|
---|
মোঃ নাওয়াজ শরীফ, নতুন গতি, মালদা: মনে পড়ে ভােটের আগের কথা? তখন সবে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলি থেকে একুশের ভােটের ওয়ার্ম আপ শুরু করেছেন দিদি। মালদার সভায় দাঁড়িয়ে দিদি বলেছিলেন, “কী মালদার মা ও বােনেরা, এবার আমায় ফজলি আম খাওয়াবেন তাে? ভাল হিমসাগর দেবেন তাে ?”
একুশের ভােটের ফলপ্রকাশের পর দেখা গেল, মালদার জনগণ দিদিকে পাত সাজিয়ে আম দিয়েছেন। এবার তৃণমূল ঝরে ধুলিস্যাৎ কংগ্রেসের দুর্গ বলে পরিচিত মালদা। ১২টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৮টি বিধানসভা কেন্দ্রে জয়ী হয়েছে তৃণমূল। বাকি চারটি দখল করল বিজেপি। জেতা আসনগুলিও হারালেন কংগ্রেস বিধায়করা। আসন বাড়ল তৃণমূলের। অন্যদিকে বিজেপির আসন দুই থেকে বেড়ে দাঁড়াল চার। জেলার ১২টি আসনের মধ্যে চাঁচল, মালতিপুর, মানিকচক , রতুয়া, হরিশ্চন্দ্রপুর, মােথাবাড়ি, সুজাপুর, এবং বৈষ্ণবনগর বিধানসভা কেন্দ্রে ক্ষমতা দখল করল তৃণমূল। অন্যদিকে ইংরেজবাজার, পুরাতন মালদা, গাজোল এবং হবিবপুর বিধানসভা কেন্দ্রে ক্ষমতা দখল করেছে বিজেপি।
জেলার বারােটি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে সকলের নজর ছিল ইংরেজবাজার বিধানসভা কেন্দ্রের দিকে। হাড্ডাহাডিড লড়াইয়ের পর শেষমেষ হেভিওয়েট তৃণমূল প্রার্থী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীকে প্রায় ২২ হাজার ভােটে হারিয়ে জয়ী হন বিজেপি প্রার্থী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী। অন্যদিকে চাঁচল বিধানসভা কেন্দ্রে প্রায় ৫০ হাজার ভােটে বিজেপি প্রার্থী দীপংকর রামকে হারিয়ে জয়ী হলেন তৃণমূল প্রার্থী নিহাররঞ্জন ঘােষ। এর আগে ইংরেজবাজার বিধানসভা কেন্দ্রে বাম-কংগ্রেস সমর্থিত নির্দল হয়ে ভােটে দাঁড়িয়ে জয়ী হয়েছিলেন তিনি।
অন্যদিকে মানিকচক বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসা মালদা জেলা পরিষদের সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডলকে প্রার্থী করা হয়েছিল। গণনার প্রথম থেকেই এই কেন্দ্রে এগিয়ে ছিলেন বিজেপি প্রার্থী গৌরচন্দ্র মণ্ডল। কিন্তু শেষ কয়েক রাউন্ডে এগিয়ে যান তৃণমূল প্রার্থী তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র। অন্যদিকে মােথাবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রে জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থী সাবিনা ইয়াসমিন। সুজাপুর কেন্দ্রে জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থী আব্দুল গনি। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট বলছে, সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন সুজাপুরের তৃণমূলের প্রার্থী আব্দুল গনি।
তিনি ১ লক্ষ ৩০ হাজার ১৬৩ ভোটে জয়ী হয়েছেন। বৈষ্ণবনগর বিধানসভা কেন্দ্রে গতবারের বিজেপি প্রার্থী স্বাধীন সরকারকে হারিয়ে প্রায় ২৪০০ ভােটে জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থী চন্দনা সরকার। মালদা বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী উজ্জ্বল চৌধুরীকে হারিয়ে জয়ী হন বিজেপি প্রার্থী গােপাল সাহা। হবিবপুর বিধানসভা কেন্দ্রে জয়ী হন বিজেপি প্রার্থী জুয়েল মুমু। রতুয়ায় জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থী সমর মুখার্জি। মালতিপুর বিধানসভা কেন্দ্রের জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থী রহিম বক্সি এবং হরিশ্চন্দ্রপুর বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী তাজুল হােসেন। গাজোল বিধানসভা কেন্দ্রে হাড্ডাহাডিড লড়াই করে শেষ রাউন্ডে তৃণমূল প্রার্থী বাসন্তী বর্মনকে হারিয়ে জয়ী হন বিজেপি প্রার্থী চিন্ময় সিনা।
জয়ী তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীরা জানান, এই জয় উন্নয়নের জয়। মা মাটি মানুষের জয়। তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় আসতে চলেছে তৃণমূল, সেই ইঙ্গিত আগেই দিয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমাে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার দিদির স্বপ্নপূরণ করে আটটি আসন উপহার দিলেন তাঁরা।