শিশু-বান্ধব শহর গড়ে তোলার দাবী নিয়ে পথযাত্রা 

বাবলু হাসান লস্কর : পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটলো বৃষ্টি ভেজা কলকাতায় কয়েক শত কিশোর কিশোরী ।জেগে উঠল কিশোর কিশোরীদের পদযাত্রায় তিলোত্তমা কলকাতা।

    কলকাতা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৩ এই তিলোত্তমা কলকাতা, শিশুদের বাসযোগ্য শহর গড়ার লক্ষ্যে কিশোর-কিশোরীদের এক অভিনব পদযাত্রার সাক্ষী হয়ে রইল। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের মূল ফটক থেকে শুরু হওয়া এই অভিনব পদযাত্রায় -তুমুল বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে,পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রায় পাঁচশত কিশোর কিশোরী ও যুব সম্প্রদায় পা মেলায়।

     

    জাতীয়স্তরের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সিনি – চাইল্ড ইন নিড ইনস্টিটিউট , তাদের পঞ্চাশ তম বর্ষে ,দেশ জুড়ে কিশোর কিশোরীদের নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে চলেছে। আজকের অনুষ্ঠান সেই কর্মসূচীর অন্তর্গত অন্যতম উদ্যোগ।

    পরিসংখ্যান বলছে সারা বিশ্বে ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের সংখ্যা প্রায় ১৮০ কোটি। আর সেই যুব সম্প্রদায় যাতে নীতি নির্ধারণ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে, সে জন্য সারা বিশ্ব জুড়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অধীন পি এম এন সি এইচ “ওয়ান পয়েন্ট এইট বিলিয়ান গ্লোবাল কাম্পেন”- এর উদ্যোগ নিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে এই কর্মসূচীর দায়িত্বে রয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সিনি।তারা রাজ্যের প্রায় দেড় লক্ষ কিশোর-কিশোরী এবং যুব সম্প্রদায় এর কাছ থেকে, তাদের মতামত সংগ্রহ করেছে। এক বিশেষ চ্যাট বট এর মাধ্যমে, হোয়াটসঅ্যাপের এর সাহায্যে ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সী যুব সম্প্রদায় এই ক্যাম্পেনে অংশগ্রহণ করে। আর ১০ থেকে ১৫ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীরা সরাসরি হাতে লিখে তাদের মতামত প্রকাশ করে। অনলাইনে জমা হওয়া তথ্য সরাসরি লাইভ দেখার জন্য ,একটি বিশেষ ড্যাশ বোর্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এখানে সারা বিশ্বের থেকে জমা পড়া সমস্ত তথ্য, এক ক্লিকেই দেখা সম্ভব। অনুষ্ঠানে শিশু-বান্ধব শহর গড়ে তোলার জন্য স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সুরক্ষা নিয়ে কিশোর-কিশোরীদের মতামত, তাদের দৃষ্টিভঙ্গী, উপস্থিত বিশিষ্ট গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এবং প্রখ্যাত সমাজ বিজ্ঞানীরা অত্যন্ত আগ্রহের সাথে শোনেন। মিনি ওয়াকথনে এই পাঁচশোর বেশি কিশোর-কিশোরী ও যুবাদের সাথে, সিনি-র প্রতিষ্ঠাতা ডঃ সমীর চৌধুরী, সিনি-র চিফ অফ প্রোগ্রামস মিঃ মেঘেন্দ্র ব্যানার্জী , এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর , মেরিন মুখার্জি ,ডঃ স্বাতী চক্রবর্তী, শ্রীমতী দূর্বা সেন, শিশু সুরক্ষা কমিশন, শ্রীমতী প্রিয়দর্শিনী ঘোষ বেওয়া , সমাজ কর্মী সহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা পায়ে পা মেলান।

    সিনি-এর ন্যাশনাল অ্যাডভোকেসি অফিসার মিঃ সুজয় রায় সংবাদ মাধ্যমকে জানান যে, “আমদের মূল লক্ষ্য হল কিশোর-কিশোরীরা যাতে সামাজিক পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ করতে পারে সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়া এবং তাদের ইচ্ছেগুলো যাতে ডানা মেলে নীতি নির্ধারকদের কাছে পৌঁছে যায় তা সুনিশ্চিত করা।” তিনি আরও বলেন, “এই ক্যাম্পেনে, আমরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি, এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ কিশোর-কিশোরী তাদের মতামত আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন, যা কিনা সারা বিশ্বে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।তাদের কাছ থেকে অনলাইনে উঠে আসা প্রাথমিক চাহিদাগুলোর মধ্যে শিক্ষা, কর্মদক্ষতা, এবং কর্মসংস্থান প্রাধান্য পেয়েছে।

    অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী এক কিশোরী জানায় “আমাদের মত রাস্তায় যাদের বসবাস, তাদের কাছে ভালো এবং স্বাস্থ্যকর জীবনের ধারণা – অসম্ভব বলে মনে হয়! আমরা কী চাই বা আমরা কী ভাবি – তা জিজ্ঞাসা করার জন্য কেউ কখনও আমাদের সময় দেয়নি। এই ক্যাম্পেন আমাদের কথা বলার সুযোগ দিয়েছে এবং সারা বিশ্বের আমার বয়সী ছেলে মেয়েদের ভিতর যোগসূত্রের কাজ করেছে। আমি এইরকম একটা অভিযানের অংশ হতে পেরে ভীষণ খুশি।”সিনি-র প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি ড. সমীর চৌধুরী, কর্মসূচি বিষয় বক্তব্য রাখার সময় বলেন, ” আমি পেশায় একজন শিশুদের ডাক্তার, শিশুদের স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য সিনি পাঁচ দশকে ধরে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে কাজ করে চলেছে। আমাদের পঞ্চাশতম বছরে এই রকম একটি কাজে নেতৃত্ব দিতে পেরে খুব ভাল লাগছে। কারণ আমাদের সংস্থার লক্ষ্যই হল, একটি দায়িত্বপূর্ণ শিশু বান্ধব সম্প্রদায় গড়ে তোলা। যেখানে শিশু এবং যেখানে কিশোর-কিশোরীরা সত্যিকারের বিকশিত হয়ে উঠতে পারবে। এই কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবার জন্য আমি সকলকে ধন্যবাদ জানাই।”

    আজকের কলকাতা দেখলো এক অন্য ভোর।যে ভোরের স্বপ্ন হয়ে এলো কবি সুকান্তের কবিতার এক চিরকালীন লাইন-

    “এ বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাবো আমি।