কলকাতা পুরসভা আবার বাম-কংগ্রেস জোট? পিএসি নির্বাচন ঘিরে সেই প্রশ্নের সামনে আসছে

নিজস্ব সংবাদদাতা : কলকাতা পুরসভা আবার বাম-কংগ্রেস জোট? সম্প্রতি পুরসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি বা পিএসি নির্বাচন ঘিরে সেই প্রশ্নের সামনে আসছে। বাম ও কংগ্রেস কাউন্সিলররা একে অপরের সমর্থক হিসেবে আবেদন পত্র জমা দিলেন পুরসভায়। পাশাপাশি বসে বাম কংগ্রেস কাউন্সিলররা পিএসসি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সলতে পাকালেন।
কলকাতা পুরসভায় এখন কোনও স্বীকৃত বিরোধী দল নেই। রীতি অনুযায়ী, পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি বা পিএসি’র চেয়ারম্যান পদ বিরোধীদের দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে কলকাতা পুরসভায় শেষ পর্যন্ত কি হবে? পুরসভায় সংখ্যাগুরু কাউন্সিলরের সংখ্যা থাকা সত্ত্বেও বিরোধী বিজেপি নয়, বামেদের হাতেই পিএসি’র চেয়ারম্যান পদ ছাড়তে চায় তৃণমূল কংগ্রেস। শুরু হয়েছে নির্বাচন প্রক্রিয়া।পুর-সচিবালয় বিজ্ঞপ্তি জারি করে চেয়ারম্যানসহ পিএসি’র সাত সদস্যের জন্য মনোনয়ন চেয়েছে। আগামী ২রা জুন বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলবে মনোনয়ন জমার প্রক্রিয়া। ৩রা জুন শুক্রবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। ৬ই জুন হবে স্ক্রুটিনি। সাত জনের বেশি কেউ মনোনয়নপত্র জমা করলে, পুরসভার আগামী অধিবেশনে হবে নির্বাচন। আর তা না হলে ওই দিন পিএসি’র সদস্যদের পাশাপাশি ঘোষণা হবে চেয়ারম্যানের নামও।কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, ৯২ নম্বর ওয়ার্ডের বাম কাউন্সিলার মধুছন্দা দেবকে ব্যক্তিগত স্তরে প্রথমে এই পদ অফার করা হয়। তৃণমূলের একাধিক পুর প্রতিনিধি তাঁকে বার্তা পাঠিয়ে মনোভাব বোঝার চেষ্টা করেন। মধুছন্দাদেবীও নিমরাজি নন। তবে তিনি বলেন, এটা আমার ব্যক্তিগত বিষয় নয়। নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে আগে দলের কাছে আবেদন জানাতে হবে। দোলের নির্দেশ ছাড়া ব্যক্তিগতভাবে আমার রাজি হওয়া না হওয়ায় কিছু যায় আসে না। অবশেষে চেয়ারম্যান পদে তিনি মনোনয়নপত্র জমা করেছেন।
কলকাতা পুরসভার নিয়ম অনুযায়ী, পুরসভায় বিরোধী দলের তকমা পেতে গেলে অঙ্কের বিচারে অন্তত ১৫টি আসন পেতে হয়। বর্তমানে পুরভোটে বাম, বিজেপি, কংগ্রেস ও নির্দল মিলিয়ে মাত্র ১০ জন বিরোধী কাউন্সিলার রয়েছেন। ফলে, পিএসি’র চেয়ারম্যান কে হবেন তা শাসক দল বা ট্রেজারি বেঞ্চের ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর তা অনেকটাই নির্ভর করছে।
এখানেই রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে কলকাতা পুরসভার অন্দরে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। শাসক দলের এক বর্ষীয়ান কাউন্সিলর এর মতে, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিজেপির কাউকে পিএস’র চেয়ারম্যান করা হলে, সেটা নিয়ে তৃণমূল-বিজেপি ‘সন্ধি’র বার্তা যেতে পারে। সেই জায়গা থেকে বিজেপির তুলনায় বামেরা, ঘাসফুল শিবিরের কাছে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য। তৃণমূলের একাধিক কাউন্সিলার পিএসি’র চেয়ারম্যান পদ পেতে আগ্রহী থাকলেও, এই পর্বে তাঁদের ব্রাত্যই রাখা হচ্ছে বলেই দলীয় সূত্রে খবর।অন্যদিকে, এই নির্বাচন ঘিরে ফের একবার জোট বেঁধেছে বাম-কংগ্রেস। মনোনয়ন জমা করতে প্রস্তাবক হিসেবে দু’জনের স্বাক্ষর প্রয়োজন হয়। বর্তমানে পুরবোর্ডে বাম এবং কংগ্রেসের দু’জন করেই কাউন্সিলার রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে শত মতবিরোধ থাকলেও, প্রয়োজনের তাগিদে দু’দল হাত মিলিয়েছে। মধুছন্দা দেবের মনোনয়নপত্রে দ্বিতীয় প্রস্তাবক হিসেবে স্বাক্ষর করেছেন কংগ্রেসের ওয়াসিম আনসারি। তিনি কলকাতা পুরসভায় কংগ্রেস কাউন্সিলর। অন্যদিকে, কমিটির সদস্য হিসেবে সন্তোষ পাঠকের মনোনয়নপত্রে দ্বিতীয় প্রস্তাবক হিসেবে স্বাক্ষর করেছেন মধুছন্দাদেবী নিজেই। সেই জোটের ভিত্তিতেই পিএসসি’র চেয়ারম্যান পদ পেতে চলেছে বামেরা।বিজেপি কাউন্সিলার সজল ঘোষ অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। তিনি বলেন, সিপিএম-কংগ্রেস জোট করে কী করবে, সেটা তাঁদের মতাদর্শ কিংবা আদর্শচ্যুতির ব্যাপার। আমার কিছু বলার নেই। তবে এই পদ বিজেপির পাওয়া উচিত ছিল