বিহারে দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের দিয়াকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্র, মৃত এক

নতুন গতি ওয়েব ডেস্ক: বিহারের মুঙ্গেরে দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের সময়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অনুরাগ পোদ্দার (১৮) নামে এক যুবক নিহত ও কমপক্ষে ২০ জন আহত হওয়ায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে রাজ্যের ক্ষমতাসীন জেডিইউ-বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট সরকার। গতকাল সোমবার রাতের ওই ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে বেধড়ক লাঠিচার্জের পাশাপাশি গুলিবর্ষণের অভিযোগও উঠেছে। পুলিশ অবশ্য গুলিবর্ষণের ঘটনার কথা অস্বীকার করেছে।

     

    রাত পোহালেই আগামীকাল বুধবার রাজ্যটিতে প্রথম দফার বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে ওই ঘটনায় কার্যত ব্যাকফুটে চলে গেছে জেডিইউ-বিজেপি। মুখ পুড়েছে রাজ্য সরকারের।

     

    কংগ্রেসের সর্বভারতীয় মুখপাত্র রণদীপ সিং সূর্যেওয়ালা আজ মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে রাজ্যের ক্ষমতাসীন জেডিউ-বিজেপি জোট সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ‘যারা দুর্গা মায়ের ভক্তদের উপরে এভাবে লাঠিচার্জ করে তাদের ক্ষমা করা যায় না।’ তিনি হাইকোর্টের বর্তমান বিচারপতির নেতৃত্বে ওই ঘটনার তদন্ত দাবি করেছেন। একইসঙ্গে অবিলম্বে পুলিশের এসপি ও কালেক্টরকে সাসপেন্ড করার দাবি তুলেছেন।

     

    রণদীপ সিং সূর্যেওয়ালা বলেন, ‘যেসব পুলিশ কর্মকর্তা পশুর চেয়েও নির্মমভাবে পিটিয়েছে তাঁদের সকলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এজন্য দায়ী মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার ও উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সামনে এসে ওই বিষয়ে জবাব দিন।’

     

    রণদীপ সিং সূর্যেওয়ালা আরও বলেন, দুর্গা মায়ের ভক্তদের উপরে গুলি চালানো ও হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে বিজেপি এবং জেডিউ সরকারের পুলিশ। প্রথমে কোনও কারণ ছাড়াই ভক্তদের ঘিরে ফেলে মারধর করা হয়েছিল। এরপরে ভক্তদের উপরে গুলি চালানো হয় বলে তাঁর দাবি।

     

    রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) রাজ্য মুখপাত্র চিত্তরঞ্জন গগন মুঙ্গেরের ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন এবং তাত্ক্ষণিক ওই ঘটনার জন্য দায়ী এসপিকে সাসপেন্ড করার দাবি জানিয়েছেন। আরজেডির মুখপাত্র বলেছেন, উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুশীল কুমার মোদী ওই ঘটনার দায় নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে চাপিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। রাজ্য সরকারকে অবিলম্বে পুলিশের এসপিকে সাসপেন্ড এবং বিচার বিভাগীয় তদন্তের ঘোষণা দেওয়া উচিত বলেও আরজেডি মুখপাত্র চিত্তরঞ্জন গগন মন্তব্য করেছেন।

     

    পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে প্রকাশ, একটি খোলা গাড়িতে দুর্গা প্রতিমা নিয়ে বেশ কিছু বাসিন্দা বিসর্জন দিতে যাচ্ছিলেন। পুলিশের সঙ্গে তাদের বচসা শুরু হয়। এ সময়ে ওই বিসর্জনের দল থেকে ইট-পাটকেল ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। এরফলে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক গোলযোগ বেধে যায়। ওই সময়েই গুলি চলে বলে অভিযোগ। এরফলে ঘটনাস্থলে এক যুবকের মৃত্যু হয়। পুলিশ ওই বিসর্জনের গাড়ির সঙ্গে থাকা নারী-পুরুষকে নির্বিচারে বেধড়ক পেটাতে শুরু করে। এ সংক্রান্ত এক ভিডিও চিত্র ভাইরাল হয়েছে। ওই ঘটনায় পুলিশ গুলি চালিয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

     

    মুঙ্গেরের পুলিশ সুপার লিপি সিংহ অবশ্য বলেন, দুর্গাপুজোর বিসর্জনে কিছু দুর্বৃত্ত ঢুকে পড়েছিল। তাদের পাথর নিক্ষেপে ২০ পুলিশকর্মী আহত হয়েছে। এরপরে জনতার মধ্যে থেকে কেউ গুলি চালায়। তাতে মৃত্যু হয় এক যুবকের।

     

    রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা সুশীল মোদি তাঁর সাফাইতে বলেছেন, নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব এখন নির্বাচন কমিশনের। এটি ‘অনভিপ্রেত’ বলে অভিহিত করে নির্বাচন কমিশনের উচিত ঘটনার তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা বলেও সুশীল মোদি মন্তব্য করেন।

     

    এলজিপি নেতা চিরাগ পাসওয়ান বলেছেন, বিহারে তালিবানি শাসনের মতো শাসন চালাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। তিনি মৃতের পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপুরণ ও পরিবারের কাউকে সরকারি চাকরি দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন।