|
---|
করোনা ও ইসলামী বার্তা
লেখকঃ মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ
সারা বিশ্বজুড়ে আজ আতঙ্কের আরেক নাম হল কোভিড১৯। ঘরে-বাইরে সর্বত্র করোনা আজ আতঙ্কের আরেক নাম। নিরাপত্তা ও সতর্কতাকে আঙুল দেখিয়ে মারন করোনা চষে বেড়াচ্ছে সারা বিশ্ব জুড়ে। চীনের উহান প্রদেশে জন্ম হওয়া এই মরণব্যাধির বিস্তৃতি এখন প্রায় 206 টি দেশে। অদৃশ্য ঘাতকের অনাহুত আগমনের দুশ্চিন্তায় সভ্য সমাজ আজ দিশেহারা। এই ভাইরাস ছড়ানোর পর থেকেই বিশ্বজুড়ে সর্বস্তরে সঠিক তথ্যের পাশাপাশি গুজব ছড়াতে থাকে।যেমন চীন থেকে যখন প্রথম এর সূচনা হয় প্রথমেই ধর্মীয় অঙ্গনে আলোচনা হয় এটা মুসলিম নির্যাতনের ফলে চীনের ওপর খোদার গজব। আল্লাহ জুলুম বরদাশত করেন না। কোরআন হাদিস থেকে অসংখ্য দলীল দেয়া হতে থাকে। বিভিন্নভাবেই চীনের বিপদে খুশি হতে দেখা যায় ইসলাম প্রিয় সাধারণ মানুষকে।কিন্তু কিছুদিনেই জানা গেল এটার প্রভাবে এমনকি কাবা ঘরেও যেতে বাধা দেয়া হচ্ছে সাধারণ ওমরা যাত্রীদের। তাওয়াফ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এতে আমরা বলে ফেললাম, সৌদি যুবরাজের পাপাচারের কারণে সৌদিতেও আল্লাহর গজব নেমে এসেছে।অন্যদিকে ধর্ম প্রিয় মানুষেরা বলল ইরান শিয়া রাষ্ট্র তাই সেখানেও গজব পৌঁছে গেছে। আবার তাঁরা বলল কোরিয়া, আমেরিকা,স্পেন, ইতালি, জার্মান, ক্যানাডা প্রভৃতি দেশে অশ্লীলতার জন্য আল্লাহর গজব নেমে এসেছে। এখন যখন মুসলিম দেশগুলোতে হানা দিতে শুরু করেছে তখন আবার অনেককে বলতে শোনা যাচ্ছে যে প্রকৃত ধর্ম প্রাণ মানুষকে ভাইরাস আক্রমন করবে না।
গজব তত্ত্বের সঙ্গে গুজবের বাজারও গরম হয়েছে শুরু থেকেই।যেমন চিনারা সাপ,ব্যাঙ যা পায় তাই খায় বলেই এই ভাইরাস হয়েছে তাদের,আমাদের হবে না।আবার অনেকে বলছে ভাইরাসটি নাকি আমেরিকা কৃত্রিমভাবে বানিয়ে ছেড়ে দিয়েছে চীনে। কাল্পনিক নানা কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় ছুটে বেড়াচ্ছে দিব্যি।ধর্মীয় অঙ্গনে আলোচনা শুরু হল, এটা কি কোনো ছোঁয়াছে রোগ কি না। এ বিষয়ে সমাধানহীন তুমুল তর্ক এখনও শেষ হয়নি পুরোপুরি। একটি মত হচ্ছে এটা অবশ্যই ছোঁয়াছে ও সংক্রামক ব্যাধি। কাজেই সব ধরনের সমাগম পরিহার করে চলতে হবে।
বিশ্বব্যাপী মসজিদগুলোতে নামাজের জামাত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আবার জুমার নামাজও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ।এমন কি আরবের বেশ কিছু মসজিদেও জামাত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।সেই সাথে ভারতবর্ষেও মসজিদ, মন্দির ,গীর্জা প্রভৃতি ধর্ম স্থানে জনসমাগম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে ভারতীয় মোদি সরকার।এখনো প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে মসজিদে নামাজ না পড়াকে বিজেপি ও আরএসএস-এর চক্রান্ত ভাবছে।। অনেকে এই জামাত বন্ধের চরম প্রতিবাদ করছেন এবং বলছেন আল্লাহর গজব থেকে বাঁচতে বেশি বেশি মসজিদে আসতে হবে। আবার অনেকে বলছেন মসজিদে আসাই একমাত্র ইবাদত নয়। আরও বহু নেক আমল আছে।
