|
---|
নিজস্ব সংবাদদাতা : অঙ্কে মস্তিষ্ক ভালো হওয়ার জন্য মেয়েকে দাবাতে ভর্তি করানো। তারপর থেকেই দাবায় একের পর এক সাফল্য। এবার অনূর্ধ্ব-১৪ জাতীয় দাবা প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হল বাংলার মেয়ে মৃত্তিকা মল্লিক।
বাড়ির কেউ দাবাড়ু নন৷ শুধুমাত্র নিজের চেষ্টা আর অধ্যাবসায়ের জোরেই আজ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে হুগলির চুঁচুড়ার ২ নম্বর কাপাসডাঙা কলোনির বাসিন্দা মৃত্তিকা৷ হুগলির বিনোদিনী গার্লস স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী সে। পড়াশোনার পাশাপাশি ছবি আঁকা, গান গাওয়ার প্রতিও ঝোঁক রয়েছে তার।মেয়ের যখন সাত বছর বয়স, একদিন দাবা কিনে আনেন মা৷ দাবা খেললে মাথা পরিষ্কার হয়, মেয়ে অঙ্কে ভালো হবে, সেই আশায় মেয়েকে দাবায় ভর্তি করান তিনি।মৃত্তিকার দাবায় হাতেখড়ি হয় তাদেরই এক প্রতিবেশী বাণী সরকারের হাতে। এরপর চুঁচুড়া টাউন ক্লাবে অভিষেক সরকারের কাছে দাবা শেখে সে৷ আর এখন কলকাতার গোর্কি সদনে দুর্গাপ্রসাদ মহাপাত্রর কাছে দাবা খেলায় পারদর্শী হয়ে উঠছে মৃত্তিকা।মৃত্তিকার ঝুলিতে পুরস্কারের সংখ্যাও কম নয়। অনূর্ধ্ব-১১ জাতীয় দাবায় রানার আপ হয়েছিল মৃত্তিকা। ২০২১ সালে অনূর্ধ্ব-১৩ এশিয়ান স্কুল দাবার অনলাইন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয় সে। ২০২২ সালে অনলাইন দাবায় এশিয়ান টিম চ্যাম্পিয়নশিপে দেশের হয়ে ‘এ’ দলে খেলে মৃত্তিকা। ওই প্রতিযোগিতায় আগামী দিনে মেয়েকে আরও বড় দাবাড়ু বানানোর লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছেন মা-বাবা৷ তবে দাবার মতো দামি খেলা খেলানোর মতো আর্থিক সঙ্গতি নেই পরিবারটির৷ দাবা খেলার জন্য অনেক সরঞ্জামই মেয়েকে কিনে দিতে পারেন না বলে মৃত্তিকার বাবার আফশোসের অন্ত নেই৷ কিন্তু মেয়ে সে সব বাধা পেরিয়ে একের পর এক ট্রফি জিতে চলেছে৷ তাই সাধ্য না থাকলেও, সাধ আছে মৃত্তিকার পরিবারের৷
মৃত্তিকা এদিন জানায়, প্রতিবেশী বাণী সরকারের কাছে দাবা খেলা শিখতে যাওয়ার পর তার প্রশিক্ষক তাকে একটি দাবার টুর্নামেন্ট দেখাতে নিয়ে যান। সেই থেকেই দাবার প্রতি আগ্রহ। দিনের বেশিরভাগ সময় কাটে দাবা নিয়েই। জাতীয় স্তরে দাবা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সময় থেকেই দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ছিল মৃত্তিকার। ১৫০ জন প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে অনূর্ধ্ব ১৪ জাতীয় স্তরের দাবা প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয় সে।
মৃত্তিকার মা মীনাক্ষী মল্লিক বলেন, “সাত বছর বয়সে, পড়াশোনায় ভালো হবে বলে দাবা কিনে দিয়েছিলাম৷ ও যে দাবাড়ু হয়ে যাবে, ভাবিনি৷” মৃত্তিকার বাবা অরিন্দম মল্লিক জানান, “মধ্যবিত্ত ঘর থেকে দাবায় চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা ঈশ্বরের আশীর্বাদ৷ দাবা খুব দামি খেলা। দাবার প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য প্রশিক্ষকদের বেতনও অনেক।” মৃত্তিকার এই প্রাপ্তিতে গর্ববোধ করছেন তার মা-বাবা।