|
---|
খান আরশাদ, বীরভূম — মমতা ব্যানার্জি ও বীরভূমের তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের সখ্যতা রাজনৈতিক মহলে সর্বজনবিদিত। বৃহস্পতিবার বীরভূমের সিউড়ির সভামঞ্চ থেকে আবারও মমতা প্রীয় কেষ্টকে বাঘের বাচ্চার মত লড়াই করে যেতে বললেন বিরোধীদের সাথে। সভা শুরুর পরপরই মমতা সভামঞ্চ থেকে বিধানসভা উপ-নির্বাচনের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করলেন। হাবিবপুরে অমল কিস্কু, ইসলামপুরে আব্দুল করিম,দার্জিলিংএ বিনয় তামাং এবং ভাটপাড়ায় মদন মিত্রের নাম ঘোষণা করলেন। এরপর তিনি মোদিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন এবং তৃণমূলের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরলেন। মমতা মোদীকে উদ্দেশ্য করে বলেন আপনি কি চোখে দেখতে পান না? কানে শুনতে পান না? বলেন আমি আপনাকে চ্যালেঞ্জ করছি। আমি ঠিক বলছি কি না? এরপর একেp একে বীরভূমে তৃণমূল কি কি কাজ করেছে তা তুলে ধরে বলেন সিউরি, রামপুরহাট ও বোলপুরে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল হয়েছে। অজয় নদী ও শাল নদীতে সেতু তৈরি হয়েছে।
দেড়শ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হয়েছে রাস্তাঘাট। দু টাকা কিলো দরে চাল দেওয়া হচ্ছে। কন্যাশ্রী প্রকল্পে সাইকেল দেওয়া হয়েছে। মমতা বলেন মোদী এখানে সভা করে আমাকে গুন্ডা বলেছে নাকি। মোদীকে বলেন আমি যদি গুন্ডা হই তাহলে আপনি কি? গুজরাট দাঙ্গা কে লাগিয়েছে? গোধরা দাঙ্গা কে লাগিয়েছে? আসলে পাগলা কুকুরে কামড়ালে যেমন জলাতঙ্ক রোগ হয়। তেমনি মোদী ভয়াতঙ্কে ভুগছে, হারাতঙ্কে ভুগছে। মোদী ভয় পেয়ে গেছে। এখন বারবার বাংলায় আসছে কেন? কারণ ভয় পেয়েছে। অন্য সময় আসে না। বর্ষায় আসে না, খরাতে আসে না। বাংলার মাটি কখনো ভয় পায় না। বাংলার মাটি খুব শক্ত মাটি। আগামী দিনে বিজেপি কে হঠাতে হবে। বাংলার মাটিতে দাঙ্গা বরদাস্ত করা হবে না। এখানে সবাই একসাথে থাকবে। মমতা উদাহরণ টেনে বলেন দেখুন তো আমি এখানে দাঁড়িয়ে আছি। আমার দুটো হাত আছে,দুটো পা আছে, দুটো চোখ আছে,দুটো কান আছে, সব নিয়ে তো আমি একটা সাধারণ মানুষ। আমাকে যদি আধাআধি কেটে দেন তাহলে আমি কি মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকবো? তাই আমরা এখানে সবাই একসঙ্গে থাকতে চাই। আমরা একসঙ্গেই থাকব। এখানে মা-বোনেরা কেউ লাল শাড়ি, কেউ সবুজ, কেউ হলুদ শাড়ী পড়ে এসেছেন। একেই তো বলে ‘কালারে কালা ফুল’। তেমনি আমাদের হিন্দু, মুসলিম, শিখ সবাইকে নিয়েই থাকতে হবে, চলতে হবে। আমরা মা দুর্গার পুজো যেমন করি, আমরা কালি পুজোও তেমনি করি আমি। এই শিক্ষা পায়নি যে আমি হিন্দু বলে অন্য ধর্মকে সম্মান করব না। আমি যখন রমজান মাসে ইফতারের অনুষ্ঠানে যাই, ঈদের সময় যাই, তখন আমিও বলি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’। বিজেপি ভোট টানতে টাকা বিলি করছে। আপনাদের বলি যদি কেউ আপনাদের মুড়ি খেতে দেয় তো মুড়ি টা খেয়ে নেবেন আর বাটিটা উল্টে দেবেন। আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন আমি কি বলতে চাইছি। ভোট টা বিজেপিকে দেবেন না। মমতা ঘোষণা করেন রাজ্যে সাড়ে সাত কোটি মহিলাকে 5 লক্ষ টাকার স্বাস্থ্য-সাথী কার্ড করে দেওয়া হবে। যাতে তারা বিনামূল্যে চিকিৎসা করাতে পারবেন। মোদিকে কটাক্ষ করে বলেন চৌকিদার চোর হ্যায়। শুধু তাই নয় উপস্থিত তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের মুখ থেকেও চোর চোর আওয়াজ তুলিয়ে সভা সরগরম করে তুললেন।নোটবন্দির প্রসঙ্গ তুলে মমতা বলেন নোট বন্দি করে মোদি নোট পাল্টাতে চেয়েছেন। আর আপনাদেরও বলি এবার মোদিকে পাল্টান। সবার শেষে শেষ হওয়ার মূহূর্তেই শতাব্দী রায় ও অসিত মাল কে নিয়ে সবার কাছে ভোট প্রার্থনা করেন। মহিলাদের শঙ্খ ধ্বনি ও উলু দিতেও বলেন। সভা শেষের আগে অনুব্রতকে বলেন তোমার পিছনে বিজেপিরা লাগবে। ভয় পাবে না। বাঘের বাচ্চার মত লড়বে। আর বিজেপির দালালদের চিনে রাখো।পরে কাজে লাগবে। অনুব্রত মণ্ডল হামেশাই বিরোধীদের হুমকি দিয়ে আসছেন। কখনো শলাকা, কখনো পাচনের বাড়ি, কখনো বা মেরে হাত-পা ভেঙ্গে দেওয়ার নিদান দিয়েছেন। এদিন স্বয়ং মমতা প্রকাশ্য সভামঞ্চে অনুব্রত ওর্ফে কেষ্টকে বিজেপির বিরুদ্ধে বাঘের বাচ্চার মত লড়তে বললেন। রাজনৈতিক মহলের ধারণা এবার অনুব্রত ফের নুতন কিছু নিদান দেবেন। তিনি তাঁর অনুচরদের কি নিদান দেন সেটাই দেখতে উৎসুক হয়ে থাকবে বীরভূমের মানুষ।এর পর মমতা দূর্গাপুরে প্রকাশ্য জনসভা ও রোড-শো করেন। সঙ্গে ছিলেন তৃনমূল প্রার্থী মমতাজ সঙ্ঘমিত্রা।