|
---|
লুতুব আলি : গোলাম আহমদ মোর্তজা সাহেবের অনুরোধে মেমারি হাই মাদ্রাসায় প্রধান শিক্ষকের পদে নিযুক্ত হন আবু তোরাব আলী। বীরভূমের নামি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ ছেড়ে পূর্ব বর্ধমানের জৌগ্রাম এর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় যোগদান না করে মেমারি হাই মাদ্রাসায় প্রধান শিক্ষকের পদে ২০১০ যোগদান করায় সেদিন অনেকে হাসাহাসি করেছিলেন এবং ব্যঙ্গ বিদ্রুপও করেছিলেন। উচ্চ প্রাপ্তিকে উপেক্ষা করে গোলাম আহমদ মুর্তজা সাহেবের অনুরোধকে আক্ষরিক অর্থে সেদিন তিনি পালন করেছিলেন। গত ৩১ আগস্ট ছিল তাঁর অবসরের দিন। আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর নেওয়ার আবু তোরাব আলী সাহেব ঘোর বিরোধী। বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক শিক্ষিকা এবং শিক্ষা কর্মীদের জোরজবস্তিতে প্রাথমিকভাবে তাঁর অবসরের ছোট্ট একটি অনুষ্ঠান করা হয়। ২০১০ সালে যখন তিনি এই মাদ্রাসায় আসেন তখন ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ২০০র মতো। তখন মাধ্যমিক পর্যন্ত ছিল।তিনি এই বিদ্যালয়ে যোগদান করার পর মাদ্রাসাটি একটি আদর্শ মাদ্রাসায় পরিণত হয়। মাধ্যমিক লেভেল পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীর অনুপাতে যতজন শিক্ষক-শিক্ষিকা পাওয়া যায় তার সমস্ত কিছু ব্যবস্থা করার পরিপেক্ষিতে শিক্ষকের সংকট আর নাই বললেই চলে। এই মাদ্রাসাটি গোলাম আহমদ মোর্তজা সাহেব ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠা করলেও ১৯৮৭ সালে সরকারি অনুমোদন পায়। গোলাম আহমদ মোর্তজা সাহেবের পুত্র কাজী মোঃ ইয়াসিন সাহেব ও এই মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেছেন। ইয়াসিন সাহেব গতবছর অবসর গ্রহণ করেছেন। এই মাদ্রাসাটি বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত। ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা ৬০০। শিক্ষক-শিক্ষিকা মোট ২৮ জন। এক সাক্ষাৎকারে আবু তোরাব আলী সাহেব বলেন, গোলাম আহমদ মোর্তোজা সাহেব আমার কাছে পিতার মতো ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তাঁর বলিষ্ঠ ওয়াজ এবং বক্তব্য শুনে এসেছি। তিনি যখন আমায় এই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদে নিযুক্ত হওয়ার কথা বলেছিলেন আমি তাঁর কথা ফেলতে পারিনি। এই মাদ্রাসায় যোগদান করায় আমার আত্মীয়-স্বজনরাও আমাকে পাগল বলেছিল। ২০১০ সালে যখন এই মাদ্রাসায় যোগদান করি তখন এই মাদ্রাসাটি প্রায় ধুঁক ছিল। সরকারি তেমন কোন অনুমোদন না থাকায় এমন দুর্দশায় পরিণত হয়েছিল। মোরতাজা সাহেব তাঁর অদম্য জোড় ও সাহসিকতার বলে এই মাদ্রাসাটিকে ধরে রেখেছিলেন। বর্তমানে এই এই মাদ্রাসাটি একটি আদর্শ মাদ্রাসা হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। এখানকার ম্যানেজিং কমিটি, শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষা কর্মী ও অভিভাবকদের সহযোগিতা ও আশীর্বাদ থাকায় মাদ্রাসাটির বর্তমান অবস্থা খুবই পরিপূরক। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গোলাম আহমদ মোর্তজা সাহেব জীবিত থাকাকালীন তোরাব আলী সাহেব কে ফেয়ারওয়েল দিয়ে গেছেন। তিনি বলেছিলেন, যখন তোমার অবসর গ্রহণ হবে আমি হয়তো তখন জীবিত থাকতে নাও পারি। এই আদর্শ প্রধান শিক্ষক মহাশয় ২০১২ সালে শিক্ষা রত্ন সম্মানে ভূষিত হন। এই বিদ্যালয়ের শিক্ষা সম্প্রসারণ ছাড়া ও তিনি নানান সামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন। রাজ্যের অন্যতম স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গাছ মাস্টার অরূপ চৌধুরীর গাছ গ্রুপের সঙ্গে তিনি ওতপ্রোতভাবে যুক্ত আছেন। সবুজয়ান এর ব্যাপারেও তিনি নিরলস প্রচেষ্টা চালান। গাছক রূপে আর একজন অন্যতম সদস্য মেমারি বিদ্যাসাগর স্মৃতিবিদ্যা মন্দির ইউনিট-১ এর সহশিক্ষক মোঃ সেলিম বলেন, আবু তোরাাব আলী সাহেব বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। শিক্ষা সম্প্রসারণ ও সামাজিক কাজের সঙ্গে তিনি আন্তরিকভাবে কাজ করে যান। ৩১ আগস্ট মেমারি হাই মাদ্রাসার ফেয়ারওয়েল অনুষ্ঠানে জারুল, শিশু, সেগুন গাছ রোপন করা হয়। খাঁরো এলাকার বাসিন্দা বিশিষ্ট সাংবাদিক রফিক উদ্দিন মন্ডল বলেন তোরাব আলী স্যার খ্যাতির সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের পদ সামলেও তাঁর দুই পুত্রকে মানুষের মতো মানুষ করে তুলেছেন। একজন পুত্র জয়েন্ট বি ডি ও দ্বিতীয়জন ডাক্তার। ছোট্ট বিদায়ী অনুষ্ঠানের দিন আবেগঘন মুহূর্তে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক শিক্ষিকা রা চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। এদিনের অনুষ্ঠানে এলাকার বহু হিতাকাঙ্খী মানুষ উপস্থিত ছিলেন। অন্যতম সমাজকর্মী শেখ সবুর উদ্দিন স্কুলের স্যারের সঙ্গে থেকে সব রকম উন্নয়নমূলক কাজের সহযোগিতা করে গিয়েছেন। শরীর এই কর্মজীবন থেকে বিদায় দেওয়া খুবই দুঃখজনক ঘটনা। অনুষ্ঠানে হাই মাদ্রাসার শিক্ষক জানকিনাথ মুখার্জি মননশীল বক্তব্য সকলের মনকে স্পর্শ করেছে।