লকডাউন কেড়েছে উত্তর বয়ারগদীর মৃৎশিল্পীদের রুজি, কাজ হারিয়ে সপ্ন বুনতে ব‍্যস্ত সকলেই

নবাব মল্লিক, রায়দিঘী: মথুরাপুর ২ নং ব্লকের উত্তর বয়ারগদী একটি ছোট্ট গ্রাম। গ্রামের এক কোণায় বাস ২৫-৩০ ঘর কুমোর পরিবারের। বাচ্চা-থেকে বুড়ো মেরেকেটে ১০০ জনের বাস সেখানে। গ্রামের সকলেই মাটির কাজে সিদ্ধহস্ত। এ গ্রামের শিশুরাও কাদা মাটি মেখে দেয় বাবা-মায়ের কাজের সাহায্যের জন‍্য‌। বয়স্ক মহিলারা হাত লাগান মালসা তৈরীতে। কিশোর-থেকে যুবক যুবতী সকলেই এখানে মৃতশিল্পের সঙ্গে যুক্ত। গ্রামের যারা প্রবীণ এবং মাটির কাজে যারা একটু পরিপক্ক তারা আবার আলঙ্কারিক মৃতশিল্পের সঙ্গে যুক্ত। তারা কাজ করেন টেরাকোটা শিল্পের উপর। সবমিলিয়ে হইহই করে কেটে যাচ্ছিল তাদের দিন। কিন্তু সেই সুখের দিন আর বেশিদিন রইল না তাদের। লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পর থেকে কমতে শুরু করে তাদের তৈরীকৃত মালের চাহিদা। এক এক করে বাতিল হতে থাকে কলকাতা সহ বাইরে থেকে আসা সমস্ত অর্ডার। খুব কম পরিমাণে স্থানীয় ভাবে বিক্রি হতে থাকে মালসা, খুলি এবং আরও অন‍্যান‍্য জিনিসপত্র। এভাবেই চোখের সামনে থেকে চলে যায় তিন-চার মাস। কাজ হারিয়ে ধুকতে থাকেন সদা হাসিমুখে মাটি নিয়ে কাজ করা মৃৎশিল্পীরা। কিন্তু এরপর আরও দু:সপ্ন যে দেখতে হবে তাদের তা কেউই কল্পনা করতে পারেননি তারা। হঠাৎ করে তারা জানতে পারেন আম্ফান ঝড় আসতে চলেছে সুন্দরবনে। কোনও কিছু না ভেবে তাদের উঠতে হয় স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলে। ঝড় শেষে বাড়ি ফিরে দেখেন তাদের নিজের হাতে যত্ন করে গড়ে তোলা মাটির বিভিন্ন জিনিসপত্র ভেঙে চুরমার। সেই সাথে মাটির তৈরী জিনিসপত্র পোড়ানোর জায়গা আগুন ঘরও ক্ষতিগ্রস্ত। তারপর থেকে এখনও তারা ঘুরে দাড়াতে পারেননি। তৈরী করতে পারেননি আগুন ঘরও। বিমর্ষ হয়ে স্থানীয় এক বাসিন্দা গৌতম পালের আক্ষেপ এই কাজই তাদের জীবণ, এই কাজ ছাড়া তারা আর বিকল্প জীবাকাকে কীভাবে আকড়ে ধরবেন। পারবেন কি আর নতুন কাজ করতে। এই প্রশ্ন তুলে সরকারি সাহায্যের আবেদন করে আবার সোনালী দিন যাপনের স্বপ্ন দেখছেন তারা।