ফের নিজের দল নিয়ে বিভ্রান্তি বাড়ালেন মুকুল রায়

নতুন গতি নিউজ ডেস্ক: ফের নিজের দল নিয়ে বিভ্রান্তি বাড়ালেন মুকুল রায়৷ এ দিন বিধানসভায় দাঁড়িয়ে তিনি ফের বললেন, কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রে ফের প্রার্থী হলে তিনিই বিজেপি-র টিকিটে জিতবেন৷ তৃণমূলের হয়ে দাঁড়ালে অবশ্য কী হবে তা মানুষ ঠিক করবে বলে মন্তব্য করেন তৃণমূল নেতা৷

    কয়েক দিন আগেই কৃষ্ণনগরে গিয়ে এই একই মন্তব্য করেন মুকুল রায়৷ সেদিনও তিনি বলেছিলেন, বিজেপি-র টিকিটে ভোটে দাঁড়িয়ে কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্র থেকে জয়ী হবেন তিনি৷ প্রবীণ নেতার এই মন্তব্যে রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায়৷ মুকুলের ওই মন্তব্যের পর তাঁর ছেলে শুভ্রাংশু রায় দাবি করেছিলেন, স্ত্রীর মৃত্যুর শোক সামলে উঠতে না পেরেই অসংলগ্ন কথা বলছেন তৃণমূল নেতা৷ বাবার শারীরিক সমস্যার রয়েছে বলেও দাবি করেছিলেন শুভ্রাংশু৷

    এ দিন অবশ্য ফের সেই একই মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি করে দলের অস্বস্তি আবারও বাড়ালেন মুকুল রায়৷ তবে বার বার মুকুলের এই ধরনের ‘অসংলগ্ন মন্তব্যের’ পিছনে রাজনৈতিক কৌশল রয়েছে কি না, এ দিনের পর সেই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে৷

    শুক্রবার বিধানসভায় পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে এসেছিলেন মুকুল রায়৷ তিনি পিএসি-র চেয়ারম্যান৷ মুকুল রায়ের কাছে সাংবাদিকরা ফের জানতে চান, কৃষ্ণনগরে তো আপনি বিপুল ভোটে জিতেছিলেন, সেখানে আবার তিনি প্রার্থী হলে কি জিততে পারবেন? জবাবে মুকুল বলেন, ‘হ্যাঁ’৷ এর পরেই মুকুলকে প্রশ্ন করা হয়, আপনি তো তৃণমূলের হয়ে দাঁড়াবেন? মুকুল ততক্ষণাৎ জবাব দেন, ‘না, বিজেপি-র হয়ে দাঁড়ালে জিতব৷ তৃণমূলের হয়ে দাঁড়ালে কী হবে তখন সেটা মানুষ সিদ্ধান্ত নেবেন৷’শুধু নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়েই নয়, মুকুল রায় স্পষ্ট জানিয়ে দেন, বিজেপি-র তরফেই তিনি পিএসসি-র চেয়ারম্যান হিসেবে বৈঠক করছেন৷ কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়কের যুক্তি, বিজেপি-র টিকিটে তিনিই ভোটে লড়ে তিনি জয়ী হয়েছেন বলেই তাঁকে অধ্যক্ষ পিএসি চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করেছেন৷

    যদিও ত্রিপুরা প্রসঙ্গে নিজের বর্তমান দল তৃণমূল কংগ্রেসের হয়েই সওয়াল করেছেন মুকুল রায়৷ ত্রিপুরায় যে তৃণমূল শক্তিবৃদ্ধি করেছে বলেও দাবি করেন তিনি৷ ত্রিপুরায় তৃণমূলের উপরে হামলার ঘটনাও অন্যায় বলেও সমালোচনা করেন বিজেপি নেতা৷ কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ত্রিপুরার ঘটনার জন্য সরাসরি বিজেপি-কে দায়ী করে কোনও মন্তব্য করেননি তিনি৷ ত্রিপুরায় তৃণমূলের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনাও আগের থেকে অনেকটাই বেড়েছে বলেও দাবি করেন তৃণমূল নেতা৷ মুকুল বলেন, ‘এটা অন্যায়, অরাজনৈতিক ব্যাপার হচ্ছে৷ ভয় পেয়েছে কি না জানি না, কিন্তু এটা ঠিক নয়৷’ দল নির্দেশ দিলে তিনি ত্রিপুরায় যাবেন বলেও জানিয়েছেন মুকুল রায়৷

    মুকুল রায়ের এ দিনের মন্তব্যরে নিছক শারীরিক কারণে অসংলগ্ন কথা মানতে নারাজ রাজনৈতিক মহলের একাংশ৷ কারণ পর পর দু’ দিন মুকুলের মতো অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ একই ভুল করবেন, তা মানতে চাইছেন না অনেকেই৷ বরং তাঁর পিএসি চেয়ারম্যান হওয়া নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে, সেকথা মাথায় রেখেই মুকুল সচেতন ভাবে নিজেকে বিজেপি বিধায়ক এবং নেতা হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন বলে মনে করা হচ্ছে৷ কারণ মুকুলকে পিএসি চেয়ারম্যান পদে নিয়োগের বিরোধিতা করে বিধানসভার অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছে বিজেপি৷ দলত্যাগ বিরোধী আইনে তাঁকে বহিষ্কারের দাবিও জানানো হয়েছে৷ বিজেপি-র সেই অভিযোগের শুনানি শুরু করেছেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়৷ শুধু তাই নয়, পিএসসি চেয়ারম্যান পদে মুকুলের নিয়োগের বিরোধিতা করে আদালতে মামলাও দায়ের হয়েছে৷

    ফলে আইনি দিক দিয়ে নিজের অবস্থান মজবুত করতেই অভিজ্ঞ মুকুল এই কৌশল নিয়েছেন কি না,সেই প্রশ্ন উঠছে৷ কারণ মুকুল যে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন তা প্রমাণ করতে তাঁর তৃণমূলে যোগদানের ভিডিও ফুটেজকে অস্ত্র করেছে বিজেপি৷ এবার পাল্টা গণমাধ্যমে বার বার নিজেকে বিজেপি-র সদস্য বলে দেখাতে চেয়ে মুকুল নিজের যুক্তি তৈরি রাখছেন বলেই মনে করা হচ্ছে৷