মাদ্রাসায় ভুতুড়ে শিক্ষক নিয়োগের প্রতিবাদে রাস্তায় নামল বেঙ্গল মাদ্রাসা এডুকেশন ফোরাম।

এম.এ.সাত্তার, লবণহ্নদ : ৩১মে ২০২৫। মাদ্রাসায় ভুতুড়ে শিক্ষক নিয়োগের প্রতিবাদে বেঙ্গল মাদ্রাসা এডুকেশন ফোরাম গত ৩০ মে ২০২৫ । বিভিন্ন দাবির ভিত্তিতে বিকাশ ভবন থেকে মাওলানা আজাদ ভবন (মাদ্রাসা বোর্ড) পর্যন্ত নানা দাবি সম্বলিত প্লাকারড হাতে রাস্তায় পদযাত্রা করেন। দুই চব্বিশ পরগনা সহ মালদা, মুর্শিদাবাদ ,নদিয়া, বীরভূম ও অন্যান্য বহু দূর ,দূরান্তের জেলা থেকে আগত বহু শিক্ষক- শিক্ষিকারা এই মিছিলে পা মেলান এবং মাদ্রাসা বোর্ডের সামনে তারা বিক্ষোভ সমাবেশে জড়ো হন। সেখানে ফোরাম সভাপতি ইসরারুল হক মন্ডল সহ ফোরামের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ মাদ্রাসা বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ পূর্বক সুস্পষ্ট ,তথ্য নিষ্ঠ ,প্রাঞ্জল ভাষায় বলেন মাদ্রাসায় যদি ভুতুড়ে শিক্ষকদের মধ্যে একজনের ও বেতন হয়, আগামী দিনে এই মাদ্রাসা সিস্টেমটাই হয়তো উঠে যাবে একদিন। এমনইটাই আশঙ্কা প্রকাশ করেন ফোরাম সভাপতি। তিনি আক্ষেপের সুরে আরো বলেন মাদ্রাসায় যেমন ভুতুড়ে শিক্ষক রয়েছে ,তেমনি ভুতুড়ে মাদ্রাসাও রয়েছে ।এটা অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য ,হাস্যকর মনে হলেও এটাই বাস্তব। এদিন ফোরামের পক্ষ থেকে মাদ্রাসা বোর্ড এর সভাপতি ও বিকাশ ভবনে ডি এম ই কে ডেপুটেশনের মাধ্যমে উদ্ভূত পরিস্থিতির সবিস্তার লিখিতভাবে জানিয়ে প্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপের জোরালো দাবি জানানো হয়। ওই একই দাবির ভিত্তিতে এদিন হাওড়া জেলার ডব্লিউ বি টিএম টি এ -এর পক্ষ থেকে ,জমায়েত ক্ষীণ হলেও হাওড়া ডি আই অফিসে ডেপুটেশন দেওয়া হয়।

    উল্লেখ্য হাইকোর্টে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন বাতিল ঘোষণার পর রাজ্য সরকারের তরফে ২০১৬ সালে মাদ্রাসায় শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মী ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়।সে সময় মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন তথা মাদ্রাসা শিক্ষাকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে ইসরারুল হক মন্ডল এর নেতৃত্বে শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের সহায়তায় দীর্ঘ লড়াই ,আন্দোলনের পর সুপ্রিম কোর্টে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে ২০২০ সালে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন পুন: বহাল ও নিয়োগ ক্ষমতা ফিরে পায়। সুপ্রিম কোর্টের সেই অর্ডারে একটি লাইনে বলা হয় ২০১৬ থেকে ২০২০ পর্যন্ত যারা বৈধভাবে নিয়ম রীতি মেনে কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ হয়েছে, তারা বেতন পাবে। ওই একটি লাইনে আইনি ফাঁক গলে সম্পূর্ণ অবৈধ উপায়ে, যাদেরকে ভুতুড়ে শিক্ষক বলা হচ্ছে ,তারা আবু সোহেলের মতো মানুষজনের নেতৃত্বে বারবার সুপ্রিম কোর্টে তাদের বেতনের স্বপক্ষে অপচেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় । সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ভুতুড়ে শিক্ষকদের সমস্ত ডকুমেন্টস ভেরিফিকেশন করা হয়। সেখানেও তারা কোনও বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি, এমনকি অনেকে শুনানিতে ও হাজির হননি। কিন্তু তাদের এই অপকর্মের বিরুদ্ধে মাদ্রাসা বোর্ড বা ডি এম ই এর পক্ষ থেকে কোনও আইনি পদক্ষেপ তথা এফ আই আর দায়ের করা হয়নি। ফলে তারা তাদের অপকর্ম থেকে না দমে, নূতন উদ্যোমে আবার বেতনের জন্য সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। ওইসব ভুতুড়ে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকারের তরফে তেমন জোরালো দাবি তোলা হয়নি ,ফলে সুপ্রিম কোর্ট তাদের (ভুতুড়ে শিক্ষকদের) বেতন দেওয়ার নির্দেশ দেয়। বেঙ্গল মাদ্রাসা এডুকেশন ফোরাম নেতৃবৃন্দ এই অনাকাঙ্খিত, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মাদ্রাসা শিক্ষার ইতিহাসে এক অশুভ আঁতাত ও অশনি সংকেত দেখছে।