১৫ আগস্ট নয় ১৮ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস পালিত হয় বালুরঘাটে

নিজস্ব সংবাদদাতা:  ব্রিটিশ শাসনকে পরাজিত ও অনেক বীর শহীদদের রক্তের বিনিময়ে অখন্ড ভারতবর্ষ ১৯৪৭ সালের ১৫ আগষ্ট স্বাধীন হয়েছিল। এর পাশাপাশি  ১৯৪৭ সালে ১৪ অগাস্ট স্বাধীন হয়েছিল পাকিস্তান। ১৫ অগাস্ট ভারত স্বাধীন হয়েছিল। স্বাধীনতার আনন্দে যখন দেশ মাতোয়ারা, তখন অজানা আশঙ্কা আর আতঙ্ক নেমে এসেছিল দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার  বালুরঘাটবাসীর কাছে। কারণ ১৪ অগাস্ট রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও পাকিস্তানি নেতারা বালুরঘাট হাইস্কুল দখল নেয়। ১৫ অগাস্ট সকালে মহকুমাশাসক পানাউল্লা পাকিস্তানের পতাকা তোলেন বালুরঘাটে। শহরের নাট্যমন্দির থেকে জেলা সদর আদালত পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে সারিবদ্ধভাবে সুসজ্জিত ছিল পাকিস্তানি পতাকায়। এই ঘটনায় উত্তেজনা দেখা যায় বালুরঘাটের সাধারণ মানুষ ও পাকিস্তানি ফৌজের মধ্যে। স্বাধীনতা সংগ্রামীরা সশস্ত্রভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন বালুরঘাটে। তৎকালীন বালুরঘাট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক কুমুদরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের সাহসিকতায় হাইস্কুল চত্বরে পাকিস্তানি পতাকা তুলতে পারেননি ফৌজরা। সেই সময় স্যার সিরিল র‍্যাডক্লিফ বালুরঘাট সহ রায়গঞ্জ ও অসমের বেশ কিছু এলাকাকে “ন্যাশনাল এরিয়া” বলে ঘোষণা করেছিলেন। অবশেষে ১৭ অগাস্ট বর্তমান বাংলাদেশের ধামারহাট, পোরসা, পত্নীতলা থানাগুলি বাদ দিয়ে বালুরঘাট সহ মোট পাঁচটি থানা ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৮ অগাস্ট সকালে বালুরঘাটে ভারতীয় জওয়ানরা পজিশন নেন। পাকিস্তানি সেনাদের বালুরঘাট ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপরেই পাকিস্তানি সেনা ফিরে যায়।অবশেষে ১৮ অগাস্ট প্রশাসনিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়, স্বাধীন হয়েছে বালুরঘাট। স্বাধীন বালুরঘাটে প্রথম সরোজরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় পতাকা তোলেন। এরপর ১৯ অগাস্ট বালুরঘাট হাইস্কুল ময়দানে স্বাধীনতার বিজয় উৎসব পালন করেন বালুরঘাটবাসী। সেই থেকে ১৮ অগাস্ট বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বালুরঘাটে, যা শহরের স্বাধীনতা দিবস। আর সেই দিনকে মাথায় রেখে স্মৃতি বহন করে আজও যখন ১৫ আগষ্ট  দেশে স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয় সেদিন পতাকা উত্তোলন বালুরঘাট শহরে না হলেও ১৮ আগষ্ট শ্রদ্ধার সাথে পতাকা উত্তোলন করে স্যালুট জানান বালুরঘাটবাসীরা।