“চাল চেয়ে পাচ্ছেন না শান্তিপুরে অনেকে, কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ, আচমকা বিধায়কের বাড়িতে অসহায় মানুষের ভিড় “

“চাল চেয়ে পাচ্ছেন না শান্তিপুরে অনেকে, কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ, আচমকা বিধায়কের বাড়িতে অসহায় মানুষের ভিড় ”

    শরিফুল ইসলাম, নতুন গতি, শান্তিপুর: কোরোনার জেরে লক ডাউনে কাজ হারিয়ে প্রায় অনাহারে থাকা শান্তিপুরের বেশ কয়েকটি গ্রামাঞ্চলের পাশাপাশি, শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কয়েক হাজার দুঃস্থ অসহায় পরিবার গুলোর মধ্যে চাল-আলু ডাল, ও শিশুদের জন্য তরল দুধ বিলিবন্টনের কর্মসূচী নিয়েছেন বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্য সপ্তাখানেক ধরে শান্তিপুরে। জানা যায়, গ্রাম থেকে শহর, শহর থেকে গ্রাম দুঃস্থ মানুষদের পাশে থাকার সেই কর্মসূচী অংশ হিসাবে শুক্রবার, শান্তিপুর শহরের এক নম্বর নাগরিকের তেরো নম্বর ওয়ার্ডে ছিল বিধায়ক অরিন্দমের প্রান্তিক পরিবার গুলির মধ্যে চাল বিতরণ কর্মসূচী।

    সেই মতন কয়েকজন দলীয় কর্মীকে বলে রেখেছিলেন অরিন্দম। সাত সকালে তাঁরা বিধায়কের বাড়িতে এসেই প্রথম লক্ষ্য করেন বাড়ির দরজার দুই ধারে স্ত্রী-পুরুষের লম্বা জটলা। কথা বলে তৃণমূল কর্মীরা জানেন, বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে তাঁরা এসেছেন বিধায়কের বাড়ি থেকে চাল দেওয়া হবে তা সংগ্রহ করতে। এঁদের মধ্যে অনেকেই অভিযোগ করেন স্থানীয় কাউন্সিলর এর মাধ্যমে তাঁরা কোনো রকম সরকারি সহায়তা পান নি।
    তৃণমূল কর্মীরা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ গুলো কে বোঝানোর চেষ্টা করেন, এখন লক ডাউন চলছে। এক সঙ্গে এতো মানুষ কাছাকাছি থাকবেন না। আপনারা যে যাঁর ওয়ার্ডে থাকুন — বিধায়ক সেখানে গিয়ে আপনাদের সাহায্য করবেন। কিন্তু অসহায় মানুষ গুলো লাইনেই দাঁড়িয়ে থাকেন। ইতিমধ্যে খবর পৌঁছে যায় বিধায়কের কাছে। বিধায়ক অরিন্দম বাইরে বেরিয়ে অসহায় মানুষ গুলোর করুন মুখের দিকে চেয়ে সকল কে নমস্কার দিয়ে বলেন, আপনারা আমার বাড়ি এসেছেন, আমি নিশ্চই আপনাদের ফিরিয়ে দেবো না। ধর্য্য ধরুন। আমি ব্যবস্থা করছি। আপনারা অনুগ্রহ করে লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় পারস্পরিক দুরুত্ব বজায় রাখুন। অতঃপর তৃণমূলের স্বেচ্ছা সেবক কর্মীদের নির্দেশ দেন, আপাতত যা আছে, সেগুলো এঁদের মধ্যে বিতরণ করা হোক। এক ঘন্টা শেষ হতে না হতে কুইন্টাল কুইন্টাল চাল শেষ হয়ে যায়। অরিন্দম ভট্টাচার্য দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ গুলোকে আশ্বস্ত করে ঘরে গিয়ে আবার বেরিয়ে পড়েন, এবং শান্তিপুর পৌরসভার সামনে স্টেট্ ব্যাংকের এ টি এম কাউন্টার থেকে প্রায় লক্ষাধিক টাকা তুলে নিয়ে এসে তাঁর দরজার দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ গুলোর জন্য চাল কিনে নিয়ে এসে আবার বিলি করেন। অসহায় মানুষ গুলোর মুখে হাঁসি ফোটান।

    সিনেমায় পর্দায় দেখা রিল ফিল্মের মতন ঘটনা রিয়েল লাইফে দেখার সুযোগ যাঁদের ঘটে,— কিছু বুদ্ধিজীবী, সাধারণ মানুষ এবং খবর পেয়ে জমে যাওয়া সাংবাদিকদের মধ্যে আজকের আকস্মিক ঘটনা বেশ কয়েকটা প্রশ্ন তুলে দেয়।

    রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এই দুর্যোগ মোকাবিলায় দ্বর্থ্যহীন ভাষায় সরকার এবং দলে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন কাউকে অভুক্ত রাখা যাবেনা। এবং সেই নির্দেশ রাজ্যের সর্বত্র যখন পালিত হচ্ছে — সেখানে শান্তিপুর পৌরসভার অভ্যন্তরীন চব্বিশটি ওয়ার্ডে চাল নিয়ে এতো হাহাকার হবে কেন? প্রতিটি কাউন্সিলরদের ইতিমধ্যে পাঁচ কুইন্টল পাঠানো চাল তবে কোথায় গেল?
    স্থানীয় পৌরপ্রশাসন ঠিকমতন লক্ষ্য করছেন না বলেই কি জি আর – এর চাল, রেশনে বরাদ্দ চাল নিয়ে কি দুর্নীতি হচ্ছে?
    শান্তিপুর পৌরসভা অধীন ওয়ার্ড গুলোয় বসবাসকারী গরিব মানুষগুলোর ভাতের চাহিদা না মিটিয়ে সেই জনগণের ট্যাক্সের টাকা তড়িঘড়ি মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে পাঠানোর যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। কারো মতে, আগামী মাসেই পৌরসভার মেয়াদ ফুরিয়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিগণ গা ছেড়ে বসে আছেন।
    অনেকের মতে, বিধায়ক কে অপ্রস্তুতে ফেলতে অথবা, ধারাবাহিক কর্মসূচীর সফলতা কে ব্যর্থ করতে কেউ এই নোংরা খেলা করেছেন।
    শেষমেশ অবশ্য বাড়ি থেকে প্রায় দু হাজার পরিবারকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে চাল বিতরন করে অবস্থার সামাল দেন অরিন্দম। পরে, পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচী হিসাবে তেরো নম্বর ওয়ার্ডের রামকৃষ্ণ মাঠ এবং কাঁসারি পাড়ায় চারশো গরিব মানুষের মধ্যে চাল বিতরণ করেন বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্য্য।