বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধ আজহারের রিভিউ খারিজ হলেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

নতুন গতি ঢাকা ব্যুরো : বাংলাদেশের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনটি শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে নিয়মিত (শারীরিক উপস্থিতি) আদালত বসলে আবেদনটি শুনানির জন্য আসতে পারে। আইনজ্ঞরা বলছেন, রিভিউ আবেদনটি খারিজ হলেই আজহারের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে আর কোনো আইনি বাধা নেই। তবে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার সুযোগ পাবেন আজহার। এর পূর্বে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের পাঁচ নেতা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন না করায় ধারণা করা হচ্ছে- আজহারের ক্ষেত্রেও তা করা হবে।
এটিএম আজহারুল ইসলাম বর্তমানে কাশিমপুর-২ কারাগারের কনডেম সেলে রয়েছেন।
বাংলাদেশ সরকারের
অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন বলেন, মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে এটিএম আজহার রিভিউ আবেদন করেছেন। সেটি খারিজ হলেই সরকার জেলকোড অনুযায়ী ফাঁসি কার্যকর করতে পারবে। তিনি বলেন, কভিড-১৯ এর কারণে বর্তমানে আপিল বিভাগে ভার্চুয়ালি শুনানি হচ্ছে। এর আগে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হলে আদালত বলেছেন, নিয়মিত বসলে এটিএম আজহারের আবেদনটি শুনানি হবে।

    সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের বিশেষ অধিকার রয়েছে। সেই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ‘কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত যে কোনো দণ্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করার এবং যে কোনো দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকবে।’ আদালত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করার পর যদি নামঞ্জুর হয়, তাহলে কারা কর্তৃপক্ষ জেলকোড অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করবে।

    ১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫ মার্চ পুরনো হাইকোর্ট ভবনে স্থাপন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ পর্যন্ত ৪০টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে আপিল বিভাগে ৭টি মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করা হয়। এখনও সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ২০টির বেশি মামলা।

    সাতটি রায়ের মধ্যে ৬টিতে জামায়াতে ইসলামীর দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী, জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী ও জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাশেম আলীর ফাঁসি কার্যকর করেছে সরকার। অন্যদিকে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ চূড়ান্ত রায় রিভিউতে জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল রেখেছেন। শুনানি চলার মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াতে ইসলামীর আমীর গোলাম আযম ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের মৃত্যু হওয়ায় তাদের আপিলের নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।

    আজহারের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর নিয়ে কথা হয় সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, এটিএম আজহারের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে আরও দুটি ধাপ রয়েছে। সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকায় এখন রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) ও রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষাই একমাত্র পথ। এখানে বিফল হলে ফাঁসির দড়িতে ঝুলতেই হবে তাকে। ১৯ জুলাই এটিএম আজহারুল ইসলাম মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চেয়ে রিভিউ আবেদন দাখিল করেন। আজহারের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ২০ জুলাই অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রিভিউ আবেদনটি শুনানির জন্য উপস্থাপন করলে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ভার্চুয়াল আপিল বিভাগ নিয়মিত আদালত চালুর পর রিভিউ আবেদনটি শুনানির জন্য উপস্থাপন করতে বলেন। তিনি বলেন, ২৩ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ফাঁসির দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে ১৪টি যুক্তি দেখানো হয়েছে।

    ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে তিন অভিযোগে এটিএম আজহারের মৃত্যুদণ্ড এবং দুই অভিযোগে মোট ৩০ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল। গত বছর ৩১ অক্টোবর সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায়ে এটিএম আজহারুল ইসলামকে দেয়া মৃত্যুদণ্ডের সাজা বহাল থাকে। আপিলের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে আসামি পক্ষের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করার নিয়ম রয়েছে। ১৬ মার্চ এই মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়। ওইদিনই আজহারুল ইসলামের মৃত্যু পরোয়ানা কারাগারে পাঠায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।