‘মৃত্যুর পরেও প্রাপ্য সম্মানটুকু পাননি ওই তরুণী’,স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করল এলাহাবাদ হাইকোর্টের লখনউ বেঞ্চ

‘মৃত্যুর পরেও প্রাপ্য সম্মানটুকু পাননি ওই তরুণী’,স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করল এলাহাবাদ হাইকোর্টের লখনউ বেঞ্চ

     

    নতুন গতি ওয়েব ডেস্ক: হাথরসের দলিত তরুণী ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় বৃহস্পতিবার স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করল এলাহাবাদ হাইকোর্টের লখনউ বেঞ্চ। যোগী আদিত্যনাথ সরকারের শীর্ষ কর্তাদের আদালতে সমন করা হয়েছে। আদালত সূত্রে খবর, হাথরসের বছর উনিশের তরুণীর ধর্ষণ-খুন, এবং তার পর, রাজ্য প্রশাসন যে ভাবে মৃতের পরিবারকে আটকে রেখে তড়িঘড়ি মৃত তরুণীর সত্‍‌কার করেছে, তাতে মর্মাহত এলাহাবাবাদ হাইকোর্ট। সেই সূত্রেই হাইকোর্টের লখনউ বেঞ্চ এদিন সুয়ো মোটো মামলা দায়ের করে।

     

    এলাহাবাদ হাইকোর্টের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বিচারপতি রঞ্জন রায় ও বিচারপতি জশপ্রীত সিংয়ের বেঞ্চ উত্তরপ্রদেশের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং অতিরিক্ত ডিজিকে সমন পাঠিয়েছে। ১২ অক্টোবর আদালতে উপস্থিত থেকে তাঁদের গোটা ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

     

    এ ছাড়া হাথরসের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও সিনিয়র পুলিশ সুপারকেও সুয়ো মোটো মামলায় ওই দিন আদালতে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। হাথরসের জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তিনি ওই দলিত তরুণীর পরিবারকে বয়ান বদলের জন্য চাপ দিচ্ছেন। যোগীর পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের তাঁদের বক্তব্যের সপক্ষে সমস্ত তথ্যপ্রমাণাদি-সহ হাজির হতে বলেছে হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে তদন্তের অগ্রগতি সংক্রান্ত রিপোর্টও আদালতে আনতে বলা হয়েছে।

    কোর্ট সবথেকে বেশি মর্মাহত জোর করে ওই তরুণীর সত্‍‌কারের ঘটনায়। মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে পরিবারের অনুমতি ছাড়াই পুলিশের উপস্থিতিতে হাথরসের ধর্ষিতা তরুণীকে দাহ করা হয়। মৃতের পরিজনদের জোর করে ঘরে আটকে রাখার অভিযোগ ওঠে যোগীর পুলিশের বিরুদ্ধে। উত্তরপ্রদেশের পুলিশের কর্তারা যদিও দাবি করেন, পরিবারের সম্মতি নিয়েই সত্‍‌কার করা হয়েছে। তরুণীর পরিবার তা অস্বীকার করে।

     

    ১৪ সেপ্টেম্বর গণধর্ষণের শিকার হন হাথরাসের ওই দলিত তরুণী। উচ্চ শ্রেণির চার জনের বিরুদ্ধে তাঁকে ধর্ষণ করার অভিযোগ ওঠে। পৈশাচিক অত্যাচার চালায় ধর্ষকরা। ধর্ষণের পর তাঁকে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা হয়েছিল। তরুণীর মুখ বন্ধ করতে ধারালো অস্ত্রে জিভও কেটে নিয়েছিল ধর্ষকরা। ওই তরুণীকে যখন উদ্ধার করা হয়েছিল, সারা শরীরে ছিল আঘাতের চিহ্ন। রক্তে ভেসে যাচ্ছিল মুখ। উত্তরপ্রদেশের হাসপাতালেই তাঁর চিকিত্‍‌সা চলছিল। ২৮ সেপ্টেম্বর দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয়। পরদিন, ২৯ সেপ্টম্বর মারা যান হাথরসের ওই তরুণী। এর পরই যোগী প্রশাসন রাতের অন্ধকারে রাত আড়াইটে নাগাদ তড়িঘড়ি মৃত তরুণীর সত্‍‌কার করে।

     

    যোগী সরকার যে ভাবে জোর করে ওই তরুণীর দাহ করে, তা নিয়ে নানা মহল সোচ্চার হয়। কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী বলেন, ‘মৃত্যুর পরেও প্রাপ্য সম্মানটুকু পাননি ওই তরুণী। পরিবারের অনুপস্থিতিতে অনাথের মতো তাঁর সত্‍‌কার করা হয়েছে। এই ঘটনায় মানবিক অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে সোচ্চার হন দিল্লি মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সনও। আর এক কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী যোগীর বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেন, যোগী সরকার ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে।