|
---|
সালমান হেলাল : কৃষ্ণনগরের সাংস্কৃতিক সংস্থা সুজন বাসরের উদ্যোগে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের বসবাসের স্মৃতি-বিজড়িত হেরিটেজ ভবন গ্রেস কটেজে অনুষ্ঠিত হলো কবির ৪৯তম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন অনুষ্ঠান। ১৯২৬ থেকে ১৯২৮ — প্রায় আড়াই বছর এই বাড়িতে সপরিবার কবি বসবাস করেন। এই বাড়িতেই পুত্র বুলবুলের জন্ম। এই বাড়িতেই বাংলা সঙ্গীতে যুগান্তকারী গজল গানের সৃষ্টি। দারিদ্র্য, খালেদ এর মতো বিখ্যাত কবিতা ছাড়াও এই পটভূমিতেই রচিত হয় তাঁর বিখ্যাত ‘মৃত্যক্ষুধা’ উপন্যাস। আনুষ্ঠানিক সূচনায় কবির অবক্ষ মূর্তিতে মাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন কলকাতার বাকচর্চা প্রকাশনার কর্ণধার মুহাম্মদ হেলালউদ্দিন। অনুষ্ঠান মঞ্চে প্রতিকৃতিতে মাল্য অর্পণ করেন সংগীতশিল্পী শঙ্খশুভ্র সরকার এবং প্রীতিকণা জোয়ারদার। স্বাগত বক্তব্যে সুজন বাসরের পক্ষে রতন কুমার নাথ জানান যে জন্মদিন ও প্রয়াণ দিবসে প্রতি বছরই কৃষ্ণনগরের সাংস্কৃতিক মানুষজন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এই গ্রেস কটেজে উপস্থিত হয়ে কথা কবিতা ও গানে কবির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে থাকেন। এই প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে আগামী রবিবার আয়োজিত হবে নজরুল সংগীত প্রশিক্ষণের একটি কর্মশালা। পরিচালনা করবেন কলকাতার অগ্নিবীণা সংস্থার সংগীত শিল্পীগণ। এছাড়া সুজন বাসর ও অগ্নিবীণার যৌথ নিবেদনে ঐদিন বিকেলে একটি নজরুল স্মরণ-সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়েছে।
কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ১৯২৬ সালে সপরিবার হুগলি থেকে কৃষ্ণনগরে নিয়ে এসেছিলেন বিপ্লবী হেমন্তকুমার সরকার। সেই সময় কবি কৃষ্ণনগরের গোয়াড়ি এলাকায় গোলাপটটি অঞ্চলে হেমন্তকুমার সরকারের পৈতৃক যে বাসভবনে বসবাস করেছিলেন সেই স্থানে তাঁদের দুইজনের স্মৃতিতে একটি স্মৃতিফলক বসানোর পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে বলে তিনি জানান। অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন বীথিকা মল্লিক, প্রীতিকণা জোয়ারদার, তাপস কুমার মোদক, শঙ্খশুভ্র সরকার, দীপঙ্কর দাস, নিবেদিতা সরকার, চুমকি বিশ্বাস, স্বপ্না মজুমদার, হৃত্বীশ বৈরাগ্য, অমৃতা মজুমদার, রুদ্রজ্যোতি মন্ডল প্রমূখ। কোরাসে সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করেন শোভনা দাস, রাজিফা খাতুন, রুমা দত্ত প্রমুখ। তবলায় সঙ্গত করেন প্রেমানন্দ বসাক। একক কবিতা পাঠ করেন জয়িতা সাহা ও অশোক মজুমদার। এছাড়া সুকৃতি ঘোষের পরিচালনায় ‘কবিতাঘর’ আবৃত্তি সংস্থার পক্ষ থেকে কবিতা কলেজ পরিবেশন করে সমৃদ্ধি পাল, অদ্রিশ বিশ্বাস, শ্রীজিতা বিশ্বাস ও রিয়া ব্যানার্জি দে।
মুখ্য অতিথির বক্তব্যে মুহাম্মদ হেলালউদ্দিন দুঃখপ্রকাশ করেন যে বাইরে থেকে কৃষ্ণনগর স্টেশনে আসার পর কোনও পথচারী বা টোটোওয়ালা গ্রেস কটেজ কোথায় বললে চিনতে পারে না। বিদ্যুৎ অফিসের সামনের রাস্তায় স্মারক চিহ্ন জাতীয় অন্তত একটা কোনও বোর্ড লাগানো থাকা খুবই দরকারি। এতে শহরের মানুষও জানতে ও চিনতে পারবে গ্রেস কটেজের মতো গুরুত্বপূর্ণ হেরিটেজ ভবন কোথায় অবস্থিত। প্রশাসনিক বা পৌর সহায়তা, কিংবা নিজস্ব উদ্যোগে হলেও এই ব্যবস্থাটি যথাশীঘ্র নেওয়া দরকার বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সামগ্রিকভাবে অনুষ্ঠানটি পৌরোহিত্য করেন সভাপতি দীপঙ্কর দাস। সঞ্চালনা করেন সম্পাদক ইনাস উদ্দীন।