টি আই সি নিয়োগে অনিয়ম স্কুলে তালা

মহম্মদ নাজিম আক্তার, নতুন গতি, হরিশ্চন্দ্রপুর: টি আই সি নিয়োগে অনিয়ম, মিড ডে মিলে দুর্নীতি, স্কুলে পরিস্রুত পানিয় জলের অভাব ও শিক্ষকদের অনিয়ম সহ একাধিক দাবি তুলে নবনিযুক্ত টি আই সি কে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান অভিভাবক ও ছাত্র-ছাত্রীরা। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার হরিশ্চন্দ্রপুর-১ নং ব্লকের মহেন্দ্রপুর জিপির মহেন্দ্রপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে।

    জানা যায় শুক্রবার নবনিযুক্ত টিআইসি তথা আরবি বিভাগের শিক্ষক নুরুল ইসলাম সরকারি নির্দেশে চাল, ডাল, আলু ও স্যানিটাইজার ছাত্রছাত্রীদের দিতে আসলে অবিভাবক ও ছাত্রছাত্রীরা টিআইসি কে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। স্কুলের প্রধান গেটে তালা মেরে পাঁচ ঘণ্টা ধরে চলতে থাকে বিক্ষোভ। টিআইসি অন্য গেট দিয়ে অফিস রুমে প্রবেশ করলে বিক্ষোভকারীরা বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে ঘন্টা খানেক আটকে রাখে বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ। পুলিশের তৎপরতায় বিক্ষোভকারীদের হাত থেকে রেহাই পান নুরুলবাবু।

    অভিভাবক তফিজুল ইসলাম, রাহানুল হক ও সাজেদুল ইসলামরা অভিযোগ করে বলেন লকডাউন চলাকালীন অনিয়ম ভাবে ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা নুরুল ইসলামকে টিআইসি পদে নিয়োগ করেছে। সিনিয়ারিটির ভিত্তিতে নিয়োগ না করে নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থে নিয়োগ করানোর অভিযোগ উঠেছে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে।দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে পুরনো ম্যানেজিং কমিটি বহাল রয়েছে। ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের ছেলেমেয়েরা স্কুলে পড়াশোনা করে না অথচ নিজেদের ব্যক্তিগত সুবিধা লাভের জন্য কমিটিতে রয়েছে বলে অভিযোগ। ৮০ বছর বয়স পেরিয়ে গেলেও কি নিয়মে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হয়ে রয়েছেন। উঠছে প্রশ্ন। অথচ সরকারি নিয়মে রয়েছে তিন বছর অন্তর নতুন ম্যানেজিং কমিটি গঠনের কথা।

    তাদের ‌দাবি সিনিয়ারিটি হিসাবে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শিক্ষককে টিআইসি পদে নিয়োগ করাতে হবে। পুরাতন স্কুল কমিটিকে সরিয়ে ছাত্র-ছাত্রীর অভিভাবক ও গ্রামের মুখ্য সদস্যগনকে নিয়ে সর্বসম্মতিক্রমে নতুন কমিটি গঠন করতে হবে।

    আরো এক অভিযোগকারী সামদানী সারোয়ার জানান, পূর্বে নিযুক্ত শিক্ষক এক্রামূল হোক কে সিনিয়ারিটির ভিত্তিতে নিয়োগ করানো হয়েছিল। গত ৩০ জুন অবসর নিলে রাতের অন্ধকারে লকডাউন চলাকালীন ২৭ জুন অনিয়ম ভাবে নুরুল ইসলামকে টিআইসি পদে নিয়োগ করানো হয়েছে বলে অভিযোগ। সিনিয়ারিটির ভিত্তিতে টিআইসি নিয়োগ না করলে আরো বৃহত্তর আন্দোলনে নামবে বলে জানান।

    মিড ডে মিলের রাঁধুনি সাহানাজ বিবি ও মসিমা বিবিরা জানান খুব কম পরিমাণ চাল,ডাল ও সবজি রান্না করতে দেওয়া হয়। অথচ বেশি পরিমাণ ছাত্র-ছাত্রীদের খাওয়ানোর কথা বলে। অপুষ্টিকর খাওয়া বেশি ভাগই ছাত্র-ছাত্রীরাই খাই না। গড়পড়তা পঞ্চাশ থেকে ষাট জন ছাত্র-ছাত্রীর জন্য রান্না করার সামগ্রী দেওয়া হয় অথচ পাঁচশো থেকে সাতশো ছাত্রছাত্রীর মিড ডে মিলের খাওয়ার দেখানো হয় বলে অভিযোগ।

    ম্যানেজিং কমিটির সদস্য পঙ্কজ কুমার দাস জানান, সরকারি নিয়ম মেনে ১১ জন ম্যানেজিং কমিটির সদস্যের সহমতের ভিত্তিত টিআইসি নিয়োগ করানো হয়েছে। এখানে কারো কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ নেই। স্কুলের পঠনপাঠন উন্নতির দিক ভেবেই নুরুলবাবুকে টিআইসি পদে নিয়োগ করানো হয়েছে। লকডাউনে স্কুল বন্ধ রয়েছে অথচ কি করে পঠনপাঠন, পানীয় জল ও মিড ডে মিলের অভিযোগ তুলছে তারা। তিনি আরো জানান দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে ম্যানেজিং কমিটি রয়েছে। সরকারি নির্দেশ আসলে নতুন ভাবে কমিটি গঠন করা হবে বলে জানান।

    এস আই শর্মিলা ঘোষ জানান টিআই সি নিয়োগ প্রক্রিয়াটি পুরোপুরি স্কুল ম্যানেজিং কমিটির হাতে রয়েছে। উনারা ভালোদিক ভেবেই টিআইসি নিয়োগ করেছেন। টি আই সি অনিয়মের নিয়োগের অভিযোগ পত্র পেয়েছে। শিঘ্রই খতিয়ে তদন্ত শুরু করবেন বলে জানান।

    বিডিও অনির্বাণ বসু জানান মিড ডে মিলের অভিযোগ পেয়েছে। স্কুল খুললেই তদন্ত শুরু করবেন বলে জানান।