বৃষ্টির জন্য তো নবী মোহাম্মদ (সা:) মসজিদে না গিয়ে ঘরে নামাজ পড়ার কথা বলেছেন। বেলাল আজানের সময় ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন । তাহলে এমন এক ভয়াবহ পরিস্থিতিতে কেন মসজিদে না এসে থাকা যাবে না।কিছু ইসলামী স্কলার এমনও বলছেন, যারা আগে থেকে মসজিদে আসত তারা আসুক, নতুন করে কারো মসজিদে ভিড় বাড়াতে আসার দরকার নেই। চিন্তাবিদদের চিন্তার বৈচিত্র্যে মুগ্ধতা ও অস্থিরতা দুটিই আচ্ছন্ন করছে সাধারণ মানুষের মন
।এ ধরনের পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র ও সরকারকে সর্বোচ্চ সহায়তা করা একান্ত আবশ্যক হয়ে পড়ে। বিচ্ছিন্ন কোনো একটি ব্যাখ্যা শুনে বাড়াবাড়ি করা শুভকর হয় না। সমসাময়িক কোনো বিষয় নিয়ে ইসলামের একটি ব্যাখ্যা শুনেই বাড়াবাড়ি ঠিক নয়।প্রত্যেক জ্ঞানীর উপর জ্ঞানী রয়েছে। এক ব্যাখ্যার বিপরীতে রয়েছে আরও বহু ব্যাখ্যা। করোনা নিয়ে যে সব গবেষণা হচ্ছে তা থেকে অনেক শিক্ষার ভেতর এটিও একটি ভালো শিক্ষণীয় বিষয় হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ও বিশ্ব বিশেষজ্ঞদের মতামত হচ্ছে, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, বেশী লোক এক যায়গায় সমবেত না হওয়া। কিন্তু আমাদের দেশে এগুলোর কোনো কিছুই মানা হচ্ছে না। বিশেষ দিবস পালনের জন্য সরকারিভাবে যেমন বিশাল সমাবেশ করা হয়েছে। অপর দিকে কোয়ারেন্টেইনে থাকা লোকেরা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। দিবস পালনে সরকারের আবেগ উচ্ছাসে কোনো ভাটা নেই। ইসলাম অনাহুত আতঙ্ক এবং বিভ্রান্তি ছড়াতে নিষেধ করেছে। একইভাবে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন ইসলামেরই নির্দেশ। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘আগে তোমার উট বাঁধো, তারপর আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করো’। মুহাম্মদ সা. নির্দেশ দিয়েছেন : ‘মহামারী আক্রান্ত এলাকার লোক যেন অন্য এলাকায় না যায় একইভাবে যেখানে মহামারী নেই সেই এলাকার লোক যেন মহামারী আক্রান্ত এলাকায় না যায়’। গোটা দেশ শাটডাউন আতঙ্কে চাল-ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। লাভবান হচ্ছে এক ধরনের অসাধু চক্র। বিভিষীকাময় পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়িয়েও যে জাতির নৈতিক মানের কোনো উন্নতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না, বড়োই আফসোস তাদের জন্য।
