মানসিক ভারসাম‍্যহীন ছেলের চিকিৎসার জন‍্য নেতাদের দুয়ারে দুয়ারে গেলেও মেলেনি সাহায্য , মালদার চাঁচলের ওই পরিবারের দুর্দশায় হতবাক মালদাবাসী

মানসিক ভারসাম‍্যহীন ছেলের চিকিৎসার জন‍্য নেতাদের দুয়ারে দুয়ারে গেলেও মেলেনি সাহায্য , মালদার চাঁচলের ওই পরিবারের দুর্দশায় হতবাক মালদাবাসী

    নতুন গতি, চাঁচল:  এক ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে ঘরবন্দী হয়ে থাকে। আরেক ছেলে বিয়ে করে পৃথক হয়েছে,তবে শারীরিক দুর্বলতার কারনে কাজ করতে পারেনা দৈনন্দিন। বড়ো মেয়ের স্বামী মারা যাওয়ায় এখন বাপের বাড়িতেই পাঁচ বছরের পুত্র সন্তান নিয়ে দিনযাপন করেছে রাজেকা বেওয়া। পাঁচজন সদস‍্যের পরিবারের উপার্জনশীল ব‍্যক্তি কেউ নেই। ওই পরিবারের দুর্দশায় হতবাক গোটা গ্রাম।
    মালদহের চাঁচল-১ নং ব্লকের কলিগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ডারাকিনারা গ্রামে ওই পরিবারের বাস।পরিবারে সুস্থ একমাত্র বয়স্কা মা সাবেরা বেওয়া ও বিধবা মেয়ে রাজেকা বেওয়া। সাবেরা বেওয়ার ছোটো ছেলে রেজাউল করিম একবছর ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন। এক ছেলে শারীরিক দুর্বলতায় ভুগছে। মানসিক ভারসাম‍্যহীন ছেলের চিকিৎসা করার টাকা পরিবারের হাতে নেই। মা সাবেরা বেওয়া বলেন, গ্রামে গ্রামে সাহায্য চেয়ে সংসার চালাই এবং মরসুম অনুযায়ী ধান সহ অন‍্যান‍্য ফসল অন‍্যের জমিতে কেটে দিন চলে। ছেলের চিকিৎসার টাকা কোথায় পাব।এর আগে সঞ্চিত অর্থ যা ছিল তা দিয়ে রায়গঞ্জ, মালদা, বহরমপুরে নিয়ে গেলেও সুস্থ হয়নি ছেলে।আবার সেই একইরকম হয়ে আছে। মানসিক পাঁচ মাস হলো ভারস‍াম‍্যহীন রেজাউলের বাবা মুস্তাক আলমের কিডনি বিকল হওয়ায় আর্থিক অনটনে চিকিৎসার অভাবে মারা গেছে। মানসিক ভারসাম‍্য ছেলেকে কিভাবে সুস্থ করবে বিপাকে সাবেরা বেওয়া। ছেলেকে সুস্থ করার জন‍্য স্থানীয় নেতাদের কাছে হাত পাতলেও মেলেনি সাহায্য বলে অভিযোগ। অভিযোগ ভোটের সময় ভোট চাইতে আসে।এলাকায় নেতা অনেক দেখা যায়। কিন্তু এগিয়ে আসেনা সাহায্যের জন‍্য বলে আক্ষেপ ওই পরিবারের। ছেলের চিকিৎসার জন‍্য সরকার, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহ রাজনৈতিক জনপ্রতিনিধিদের কাজে আবেদন করছেন তিনি।
    কেউ তো দিন আনে না,তবে নুন খায় ওই পরিবারের অথৈ জল অবস্থা দেখে বিমর্ষ গোটা ডারকিনারা গ্রাম।কেউ কেউ কোনোদিন বাজার খরচ দিয়ে যায়। তবেই উনুনে চড়ে ভাতের হাড়ি।তার মধ‍্যে এক ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীণতার যন্ত্রণা। ফলে বিপর্যস্ত গোটা পরিবার।

    গ্রামের বাসিন্দা মানিক হোসেন জানান, একাকালীন এই পরিবারের গৃহকর্তা মোস্তাক আলম ইট ভাটায় কাজ করে সংসার চালাতেন। বিগত পাঁচমাস আগে তিনি মারা গেছেন।এবং এক ছেলে মানসিক ভারসাম‍্যহীন অপরদিকে এক বিধবা মেয়ে বাপের বাড়িতে ঠাই নিয়েছেন। তাদের রোজগার করার মতো কেউ নেই। মানসিক ভারসাম‍্য ছেলের চিকিৎসার সাহায্যের জন‍্য শাসক-বিরোধী নেতাদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন।কিন্তু কেউ এগিয়ে আসছেন না। আর ভোটের সময় শাসক -বিরোধী দলের নেতাদের ঢল পড়ে যায় বাড়ি বাড়ি।তিনি দাবী করে বলেন, এই অসহায় পরিবারটির পাশে যেন রাজনৈতিক নেতারা দাড়াতে সচল হন।

    এই ঘটনার খবর শুনে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন মালদা জেলা বিজেপি কমিটির সম্পাদক দীপঙ্কর রাম। তিনি বলেন, ভারতীয় জনতা পার্টি সব জায়গায় অসহায় দুর্দশার খবর শুনে ছুটে যায়। ওখানেই গিয়ে বিষয়টি তদারকি করে সাহায্য করব। তবে তিনি শাসকদলকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন, একটি পরিবারের এই অসহায় অবস্থা তারপরেও স্বামী মারা যাওয়ার পাঁচ মাস অতিবাহিত হলেও মেলেনি সমব‍্যাথী প্রকল্পের টাকা। দুর্গতরা প্রয়োজনের সময় তাদের প্রকল্প ভুক্ত হয়না। এর ফল ইভিএমেই মিলবে বলে শাসকদলকে তোপ তাগেন তিনি।

    এই ঘটনার খবর শুনে মালদা জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক সামিউল ইসলাম বলেন, আমরা পরিবারের সাথে দেখা করব। এবং মানসিক ভারসাম‍্যহীন ছেলেটির কোথায় চিকিৎসা করা যায় সেটা নিয়ে ভাবা হবে।পরিবারটি কোনো সরকারি প্রকল্প থেকে বঞ্চিত থাকলে বিষয়টি নিয়ে বিডিও-র সাথে আলোচনা করব। ১০ বছর ধরে তৃণমূল সরকার মানুষের পাশে রয়েছে আর থাকবে। এই মানবিক সরকার তৃতীয় বারের জন‍্য নবান্নে যাচ্ছেন বলে আশাবাদী তিনি।বিজেপির কোনো অস্তিত্ব থাকবে না রাজ‍্যে বলে তিনি দাবি করেছেন।
    তবে গ্রামের বাসিন্দাদের কয়েকজন বললেন, কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বা সরকারি সাহায্য পেলে ওই পরিবারের খুবই উপকার হবে।অন্ততপক্ষে চিকিৎসা ও খাবারের ব্যবস্থা তো হবে পরিবারটির।