মুসলিম সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী বিভিন্ন সংগঠনের সম্মিলিত আবেদন পত্র

নতুন গতি নিউজ ডেস্ক: বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র নুপুর শর্মা একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের এক অনুষ্ঠানে মহানবী (সা.) সম্পর্কে অশালীন কথা বলেছেন। অন্যদিকে দিল্লির বিজেপি নেতা ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান নবীন কুমার জিন্দালও রাসুলুল্লাহ (সা.) সম্পর্কে অশালীন কথা বলেছেন। হযরত মুহাম্মাদ (সা:) সম্পর্কে সোশ্যাল মিডিয়ায় অশ্লীল কথা পোস্ট করেছেন।

    এই অবমাননাকর মন্তব্যের বিরুদ্ধে শুধু দেশেই নয় বরং আন্তর্জাতিকস্তরেও এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হচ্ছে। আমাদের রাজ্যেও এই নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচী মুসলিম জনসাধারণের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচী পরিচালনার সময় কিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনার রিপোর্ট সামনে এসেছে। সেই প্রেক্ষিতে আজ পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী বিভিন্ন সংগঠনের দায়িত্বশীলগণ একত্রে মিলিত হন এবং পরিস্থিতির সার্বিক পর্যালোচনা করেন। পরিস্তিতি বিবেচনায় এই বৈঠক থেকে যৌথ ভাবে এই বিবৃতি প্রকাশ করা হচ্ছে যে-

    ১) নুপুর শর্মা এবং নবীন জান্দালের এই লজ্জাজনক কাজ সারা বিশ্বে আমাদের প্রিয় দেশের ভাবমূর্তি চরম ভাবে ক্ষুন্ন করেছে। মুসলিম সমাজের দায়িত্বশীল সংগঠনসমুহের আজকের বৈঠক এই লজ্জাজনক কাজের নিন্দা করছে এবং তাদের দুজনকেই সংবিধান মাফিক আইনের আওতায় এনে যত দ্রুত সম্ভব গ্রেফতার করার দাবি জানাচ্ছে এবং আইন অনুযায়ী কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করার আহ্বান জানাচ্ছে।

    ২) আমাদের দেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। বিভিন্ন ধর্মের মানুষ শতাব্দী পর শতাব্দী ধরে একত্রে বসবাস করে আসছে।বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য এই দেশের সবচেয়ে বড় শক্তি।এখানকার মানুষ সকল ধর্মের সম্মানিত ব্যক্তিত্বদের সম্মান করে এবং তাদের ধর্মীয় অনুভূতির প্রতিও শ্রদ্ধাশীল। বিগত কয়েক বছর ধরে সারাদেশে সাম্প্রদায়িক লাইনে জনগণকে বিভক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। আজকের এই বৈঠক থেকে এরও কঠোর নিন্দা জানানো হচ্ছে এবং ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়নের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

    ৩) সুশীল সমাজ, Civil society, বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং অন্যান্য শান্তিপূর্ণ সংগঠনকে এই লজ্জাজনক ঘটনার প্রতিবাদ সোচ্চার হওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।

    ৪) অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার অধিকার সাংবিধানিক অধিকার তবে প্রতিবাদ আন্দোলন পরিচালনার সময় কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্ত ও জনজীবন ব্যাহত না হয় সেদিকে প্রতিবাদ করার সময় প্রতিবাদকারীদের সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ করা করছি। হযরত মুহাম্মাদ (সা:) এর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশে আমাদের এমন কিছু করা উচিত নয় যা নিয়ে মহানবী (সাঃ) এর সম্মান ও মর্যাদাকে কেউ খাটো করার সুযোগ পায়। জনগণকে কষ্ট দেয় এমন কোনো কাজ বা কর্মসূচি কখনও করবেন না। মনে রাখবেন একটি কুচক্রি মহল সুযোগ পাওয়ার অপেক্ষায় আছে এবং রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশ নষ্ট করছে। এই গোষ্ঠীটি মুসলমানদের উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তাই এই ধরনের ষড়যন্ত্র থেকে আমাদের সর্বাত্মক ভাবে সতর্ক থাকতে হবে।