সময়ের বিবর্তনে আমাদের নৈতিক মানের উন্নয়নের পরিবর্তে অবনতির পাল্লাই যেন আজ বেশী ভারী। পৃথিবীর ইতিহাস সাক্ষী ইতঃপূর্বে আল্লাহ বিভিন্ন জাতিকে প্রথমে অবকাশ দিয়েছেন, এমনকি সংশোধিত হওয়ার জন্য বার বার সুযোগ দিয়েছেন। কিন্তু জাতিগুলো আল্লাহর বিধানের সাথে শুধু অন্যায় আচরণই করেছে। পরিণামফলে একেকটি জাতিসমূলে ধ্বংস হয়ে গেছে। গোটা পৃথিবীপৃষ্ঠ যেন আজ একটি অন্যায়ের কারখানা। বিশ্ব চরাচরের যিনি মালিক তার বিধানের সাথে বিদ্রোহকে এখানে আধুনিকতা নামে অভিহিত করা হয়। আল্লাহর দেওয়া বিধানকে বলা হয় অমানবিক এবং মধ্যযুগীয় আইন। অশ্লীলতার নাম শিল্প, সাহিত্য এবং সংস্কৃতি। ধুর্তামি, চালাকি, শঠতার নাম দেওয়া হয় বুদ্ধিমত্তা। নির্মম নির্যাতন আর চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যার পর সোল্লাশে চিৎকার করে ঘোষণা দেওয়া হয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয়ের। মানুষ মারার অস্ত্র তৈরীর পর পরাশক্তির জানান দেওয়া হয়। বিশ্বের বিপুল সংখ্যক মানুষ যখন ক্ষুধায় কাতরায় তখন উদ্বৃত্ত খাদ্য সমুদ্রে ফেলে দিয়ে কৃষিকে বাঁচিয়ে রাখার কসরত করে অবারিত সম্পদ ও ভূমির মালিক রাস্ট্রগুলো। দরিদ্র মানুষগুলো যখন আরো দরিদ্র হচ্ছে তখন কিছু কিছু মানুষের সুইচ ব্যাংকের হিসাবের স্ফিতি দেখে চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। ডাস্টবিনে যখন মানুষ-কুকুর খাবার ভাগাভাগি করে তখন বিলাসী জীবনের জানান দেয় একদল মানুষ। বসবাসযোগ্য একটি পৃথিবী সবার কাম্য, যেখানে থাকবে শান্তি, সুখ, সুবিচার, নৈতিক এবং মানবিক পরিবেশ। মানবতার জন্য কল্যাণময় একটি সুন্দর পৃথিবী একমাত্র- কেবলমাত্র স্রষ্টার দেখানো পথে চলার মাধ্যমেই তার প্রকৃত রূপ ফিরে পারে।
অন্যায়-আনাচার যুলুম, বাড়াবাড়ি এবং খোদাদ্রোহীতার ফলশ্রুতিতে আল্লাহর পক্ষ থেকে আজাব হিসেবেই করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি ব্যাপ্তি এবং আক্রমণ এটা নির্দিধায় বলা যায়। ইসলামী স্কলার এবং সুপণ্ডিতগণ এ থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর সাহায্যের মূখাপেক্ষী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, পাপ পঙ্কিলতামুক্ত জীবন গঠন এবং আল্লাহতে সমর্পিত হওয়ার জন্য। মানুষ তার স্বীয় শক্তি, মেধা, যোগ্যতা এবং বস্তুগত উৎকর্ষতার বিনিময়ে আল্লাহর দেওয়া আজাব হতে মুক্তির পথ খূঁজছে। কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিজস্ব একটি নিয়ম আছে; যে নিয়ম এবং বিধানে শুধুমাত্র বস্তুগত শক্তির দ্বারা সব কিছু মোকাবেলা করা যায় না। আল্লাহ যখন কোনো জাতির জন্য আজাবের ফায়সালা করেন তখন সে আজাবকে মানুষ কখনোই স্বীয় শক্তি দ্বারা প্রতিহত করতে সক্ষম হতে পারে না।