গানের সুরে, বাহারি রঙে, মাদলের তালে আদিবাসীরা মেতেছে বাহা পরবে

    গানের সুরে, বাহারি রঙে, মাদলের তালে আদিবাসীরা মেতেছে বাহা পরবে

    নতুন গতি, বীরভূম: সংস্কৃতিপ্রেমী বাংলার মানুষ চাতক পাখির মতো বসন্তের দিকে চেয়ে থাকে।  বসন্ত মানেই রঙের মেলা, প্রেমের খেলা।  বসন্তের দিনগুলি কর্মব্যস্ত প্রতিটি মানুষের কাছেই জীবনের ভিন্ন রঙের স্বাদ বহন করে নিয়ে আসে।  দূরদূরান্ত থেকে পথিকরা পাড়ি জমান পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ্বভারতীর শান্তিনিকেতনে কিন্তু বসন্ত উৎসব ছাড়াও আদিবাসী গ্রামগুলোতে বাহা উত্সব পালিত হয়। বীরভূমের মোহাম্মদবাজার ব্লকের হুচুক পাহাড়ি এলাকা, পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড় সংলগ্ন সেই ধরনের উত্সব চোখে পড়ল।  শালগাছে ফুটেছে সারজম, মহুয়ায় ফুটেছে মাতকম’’ গানের সুরে, বাহারি রঙে সেজে আর মাদলের তালে তালে সাঁওতালেরা মেতেছেন প্রকৃতির সুর বাহা পরবে।  বাহা পরবের মাধ্যমে প্রতিবছর ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ না করা পর্যন্ত সাঁওতালরা মাতকমের মধু খায় না, খোঁপায় দেয় না সারজম ফুল।

    ‘‘বাহা’’ একটি সাঁওতালি শব্দ। বাংলায় এর আক্ষরিক অর্থ হল ফুল। এখানে আসলে ফুলের রঙকে বোঝানো হয়। আর “পরব” অর্থ হলো উৎসব।  “বাহা পরব”-এর বাংলা অর্থ দাঁড়ায় “ফুল উৎসব”। এই উৎসব প্রকৃতির সঙ্গে মানুষগুলো মিশে একাকার হয়ে যায় বাহা উৎসবে।  প্রকৃতিতে ঋতুরাজ বসন্ত আসে হরেক রকমের ফুলের সৌন্দর্য নিয়ে।  নতুন ফুল ফোটার আনন্দ উদযাপন ও দেবতাকে তুষ্ট করতে এ সময় সাঁওতালদের।  প্রকৃতির সন্তান, বিশিষ্ট সমাজসেবী নরেন হাঁসদা জানান প্রকৃতির সন্তানেরা আজও তাদের ঐতিহ্য পরম্পরা ধরে রাখতে মরিয়া।  আদিবাসী সাঁওতালদের প্রকৃতি চেতনা, প্রকৃতি প্রেম, প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখার এই উৎসব এই উদ্যোগ পৃথিবীকে সুস্থ সবল রাখার।  গ্রাম জঙ্গল পাহাড়তলীতে থাকা সাঁওতালদের মধ্যেই পরম্পরা জন্মসূত্রে হস্তান্তর হয়ে আসছে। জীবিকার তাগিদে যারা গ্রাম থেকে শহর বা মফস্বলে থাকছেন তাদের মধ্যে প্রকৃতি চেতনা উৎসবের মধ্যে নগর সভ্যতাকে বার্তা দিতে চাই পরিবেশ বাঁচাতে, পৃথিবীতে নির্মল রাখতে আদিবাসী সাঁওতালদের রক্ষা করুন। তাদের লোকাচার, পূজা পার্বণ ধ্বংস হচ্ছে। আদিবাসী সাঁওতালদের দেব-দেবতা ধ্বংস হচ্ছে। যা ধ্বংস হলে পৃথিবী ধ্বংস হবে।