জামালপুরের বিদুষী নারী লীলাবতী দেবী জমি দান করেন তৎকালীন রাজ্য সরকারকে

সেখ সামসুদ্দিন, ৯ মেঃ দীর্ঘ ৬০ বছর পর স্বীকৃতি পেলেন জামালপুরের বিদুষী নারী লীলাবতী দেবী। ১৯৬২ সাল যখন জামালপুরে সেই ভাবে চিকিৎসা ব্যবস্থার পরিষেবা ছিলনা অসুস্থ মানুষকে বর্ধমান ছুটতে হোত বা বিনা চিকিৎসায় মারা যেতে হোত অনেক মানুষকে, সেইসব মানুষের কথা ভেবে এগিয়ে আসেন সেই সময়কার অন্যতম একজন বিদুষী নারী লীলাবতী দেবী। তিনি তার সম্পত্তি থেকে ৯ একর ৭০ শতক জমি দান করেন তৎকালীন রাজ্য সরকারকে জামালপুরে হাসপাতাল তৈরি করার জন্য। সেই সময় যে ভাবনা থেকে তার এই মহান কাজ, তার আত্মত্যাগ তার কোনো স্বীকৃতি এতদিন ছিল না। বিভিন্ন সরকারের পরিবর্তন হয়েছে। কংগ্রেস সরকার, বাম সরকারের পর অবশেষে ২০১১সালে এসেছে তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার যার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি ক্ষমতায় এসেই ঘোষণা করেছিলেন মনীষীদের যোগ্য সম্মান সরকারিভাবে দেয়া হবে। ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হন মেহেমুদ খান, পুর্তের কর্মাধ্যক্ষ ভূতনাথ মালিক। ঠিক তখনই লীলাবতী দেবীর পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের কাছে আর্জি জানানো হয় তার স্বীকৃতির জন্য। মেহেমুদ খান ভূতনাথ মালিক তড়িঘড়ি মিটিং করেন বিডিও শুভঙ্কর মজুমদারের সঙ্গে। দীর্ঘদিন অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও স্বীকৃতি জানানো হবে এই মহীয়সী নারীকে। সেই মোতাবেক কাজও শুরু হয় কিন্তু বাধ সাধে কোভিড। করোনাকালে দু’বছর কাজ বন্ধ থাকে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এই মূর্তি বসানোর কাজ পুনরায় শুরু হয়। অবশেষে আজ পচিশে বৈশাখ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্ণ জন্মতিথি লগ্নে জামালপুর হাসপাতলে তার শ্বেত-শুভ্র মর্মর আবক্ষ মূর্তি উন্মোচন করা হয় এবং সেখানেই ফলকে ছোট্ট করে লিখে দেওয়া হয় জমিদানের কথা। আজকের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লীলাবতী দেবীর পরিবারের সদস্যরা, তার বৌমা প্রভাবতী দেবী এবং নাতি সুশান্ত ঘোষ সহ অন্যান্যরা। আজকের এই অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামালপুরের বিধায়ক অলক কুমার মাঝি, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খান, পূর্তের কর্মাধ‍্যক্ষ ভূতনাথ মালিক, সহ-সভাপতি দেবু হেমরম, বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার, ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ ঋত্বিক ঘোষ, ছাত্র পরিষদের সভাপতি বিট্টু মল্লিক, সংখ্যালঘু সভাপতি ওয়াসিম সরকার সহ বিভিন্ন অঞ্চলের প্রধান উপপ্রধান ও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যরা। দীর্ঘদিন হয়ে গেলেও অবশেষে স্বীকৃতি মেলায় জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতি তথা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খান ও পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ভূতনাথ মালিককে ধন্যবাদ জানান তার নাতি সুশান্ত ঘোষ। এখানের এই অনুষ্ঠানে এরপর একটি নৃত্য প্রদর্শন করা হয়। এছাড়াও আজ হাসপাতালের রোগীদের ডাবিং করা হয় সাথে সাথে উপস্থিত অতিথিরা হাসপাতাল চত্বরে স্থানীয় ইচ্ছে গ্রুপের সহায়তায় বৃক্ষ রোপণ করেন। এরপরই এখান থেকে নেতাজী ক্লাবের সহায়তায় কচিকাঁচাদের নিয়ে রেলি করা হয় জামালপুর বাইপাস পর্যন্ত। এখানেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্ণ অবয়ব মূর্তি উন্মোচন করা হয় আজ। এই উপলক্ষে ছোট্ট একটি সরকারি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় মূর্তি উন্মোচন করেন বিধায়ক অলক কুমার মাঝি ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খান ছিলেন বাকি অন্যান্য অতিথিরা। অলক কুমার মাঝি বলেন মুখ্যমন্ত্রী বারবারই মনীষীদের যোগ্য সম্মান দেওয়ার কথা বলেছেন জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতি যে দুটি কাজ করলেন বিশেষ করে একজন গ্রাম্য মহীয়সীকে যে স্বীকৃতি প্রদান করা হলো, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মূর্তি উন্মোচন করা হল তার জন্য তিনি জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতিকে ধন্যবাদ জানান। মেহেমুদ খান বলেন আজ তার স্বপ্ন পূরণ হলো। এতদিন তিনি পঞ্চায়েত সমিতিতে আছেন কিন্তু যে দু’টি কাজ আজ তিনি করলেন এজন্য তিনি স্বস্তি অনুভব করছেন, গর্ব অনুভব করছেন, তৃপ্তি অনুভব করছেন। পূর্ত কর্মাধ‍্যক্ষ ভূতনাথ মালিক বলেন এই সম্মান লীলাদেবীর প্রাপ্য ছিল তাকে সম্মানিত করতে পেরে আজ তারা গর্ব অনুভব করছেন। বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খান জামাল পুর বাইপাস সংলগ্ন এলাকার নামকরণ করেন রবীন্দ্র বাইপাস এবং আজ থেকে সকলকে ওই জায়গার ওই নামে ব্যবহার করতে বলেন। সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ত্রম্বক সেনগুপ্ত।