হ্যা আল্লাহর স্বীয় সুন্নাত হচ্ছে এই যে, আগুনে হাত দিলে হাত পুড়বে। বরফে হাত লাগালে ঠান্ডা অনুভুত হবে। ময়লাযুক্ত খাবার খেলে পেটের পীড়া দেখা দিবে। অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার নিয়মিত খেলে রক্তে কোলেস্টোরোলের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে হৃদরোগ দেখা দিবে। কিন্তু এর বাইরে আল্লাহ যখন বিকল্প কানো কিছু করার ইচ্ছা করেন, তখন এ নিয়মের বাইরে অনেক কিছু ঘটে। আগুন দাহ্য হবার পরেও ইবরাহীম আ.-এর জন্য আগুন শান্তিদায়ক শীতলতায় পরিণত হয়েছে। শানদার ছুড়ি ইসমাঈলের গলা কাটেনি। এটা আল্লাহর বিকল্প নির্দেশ। কিন্তু পৃথিবী পরিচালনায় আল্লাহর স্বাভাবিক সিস্টেম সবসময় চলমান।
করোনার আক্রমণ আল্লাহর একটি হুকুম মাত্র। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা যে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে, তা অবশ্যই মেনে চলতে হবে। এ নিয়মগুলো মেনে চলা আল্লাহর বিধান এবং রাসূলের সুন্নাহ বিরোধী তো নয়ই বরং ইসলামের অনুমোদিত পন্থার অধীন। যেমন রাসুল সা. এর সুন্নাহ হচ্ছে : পেটের তিনের এক অংশ খালি রেখে খাবার খাওয়া- এতে স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। তিনি নিষেধ করেছেন, শরীরের অর্ধেক ছায়াদার গাছের নীচে এবং বাকী অর্ধেক রোদে না রাখতে- এতে শরীরের বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে। তবে শুধুমাত্র বাহ্যিক কার্যক্রমগুলোই সব কিছুর মানদণ্ড নয়। আল্লাহর অবাধ্যতা করলে আল্লাহর নির্ধারিত শাস্তি যেমন পরকালীন জীবনের অমোঘ বিধান। একইভাবে দুনিয়ার জীবনেও মাঝে মাঝে আল্লাহ শাস্তি দিয়ে বিশ্ববাসীকে সতর্ক করেন। অতীতে যে সকল জাতিগোষ্ঠীকে আল্লাহর অবাধ্যতার কারণে ধ্বংস করেছেন তার কিয়দংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরছি : পৃথিবীর ইতিহাসে একটি নিকৃষ্ট জাতি ছিলো লুত সম্প্রদায়। তারা আল্লাহর বিধান তো মানতোই না বরং সম লিঙ্গের বিয়েসহ নানান অপকর্মে এমনভাবে জড়িত ছিলো যে, শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাদের গোটা জাতিগোষ্ঠীর চিহ্ন পর্যন্ত মুছে দিলেন। পবিত্র কুরআনের সুরা আনকাবুতে তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে : ‘‘যখন আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ লুতের কাছে আগমন করল, তখন তাদের কারণে তিনি বিষন্ন হয়ে পড়লেন এবং তার মন তাদের (রক্ষার) ব্যাপারে সংকীর্ণ হয়ে গেল। তারা বলল, ভয় করবেন না এবং দুঃখ করবেন না। আমরা আপনাকে এবং আপনার পরিবার বর্গকে রক্ষা করবই। আপনার স্ত্রী ব্যতীত, সে ধ্বংসপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত থাকবে। আমরা এই জনপদের অধিবাসীদের ওপর আকাশ থেকে আজাব নাজিল করব তাদের পাপাচারের কারণে। আমি (আল্লাহ) তাতে বুদ্ধিমান সম্প্রদায়ের জন্যে একটি স্পষ্ট নিদর্শন রেখে দিয়েছি।’’ (আল কুরআন )।