    ৫) আমাদের উলামা ও ইমামগণ তাদের জুমার খুতবা ও অন্যান্য কর্মসূচির মাধ্যমে জাতির সামনে রসূল (সা.)-এর মর্যাদা, উম্মতের ওপর মহানবী (সা.-এর অধিকার নিয়ে আলোচনা করবেন। সেই সঙ্গে অমুসলিম ভাইদের কাছে রসূল (সাঃ) এর পরিচয় করাবেন।

    ৬) মুসলিম জনসাধারণকে আহ্বান জানানো যাচ্ছে, তারা তাদের ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক জীবনে নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর আদর্শকে অনুসরণ করবেন এবং দেশবাসী ভাইদের হাতে নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জীবন ও কর্ম সম্মিলিত ফোল্ডার, বই পুস্তক তুলে দেবেন।

    ৭) প্রশাসনকে আমরা আরো সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি, যাতে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার পরিস্থিতি তৈরী না হয় এবং রাজ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশ অক্ষুন্ন থাকে। প্রতিবাদ আন্দোলনকে যারা হিংসাত্মকরূপ দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক তবে কোন নিরাপরাধ ব্যক্তি যাতে হয়রানির শিকার না হয় প্রশাসনকে তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।

    যারা এই বিবৃতি প্রদানে সহমত পোষন করেছেন, তাদের নাম ও সংগঠনের পরিচিতিঃ-

    ১। কারী ফজলুর রহমান -ইমামে ইদায়েন, রেড রোড
    ২। মাওঃ আব্দুর রফিক -আমীরে হালকা, জামাআতে ইসলামী হিন্দ, পশ্চিমবঙ্গ
    ৩। মাওঃ শফিক কাশেমী -ইমাম নাখোদা মসজিদ
    ৪। মাওঃ সামসুদ্দীন কাশেমী -রাজ্য সভাপতি, জমিয়তে উলাময়ে হিন্দ, পশ্চিমবঙ্গ
    ৫। মাওঃ মারুফ সালাফী -রাজ্য সম্পাদক, জমিয়তে আহলে হাদিস, পশ্চিমবঙ্গ
    ৬। মাওঃ হাসান মেহেদী -শিয়া আলিম
    ৭। নাসির আহমেদ -জেনেরাল সেক্রেটারী, খিলাফত কমিটি
    ৮। মুফতি আব্দুল মাতিন -সভাপতি, সুন্নত আল জামাআত
    ৯। সাহুদ আলম -জেনেরাল সেক্রেটারী, অল ইন্ডিয়া মিল্লী কাউন্সিল
    ১০। আব্দুল আজিজ -জেনেরাল সেক্রেটারী, অল ইন্ডিয়া মুসলিম মজলিসে মুসাওয়ারাত
    ১১। ইশাহাক মল্লিক -কলকাতা খিলাফত কমিটি
    ১২। আনওয়ার প্রেমিক -শিক্ষাবিদ
    ১৩। ডঃ এম. এন. হক -সোস্যাল অ্যাক্টিভিস্ট
    ১৪। শাহনাওয়াজ আরফী -মিল্লি এডুকেশন ট্রাস্ট
    ১৫। মুহাঃ নুরুদ্দীন -মিল্লি এডুকেশন ট্রাস্ট
    ১৬। সাদাব মাসুম -ধার্মিক জনমোর্চা
    ১৭। সাব্বির আহমেদ -প্রেসিডেন্ট, এস.আই.ও
    ১৮। মুফতি তাহেরুল হক -মুফতি দারুল কাযা, পশ্চিমবঙ্গ
    ১৯। মাওঃ মাজহারুল ইসলাম -মজলিসুল উলামা অল আইম্মা
    ২০। সেখ তাহেরুদ্দীন -সদ্ভাবনা মঞ্চ
    ২১। আহমদ হাসান ইমরান -প্রাক্তন সদস্য, রাজ্য সভা
    ২২। আবু সলেহ মুহাঃ রিজওয়ানুল কারিম -ফুরফুরা শরিফ
    ২৩। মাওঃ খুরশিদ নাদভি -পায়ামে ইনশানিয়াত