যাদা কত বেশি ? লাইলাতুল কদরের এক রাত হাজার মাসের চেয়েও বেশি মর্যাদামণ্ডিত। এ রাতে ফেরেশতাকুল এবং পবিত্র রহু (জিবরাইল) নাজিল হয় তাদের প্রভুর নির্দেশ নিয়ে। এ রাতে ফজর পর্যন্ত অনাবিল শান্তি ও কল্যাণ বিরাজ করে।” – সূরা কদর : ১-৫।  পবিত্র লাইলাতুল কদর সম্পর্কে আল কোরআনে পূর্ণ একটি সূরা নাজিল হয়েছে। অর্ধশতেরও বেশি সহি হাদিস রয়েছে এই রাতের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে।
লাইলাতুল ক্কদরের রাতটি রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ক্কদরের রাতকে পাওয়ার জন্যই ইতিকাফের বিধান। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় ক্কদরের রাতে ইবাদতে মশগুল থাকবে, তার আগের জীবনের সমস্ত গুনাহ আল্লাহ মাফ করে দেবেন। বুখারি, মুসলিম।

    ক্কদরের রাতের অশেষ ফজিলত থেকে তাঁর উম্মত যেন কোনোভাবেই বেখবর না থাকে সেজন্য রসুল (সা.) নিজে ইবাদত করে উম্মতদের শিখিয়েছেন। আমাদেরও উচিত এই বরকতপূর্ণ রাত থেকে পেয়ালা ভরে বরকতের মধু পান করা।

    হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রসুল (সা.) রমজানের শেষ দশকে তাঁর ইবাদতের মাত্রা বাড়িয়ে দিতেন। এই সময় তিনি এত বেশি ইবাদতে মগ্ন থাকতেন যে, আর কখনো তাঁকে এত গভীর ভাবে ইবাদতে মগ্ন হতে দেখা যায়নি। বুখারি, তিরমিজি।

    অন্য বর্ণনায় আয়েশা (রা.) বলেন, রমজানের শেষ দশকে রসুল (সা.) অত্যন্ত কঠোর ভাবে ইবাদত করতেন। তিনি নিজে রাত জেগে ইবাদত করতেন এবং তাঁর পরিবারের লোকজনকেও জাগিয়ে তুলতেন। বুখারি, মুসলিম।

    বিভিন্ন হাদিস থেকে জানা যায়, মাহে রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোয় লাইলাতুল ক্কদর হয়।

    ইমাম আবু হানিফা (রহ.) সহ সুন্নিয়াতের অনেক বড় বড় আলেম দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে মনে করেন যে, ২৬ শে রমজান দিবাগত রাতেই অর্থাৎ ২৭ শে রমজানের রাতেই লাইলাতুল ক্কদরের রাত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে তাঁরা একথাও বলেছেন যে, অন্য রাতেও লাইলাতুল ক্কদর হতে পারে।

    হাদিস পাকে বর্নিত আছে, রসুল (সা.) বলেছেন, “আমাকে জানানো হয়েছিল লাইলাতুল কদর কবে, কখন। আমি তোমাদের বলতে আসব এমন সময় দেখি দুজন ঝগড়া করছে। আর আমাকে লাইলাতুল কদরের সঠিক তারিখটি ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

    তাফসিরে তাবারিতে ইমাম তাবারি (রহ.) বলেন, লাইলাতুল কদর উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য অনেকটা বোনাসের মতো। অবারিত সুযোগও বলা যায়। সাহাবিরা ভাবতেন, আগের উম্মতরা দীর্ঘ হায়াত পেত। বেশি ইবাদত করে আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করত। আমাদের এই অল্প হায়াতে আমরা কীভাবে এত বেশি ইবাদত করব? কীভাবে আল্লাহর সন্তোষ হাসিল করব? সাহাবায়ে কিরামদের এসব চিন্তার কারণেই আল্লাহতায়ালা জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে সূরা ক্কদর নাজিল করেন। আল্লাহতায়ালা বলে দেন, এই এক রাত ইবাদত করলে তোমাদের জীবনের গুনাহ তো ক্ষমা হবেই, একই সঙ্গে হাজার মাসের চেয়েও বেশি ইবাদতের সওয়াব তোমাদের আমলনামায় লেখা হয়ে যাবে। তাফসিরে তাবারি।

    আমরা অবশ্যই লাইলাতুল কদরের বরকত হাসিলের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করব। নিজেরা রাত জেগে ইবাদত করব। স্ত্রী-সন্তানকেও ইবাদত করতে উৎসাহ দেব। এই ক্কদরের রাতে বেশি বেশি এই দোয়া পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন রসুল (সা.)। “হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল। ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। আমাকে ক্ষমা করুন।” বুখারি।

    নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াতের পাশাপাশি জিকির-আজকার, দরুদ-সালাম পড়ার মাধ্যমে আমরা এ মহান রাতটি উদ্‌যাপন করব। আল্লাহ আমাদের লাইলাতুল ক্কদর নসিব করুন। আমিন।