আল্লাহ প্রচণ্ড ধুলি এবং পাথর ঝড় গোটা সম্প্রদায় এবং জনপদকে এমনভাবে নাস্তানাবুদ করেছিল যে, তাদের কোনো চিহ্ন আর ছিল না। যা বর্তমানে মৃত সাগরের কাছে অবস্থিত রয়েছে। ভৌগলিকরা দেখতে পেয়েছেন, অঞ্চলটি প্রচুর পরিমাণে গন্ধকে ভর্তি। ফলে সমগ্র অঞ্চলটিতে প্রাণী বা উদ্ভিদ কোনো ধরনের জীবনের অস্তিত্ব নেই। পুরো এলাকা সর্বাঙ্গীন ধ্বংসের একটি নিদর্শন হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। এভাবে এটি সকল যুগের মানুষের জন্য আল্লাহর অবাধ্যতার ফলস্বরূপ শাস্তির একটি নিদর্শন বিস্তির্ণ এ জনপদ।আবার তিনি সামূদ জাতিকে ধ্বংস করেছিলেন।
আইকা বাসীরা ছিলো বিশ্বের অন্যতম নিপুন কৌশুলী সম্প্রদায়। স্থাপত্য বিদ্যায় তারা ছিলো খুবই পারদর্শী। কিন্তু আল্লাহর সীমা লঙ্ঘনের ফলে আল্লাহ এ জাতিকে ধ্বংস করে দেন।
আল্লাহ তায়ালা অতীতের জাতিগোষ্ঠীকে যেভাবে সমূলে ধ্বংস করেছেন, মুহাম্মাদ সা.-এর উম্মাতদেরকে এভাবে সমূলে ধ্বংস করবেন না। যা শেষ নবীর দোয়ার মাধ্যমে প্রমাণিত। মুহাম্মাদ সা. আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন। হে আল্লাহ অতীতের জাতিগোষ্ঠীকে যেভাবে ধ্বংস করেছো, তুমি আমার উম্মাতকে সেভাবে ধ্বংস করো না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর প্রিয় রাসূলের এ দোয়া কবুল করেছিলেন। তাঁর দোয়ার বদৌলতে হয়তো আল্লাহ আমাদের সমূলে বিনাষ করবেন না। কিন্তু করোনা-ইবোলা এবং প্লেগের মতো রোগ দিয়ে শায়েস্তা করবেন না, এমন কথা হাদীসে নেই। আল্লাহর বাহিনী হিসেবে গোটা দুনিয়ার সব কিছু কাজ করছে। যখন যেটাকে আল্লাহ হুকুম করবেন, সেটাই বিশাল বাহিনী হিসেবে ভুমিকা পালন করবে। পৃথিবীর প্রতিটি অণু পরমাণুর ওপর আল্লাহর একক নিয়ন্ত্রণ। আল্লাহর সৃষ্টিরাজির ওপর মানুষ কেবল ততক্ষণ কর্তৃত্ব করতে পারে যতক্ষণ আল্লাহ অনুমোদন দিবেন। তিনি তার সৃষ্ট বস্তুনিচয়কে মানুষের কল্যাণের যেমন নির্দেশ দেয়ার একক ক্ষমতা সংরক্ষণ করেন একইভাবে তিনি এ সকল সৃষ্টিরাজীকে মানুষের বিরুদ্ধে তাদের ধ্বংস এবং ক্ষতির জন্যও নির্দেশ দিতে পারেন। পবিত্র কুরআনের ঘোষণা : নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রতিটি বস্তুর উপর (অর্থাৎ আরশ, পঙ্গপাল কিংবা ভাইরাস) সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান, সবই তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন ।
আমাদের দেশের কিছু কিছু মানুষ খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে এই আশঙ্কায় বেশী বেশী খাদ্যদ্রব্য কিনে মজুদ করছে। সকল নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বাজারে এক ধরনের কৃত্তিম সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু মানুষ ভুলে গেছে, যে আল্লাহ রিজিকের মালিক, তিনি ইচ্ছা করলেই কেবল এ সংকট থেকে উদ্ধার করতে পারেন। তিনি না চাইলে শত প্রচেষ্টা এবং মওজুদ করার পরও খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে। আল্লাহর ঘোষণা