বিহার নির্বাচনে তৃতীয় জোটের আবির্ভাব’ থাকছেন মায়াবতী ও ওয়েইসির দল

নতুন গতি ওয়েব ডেস্ক: মূলত দলিত এবং মুসলিম ভোটের কথা মাথায় রেখে বিহার রাজনীতিতে তৃতীয় ফ্রন্টের উদয় হল। আনুষ্ঠানিকভাবে বিহারে জোটের ঘোষণা করল উপেন্দ্র কুশওয়াহার দল আরএলএসপি, আসাদউদ্দিন ওয়েইসির এআইএমআইএম, এসডিপিআই ও মায়াবতীর বিএসপি। জোটের মু্যূমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হয়েছে উপেন্দ্রকে। গত কয়েকবারের মতো এবারও বিহারে প্রার্থী দিয়েছেন হায়দরাবাদের মুসলিম নেতা ওয়েইসি। অনেকের মতে, আরজেডির মুসলিম ভোটে ভাগ বসাতেই বিহারের ভোটে নামছেন তিনি। বিজেপি-বিরোধী মুসলিম ভোট যত ভাগ হবে, ততই সুবিধা পাবে নরেন্দ্র মোদির দল। কংগ্রেস আগে থেকেই ওয়েইসির দলকে বিজেপির ‘বি’ টিম বলে আসছে। এক্ষেত্রেও যে তাঁর ব্যতিক্রম হবে না, সেটা বলে দেওয়ায় যায়।

     

    বিহারের রাজনীতিতে গোড়ায় বন্ধুত্ব থাকলেও এক দশক ধরে নীতীশের বিরোধিতায় সরব রয়েছেন নিম্নবর্গের নেতা উপেন্দ্র। মোদি সরকারের প্রথম পর্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকা কুশওয়াহা জোট ছাড়লেও বিজেপির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছেন। কুশওয়াহাদের জোটের ফলে বিজেপি বিরোধী দলিত ভোটব্যাঙ্কে ভাঙন অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠতে চলেছে। হাথরসের ঘটনা তো রয়েইছে, এ ছাড়া মোদির শাসনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দলিতদের উপর নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।

     

    বিহারেও দলিতদের বড় অংশ গত ১৫ বছরে এনডিএ শাসনে ক্ষুব্ধ। দলিতদের সমর্থন পেতে নীতীশ কুমার যেমন জিতনরাম মাঝিকে দাঁড় করিয়েছেন, তেমনি রামবিলাস পাসোয়ানের পুত্র চিরাগও দলিতদের স্বার্থরক্ষায় সুর চড়াতে শুরু করেছেন। আজ শেষবেলায় মাঠে নামেন মায়াবতী। ফলে বিহারে দলিত ভোট তিন ভাগে ভাগ হতে পারে। যার ফায়দা তুলতে চাইছে বিজেপি। বিকেলে পটনায় তিন দলের জোট ঘোষণা হয়। রাতে দিল্লিতে মারা যান রামবিলাস পাসোয়ান।

     

    বিহারে জাতপাতের রাজনীতিতে পিছিয়েপড়া শ্রেণির প্রতিনিধি রামবিলাসের মতো নেতার মৃত্য‍ু ভোটে প্রভাব ফেলতে পারে বলেই অনেকে মনে করছেন। কারণ, এর ফলে সহনাভূতির ঝড়ে পাসোয়ান ভোট চিরাগের পিছনে এককাট্টা হতে পারে, দলিত ভোটের একটি বড় অংশ পেতে পারেন এলজেপি প্রার্থীরা। তেমন হলে এনডিএ জোটের অঙ্ক জটিল করে তুলতে পারেন চিরাগ। বিজেপি-জেডিইউয়ে টিকিট না পাওয়া প্রার্থীদের ভিড় ক্রমে বাড়ছে তাঁদের দলে।

     

    বৃহস্পতিবার যৌথ প্রেস কনফারেন্সে এই ছোট দলগুলি তৃতীয় ফ্রন্টের কথা ঘোষণা করেছে। যার নাম দেওয়া হয়েছে, গ্র্যান্ড ডেমোক্রেটিক সেকু্যলার ফ্রন্ট। এই জোট স্পষ্টতই তৈরি হয়েছে বিহারের জাতিগত সমীকরণের কথা মাথায় রেূে। হায়দরাবাদের মুসলিম নেতা ওয়েইসি অনেকদিন ধরেই বিহারের মুসলিম এলাকাগুলিতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। সম্প্রতি উপনির্বাচনে একটি আসনও জেতে তাঁর দল।

     

    অন্যদিকে, বিএসপি ঘোষিত দলিতদের পার্টি। এ ছাড়াও মহাদলিত, কুরমি, মল্লা-সব জাতির নেতাই আছেন এই জোটে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিহারে তৃতীয় এই শক্তির উদয় হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হল আরজেডির নেতৃত্বাধীন মহাজোটের। যে জোট পরিসরে ছোট হতে হতে এখন বৃহত্তর ইউপিএতে পরিণত হয়েছে। কংগ্রেস-আরজেডি ছাড়া এই জোটে রয়েছে শুধু বাম দলগুলি। ফলে সামাজিক সমীকরণে এঁরা পিছিয়ে যেতে পারে। কারণ, লালুর দলের মূল ভরসা মুসলিম এবং দলিত ভোট। এই তৃতীয় ফ্রন্ট সরাসরি সেই ভোটেই ভাগ বসাবে। এই জোট যত শক্তিশালী হবে, তত চাপ বাড়বে বিরোধী মহাজোটের।

     

    এসডিপিআই নেতা তাসলিম রহমানি বলেছেন জোটটি ১১টি দল নিয়ে গঠিত এবং ২৪৩টি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। তাঁর দলকে ১৬টি আসন বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রার্থীদের নাম ১২ অক্টোবর ঘোষণা করা হবে। এআইএমআইএমের প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়েইসি বলেছেন নীতীশ কুমার এবং বিজেপির ১৫ বছর এবং আরজেডি-কংগ্রেসের ১৫ বছর শাসনে বিহারের দরিদ্রদের কোনও উপকারই করতে পারেনি। বিহারের ভবিষ্যতের জন্য একটি জোট গঠন করা হয়েছে।