|
---|
নতুন গতি নিউজ ডেস্ক: থেকে গেল শতাব্দীর সেরা গোল, ‘হ্যান্ড অফ গড’, অসংখ্য মন মাতানো ড্রিবল, ছোটোখাটো চেহারায় ডিফেন্ডারদের মাত দিয়ে অসংখ্য গোলের স্মৃতি। কিন্তু থাকলেন না সেইসব ইতিহাসের স্রষ্টা দিয়েগো মারাদোনা। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৬০ বছরে প্রয়াত হলেন বিশ্বের ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়।
মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ায় অস্ত্রোপচারের পর গত ১১ নভেম্বর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন। তবে বাড়ি যাওয়ার অনুমতি মেলেনি। মদ্যপান সংক্রান্ত সমস্যার কারণে সরাসরি তাঁকে বুয়েনস আয়ার্সের একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেই সময় গত সপ্তাহদুয়েক ধরে সেখানেই ছিলেন তিনি।
আর্জেন্তিনা সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, বুধবার হৃদরোগে আক্রান্ত হন মারাদোনা। খবর দেওয়া হয় হাসপাতালে। কিছুক্ষণের মধ্যেই অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছেও যায়। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ফুটবলের রাজপুত্র। সে কথা নিশ্চিত করেছেন তাঁর এজেন্ট মাতিয়াস মোরলা। অথচ সপ্তাহদুয়েক আগেই তিনি জানিয়েছিলেন, মারাদোনা ভালো ছিলেন। নিজের রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইচ্ছুক ছিলেন।
কিংবদন্তীর প্রয়াণে গভীরভাবে শোকপ্রকাশ করেছেন জাতীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ক্লদিও তাপিয়া। তিনি বলেন, ‘দিয়োগো আর্মান্দো মারাদোনা… আপনি সর্বদা আমাদের হৃদয়ে থাকবেন।’
ফুটবলের জীবন্ত কিংবদন্তি তিনি। তার প্রতিটি কথা ও কাজ শিরোনাম হয় সংবাদ মাধ্যমে। ফুটবলের ঈশ্বর নামেও পরিচিত। বলছিলাম ডিয়েগো ম্যারাডোনা ওরফে দিয়েগো মারাদোনার কথা। ১৯৬০ সালে আর্জেন্টিনায় জন্ম নেওয়া ম্যারাডোনার ৬০তম জন্মদিন আজ শুক্রবার। শুভ জন্মদিন ম্যারাডোনা।করোনা মহামারিতে কোয়ারেন্টাইনে থাকায় বিশেষ দিনটি একাই কাটাতে হচ্ছে ফুটবল মাঠের নব্বই মিনিটের জাদুকরকে।
আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেস প্রদেশের লানুস শহরের এক দরিদ্র পরিবারে ১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোবর জন্ম ম্যারাডোনার। বাবা-মায়ের তিন কন্যা সন্তানের পর জন্ম হওয়া ম্যারাডোনা বেড়ে ওঠেন ভিয়া ফিওরিতোতে। শৈশবেই ফুটবলের প্রেমে পড়েন তিনি। মাত্র আট বছর বয়সে আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সের যুব দলে যোগদান। পায়ের জাদুকরি নৈপুণ্যে ফুটবল সংগঠকদের নজরে আসতে বেশি সময় লাগেনি তার। তারপর বোকা জুনিয়র্সকে আর্জেন্টাইন লিগ জিতিয়ে মাত্র ২১ বছর বয়সেই কাতালান জায়ান্ট বার্সেলোনায় নাম লেখান।
আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের হয়ে ১৯৭৭ সালে অভিষেক হয় ম্যারাডোনার। ১৯৮৬ সালে মাত্র ২৫ বছর বয়সে অনেকটা একক প্রচেষ্টায় আর্জেন্টিনাকে স্বপ্নের বিশ্বকাপ জেতান তারকা এ ফুটবলার। বিশ্বকাপের ওই আসরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করা তার একটি গোলকে ‘হ্যান্ড অব গড গোল’ এবং আরেকটিকে ‘শতাব্দীর সেরা গোল’ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
১৯৯০ বিশ্বকাপেও আর্জেটিনাকে ফাইনালে তুলেছিলেন ফুটবলের জীবন্ত এ কিংবদন্তি। রেফারির বিতর্কিত সিদ্ধান্তে কাপ জেতা হয়নি সেবার। ডোপ টেস্টে পজেটিভ হলে ১৫ মাসের নিষেধাজ্ঞা খড়গ নেমে আসে তার ওপর। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে মাঠে ফিরে এলেও ম্যারাডোনাকে তার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে আসতে দেখা যায়নি।কিছু শিরোপা আর ফুটবলের চোখ ধাঁধানো মুহূর্ত উপহার দেওয়া এ আর্জেন্টাইনের ক্যারিয়ারের ভালো মুহূর্তগুলো মূলত ১৯৯৪ বিশ্বকাপেই শেষ হয়ে যায়। ফুটবলকে বিদায় জানানোর আগে ২১ বছরের ক্যারিয়ারে ৬৭৯ ম্যাচে তিনি ৩৪৬ গোল করেছেন।খেলোয়াড় জীবনের পরবর্তী সময়ে কোচ হিসেবে আর্জেন্টিনা দলের দায়িত্ব নেন ম্যারাডোনা। তবে কোচিংয়ে ততটা সফল হতে পারেননি ফুটবলের এ জাদুকর।