হচ্ছে : ‘‘তারপর আমি ফেরাউনের অনুসারীদেরকে কয়েক বছর পর্যন্ত দুর্ভিক্ষে রেখেছিলাম এবং অজন্ম ও ফসলহানি দ্বারা বিপন্ন করেছিলাম। (সংকটাপন্ন এবং বিপদগ্রস্থ অবস্থায় রেখেছিলাম ) উদ্দেশ্য ছিলো, তারা হয়তো আমার পথ-নির্দেশ গ্রহণ করবে এবং আমার প্রতি বিশ্বাস আনয়ন করবে। ( সূরা আরাফ : ১৩০) আল্লাহর এ ঘোষণার মূল বক্তব্য হচ্ছে, বিপদ, মুসিবত, দুর্ভিক্ষ সকল কিছু থেকে একমাত্র আল্লাহর কাছেই পানাহ চাইতে হবে। তার কাছেই আত্মসমর্পন করতে হবে। তার বিধানের আলোকে গোটা জীবন সাজাতে হবে। আল্লাহ না চাইলে কোনো বিপদ থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব নয়। সকল মত, চিন্তা, বিভ্রান্তি পরিত্যাগ করে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পনের মাধ্যমে আমরা মুক্তির পথ খুঁজতে পারি। তার বিধানের সাথে বিরূপ আচরণ করে যত প্রটেকশন গ্রহণ করা হোক না কেন, তার ফল কল্যাণদায়ক হবে না। আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পনের পর নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করলে আল্লাহ তার করুণারাশি বর্ষন করবেন।যারা দুনিয়াকে অপরাধের পাহাড় বানিয়ে ফেলেছে, তাদের ভাবনায় এটাই সব সময় স্থান পায় যে কেউ তাদের নাগাল পাবে না। তাদের সম্পর্কে সূরা নাহলে আল্লাহ বলেন, ‘‘যারা কুচক্র বা কু’কর্ম করে বা বিভিন্ন ধরণের অপরাধ, অবিচার এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে তারা কি চিন্তামুক্ত হয়ে গিয়েছে যে আল্লাহ তাদেরকে সমূলে বিনাশ করে দিবেন না কিংবা তাদেরকে ভূগর্ভে বিলীন করে দিবেন না? কিংবা তাদের উপর এমন সব দিক থেকে বিপদ বা শাস্তি এনে হাজির করানো হবে না, যে দিকগুলোর বিষয়ে এর আগে কোনো ধারণাই তাদের নেই ’’ (আল কোরআন)
পৃথিবীর মাটিতে আজ মানুষের বেঁচে থাকাটাই দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে। জীবন যেন এখানে এক দুঃসহ যাতনার নাম। মানুষ বাঁচার জন্য লড়াই করছে প্রানান্তকরভাবে। অদৃশ্য ভাইরাস দিয়ে আল্লাহ বিশ্ববাসীকে একটি সতর্ক বার্তা দিয়েছেন। বস্তুগত এবং প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা গ্রহণ ইসলামী বিধানের বিপরীত নয়। আল্লাহ বলেছেন, ‘‘আমি তোমাদের রোগ দিয়েছি এবং তার শেফাও দিয়েছি’’। চিকিৎসা পদ্ধতি অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে, তবে বিশ্বাস এবং আস্থা রাখতে হবে কেবলমাত্র আল্লাহর ওপর। আল্লাহর এই শাস্তি হতে বাঁচার জন্য অতীত পাপ কর্মের জন্য তারই কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে, তারই কাছে সাহায্য চাইতে হবে। আল্লাহ বিশ্বাবাসীকে এই গজব থেকে হেফাযত করবেন ইনশাআল্লাহ! পৃথিবীর মাটি হোক সবার জন্য উম্মুক্ত। আকাশের উদারতা, সমুদ্রের বিশালতা সবার জন্য উম্মুক্ত অবারিত হোক; মহান সৃষ্টি কর্তার কাছে এ কামনা করি।