মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সাহায্যের আশ্বাস প্রশাসনিক কর্তা ও জন-প্রতিনিধিদের, পাঁচ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা রাজ্য সরকারের! কটাক্ষ বিজেপির

নতুন গতি ওয়েব ডেস্ক: বৃহস্পতিবার কলকাতার বুকে ড্রেনের কাজ করতে গিয়ে পাইপ ফেঁটে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হন মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর ২ ব্লক মালিওর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের তালসুর এলাকার চার বাসিন্দা। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ঐ চার জনের। তারমধ্যে তিনজন ছিলেন একই পরিবারের সদস্য। আজ মৃতের পরিবারের সাথে দেখা করতে আসেন নেতা, জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলেছেন তারা। যারা যারা মারা গেছে তাদের প্রত্যেকের জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার।

    এলাকায় কাজ নেই, পেটের ভাত জোগাড় করাও দুষ্কর। এমন অবস্থায় রোজগারের তাড়নায় কলকাতায় কাজ করতে গিয়েছিলেন হরিশচন্দ্রপুরের তালসূর এলাকার চার বাসিন্দা। ড্রেনের কাজ করতেন তারা। বৃহস্পতিবার কলকাতার পূর্ব পুটিয়ারিতে উঁচু নর্দমায় কাজ করতে গিয়ে পাইপ ফেঁটে মৃত্যু হয় তাদের। মৃত চারজন হলেন আলমগীর হোসেন(২৮), জাহাঙ্গীর আলম(২৬), সাবির আলি(২৪) ও লিয়াকত আলি(২২)। প্রথম তিনজন ভাই।

    বৃহস্পতিবার দুপুরে তাদের মৃত্যুর কথা চাউর হতেই পরিবারের পাশাপাশি এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। তারপরেই এদিন মৃত শ্রমিকদের বাড়িতে গিয়ে সমবেদনা জানালেন প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলের নেতারা। শুক্রবার সকালে হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ব্লকের বিডিও পার্থ দাসকে নিয়ে পূর্ব তালসুরে যান চাঁচলের মহকুমাশাসক সঞ্জয় পাল! মৃতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন রাজ্য সভার সাংসদ তথা জেলা তৃণমূল সভানেত্রী মৌসম নুরও। মৌসমের সঙ্গে এলাকায় গিয়েছিলেন জেলা পরিষদের শিশু, নারী ও ত্রান কর্মাধ্যক্ষ মার্জিনা খাতুন, তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর মানব বন্দ্যোপাধ্যায়, হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ও ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি মানিক দাস, হজরত আলি, জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক জম্বু রহমান সহ একাধিক নেতা। তার আগে বৃহস্পতিবার রাতে এলাকায় গিয়ে পরিবার দুটিকে সমবেদনা জানিয়ে আসেন হরিশ্চন্দ্রপুরের বিধায়ক মোস্তাক আলম, প্রাক্তন বিধায়ক তথা তৃণমূল নেতা তজমুল হোসেনও।

    পরিবার সূত্রে জানা গেছে তাদের না আছে থাকার ঘর ও না আছে পেটে দেওয়ার মতো ভাত। পেটের তাড়নায় ভিন রাজ্যে কাজ করতে যেত বাড়ির ছেলেরা। এমনকি বহুবার আবেদন করার পরও আবাস যোজোনার সুবিধাও পায়নি তারা। মৌসমকে সামনে পেয়ে পরিবারের একজনের চাকরির আবেদন জানান মৃতের পরিবারের লোকজন। এরকম অভাবী পরিবার কেন কোনো সরকারি সুবিধা পায়নি প্রসাশনিক কর্মকর্তাদের কাছে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা।

    মৃত শ্রমিক আলমগীরের স্ত্রী জোসনারা বিবি বলেন, “জমি জায়গা নেই, আমরা গরিব মানুষ তাই একটা চাকরির আবেদন করেছি। বাড়িঘরও নেই, অনেকবার আবেদন করার পরও ঘরের ব্যবস্থা হয়নি আমাদের। মৃত শ্রমিক লিয়াকত আলির মা জাইবুল বলেন আমি সকলের কাছে আমার বৌমার জন্য একটা কাজের অনুরোধ করছি। এখানে কোনো কাজ নেই, আমার ছেলে বাধ্য হয়ে বাইরে খাটতে গিয়েছিল। এখানে কোনো কাজ থাকলেও টাকা নেতারাই সব নিয়ে নিচ্ছে। পুরো লকডাউনে আমরা কোনো সাহায্য পাইনি।

    মহকুমা শাসক সঞ্জয় পাল বলেন,আমাদের ব্লকের চারজন বাসিন্দা দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। রাজ্য সরকার থেকে জেলা প্রসাশন সকলেই আছে পরিবারের পাশে। এছাড়াও যা যা সরকারি সুবিধা রয়েছে সবকিছুর ব্যবস্থা করা হবে।

    রাজ্য সভার সাংসদ এবং মালদা জেলার তৃণমূল নেত্রী মৌসম বেনজির নূর বলেন, “গতকাল খুব দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। তালসুরের চারজন মারা গেছে। পোস্টমর্টেম হয়ে গেলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রাজ্যের ঘোষণা করা ৫ লক্ষ আর্থিক অনুদান সহ সরকারি সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হবে। পরিবারের অবস্থা খুবই খারাপ। ওনারা চাকরির আবেদন করেছেন, এই বিষয়ে আমরা মুখ্যমন্ত্রীর সাথে কথা বলব।

    গৌরিপুরের বাসিন্দা মনোজ কুমার মন্ডল বলেছেন, নেতা, জনপ্রতিনিধিরা এসে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু আমরা সকল গ্রামবাসীর তরফ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন এই পরিবারটির পাশে দাঁড়াক। গ্রামে কোনো কাজ নেই। বাইরে গিয়ে সব বিপদে পড়ছে। আমাদের আবেদন কর্মসংস্থান বাড়ানো হোক।

    কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধীরা, বিজেপি নেতা অজয় গাঙ্গুলী কটাক্ষের সুরে বলেন গতকাল যারা দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে আমরা সবরকম ভাবে তাদের পাশে আছি। আজ তৃণমূলের জেলা সভানেত্রী গিয়ে বলেছেন তারা দেখছেন ব্যাপারটা। কিন্তু কথা হচ্ছে এই প্রতিশ্রুতি আগে কেন দেননি? এলাকায় কাজ নেই, শ্রমিকদের কাজের খোঁজে বাইরে যেতে হচ্ছে কেন ?