মেদিনীপুরে পুলওয়ামা শহীদ স্মৃতিতে স্বেচ্ছায় রক্তদান

 সেখ মহম্মদ ইমরান:নতুন গতি,মেদিনীপুর:- প্রেম , প্রীতি ও প্রণয়ের পরিচর্যাতেই বেঁচে আছে পৃথিবী। কেননা কেউ প্রেমহীন ভবসংসার নিয়ে বাঁচতে পারে না। আজ ছিল সেই প্রেম দিবস ১৪ই ফেব্রুয়ারি। ভালোবাসা মাপার কোনও ইউনিট নেই৷ বার বার ভালোবাসি বললেই তার সাতকাহন শেষ, ব্যাপারটা সেরকম নয়৷ ব্যস্ত দুনিয়ায় প্রিয় মানুষকে পুরোটা সময় দেওয়াই আসল প্রেম।আর সেই মুহূর্তটাই সারা জীবনের পুঁজি৷ এই রকম এক ভালোবাসা দিবসে গতবছর পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের অন্তত ৪০ জন ভারত মাতার বীর সন্তান নিহত হয়। ভালোবাসা দিবসে আমাদের মতো সেই বীর সন্তানদেরও মায়ের কাছে, স্ত্রীর কাছে, প্রেমিকার কাছে থাকার কথা ছিল। কিন্তু না, সেই বীর সন্তানরা আমাদের রক্ষা করার জন্য কাঁটাতার পাহার দিচ্ছেলেন। সেদিন আকস্মিক জঙ্গি হামলায় কোনো মা তার প্রিয় সন্তানকে হারিয়ে ফেলে, কোনো স্ত্রী তার স্বামীকে চিরতরে হারিয়ে ফেলে। আর আমরা হারালাম ভারত মাতার বীর সন্তানদেরকে। তাই গোলাপ নয়, লিলি নয়, দুঃস্থের ছায়া রক্তদানের মাধ্যমে প্রেম দিবস উদযাপন করলো, প্রেমের প্রকাশ পেল ব্লাড ব্যাংকের ভান্ডারে। 

    প্রেম তো প্রেমই, অনুভূতিতে মনের মানুষটার কথা বারবার ভাবা শয়নে, স্বপনে, জাগরণে, চিন্তায়, মননে। পুলওয়ামায় শহীদদের প্রতি দুঃস্থের ছায়া সেই অনুভূতি প্রকাশ করল। ভালোবাসা মানুষের জীবনের স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ দান, ভালোবাসা পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্লভ আকাঙ্খিত আবেদন। হৃদয়ের উষ্ণতা, বিশুদ্ধতা সমন্বয়ে এক মায়াবী অনুভুতির নাম ভালোবাসা। এক অজানা, অদেখা, চাপা কষ্টের অনুভুতিকে মহিমান্বিত করতে ৫৪জন আজ ভালোবাসা দিবসে শহীদদের উদ্দেশ্য রক্তদান করলো। এছাড়াও আরো অনেক উৎসাহী ও ইচ্ছুক ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত হয়েছিলেন, আজকের এই বিশেষ দিনে রক্তদান করার বাসনা নিয়ে। তবে অধিক পরিকাঠামোর অভাবে, কেবল ৫৪ জনেরই রক্ত নেওয়া হয়েছে। আজকের শিবিরে, যুবক- যুবতী, মহিলা ও প্রথম রক্তদাতাদের উৎসাহ ও উদ্দীপনা ছিল উল্লেখ করার মতো।


    পুলওয়ামা শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করে আজকের শিবির শুরু হয়, শেষ হয় জনগণমন অধিনায়ক জয় হে দিয়ে। আজকের শিবিরকে গৌরবান্বিত করতে উপস্থিত হয়েছিলেন ডক্টর শ্রী গিরিশ চন্দ্র বেরা মহাশয়, সি.এম.ও.এইচ., পশ্চিম মেদিনীপুর। অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার রক্ত আন্দোলনের দুই পথিকৃৎ তথা ভলান্টারী ব্লাড ডোনার্স ফোরামের সেক্রেটারি শ্রী জয়ন্ত মুখার্জি মহাশয়, এবং ভলান্টারী ব্লাড ডোনার্স ফোরামের চেয়ারম্যান শ্রী অসীম ধর মহাশয়। ফোরামের দুই গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের তত্ত্বাবধানে আজকের শিবির পরিচালিত হয়। এছাড়াও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মকর্তা, সমাজসেবী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, সাংস্কৃতিক জগতের মানুষজন সহ দুঃস্থের ছায়ার অসংখ্য শুভাকাঙ্খী উপস্থিত হয়েছিলেন।
    দু:স্থের ছায়ার অন্যতম সদস্য ওয়াসিম আহমেদ জানিয়েছেন, প্রত্যেক সমভাবাপন্ন মানুষের সাহায্য, সহযোগিতা ও ভালোবাসায় আজকের শিবির যেন মিলন মঞ্চে পরিণত হয়েছিল। সশরীরে, মানসিক ভাবে, আর্থিক ভাবে, শারীরিক ভাবে যারা পাশে ও সাথে ছিলেন, প্রত্যেককে অনেক অনেক ভালোবাসা। দুঃস্থের ছায়ার আগামীদিনের পথ চলাতেও এভাবেই পাশে ও সাথে থাকবেন। ৫৪ জন রক্তদাতাই এক একজন ভারতের বীর। প্রতিটি রক্তদাতাকে দুঃস্থের ছায়ার স্যালুট।