ভয়ঙ্কর বন্যা পরিস্থিতিতে খানাকুল বাশির পাশে নবাবিয়া মিশন

আরিফুল ইসলাম, হুগলী: কয়েক দশক ধরে শুনে আসছি বন্যা কবলিত এলাকা হুগলীর খানাকুল। কিন্তু এবারে বন্যার চিত্র অন্যরকম। কি ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল সেখানে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে তা জানা গেল। স্থানীয়রা বলছেন ৭৮ সালের বন্যার থেকেও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির তৈরি হয়েছিল খানাকুলে। এক সপ্তাহ কেটে গেলেও এখনো পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। বহু জায়গায় রাস্তায় উপর দিয়ে জলের স্রোত বইছে, গ্রামকে গ্রাম এখনও ডুবে আছে জলের তলায়। যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনো স্বাভাবিক হয়ে ওঠেনি। ফলে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে খানাকুল বাসি।

    ঠিক এই কঠিন মুহূর্তে খানাকুল বাশির পাশে দাঁড়িয়েছে নবাবিয়া মিশন। বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে সারাবছর অসহায়-দুস্থ-বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে সারাবছর নবাবিয়া মিশন যেভাবে দাঁড়ায়, ঠিক একইভাবে এবারের ভয়ঙ্কর বন্যা পরিস্থিতিতেও মানুষের পাশে দাঁড়াতে পিছপা হয়নি বাংলার অন্যতম এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যেদিন থেকে প্লাবিত হতে শুরু হয়েছে মিশনের কর্মীদের উদ্যোগে নৌকায় করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রিপল বিতরণ ও পানীয় জল দেওয়া শুরু হয়েছে। এই মুহূর্তে কয়েকশো মানুষকে প্রতিদিন দুপুরে রান্না খাবার খাওয়ানো চলছে মিশন ক্যাম্পাস থেকে।

    খানাকুলের মাইনান ছাড়াও কাছড়া, ঘোষপুর, রাজহাটি, সহ বহু দূর দূরান্ত থেকে পায়ে হেঁটে মানুষ ত্রাণ সামগ্রী নিতে মিশনে উপস্থিত হয়। সকাল থেকেই মিশনের মেইন গেটে মেলার মত ভিড় জমে যায় বন্যা কবলিত এলাকার মানুষদের। ত্রাণ নিতে আসা কয়েকজন মহিলা কাঁদো কাঁদো স্বরে বলেন আমাদের কিছু নেই ঘরবাড়ি সব শেষ ঠিকমত খেতে পাচ্ছিনা রান্না করার জায়গা নেই। বাড়ির ছাদে ত্রিপল খাটিয়ে কোনরকমে বসবাস করছি। যখনই আমরা সমস্যায় পড়ি এই নবাবিয়া মিশনের দিকে তাকিয়ে থাকি। আমাদের একটা আশা থাকে কিছু না কিছু সাহায্য পাবো। নবাবিয়া মিশন আরও বড় হোক আরো উন্নতি করুক ভগবান শাহিদ আকবরের ভালো করুক। এভাবেই মানুষের পাশে থাকুক। এই প্রার্থনা করতে শোনা যায় ত্রাণ নিতে আসা ব্যক্তিদের মুখ থেকে।

    শেখ সাহিদ আকবার বলেন, নাবাবিয়া মিশনের উদ্যোগে, পতাকা ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেড এর কর্ণধার জি ডি চ্যারিটেবল সোসাইটির চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোস্তাক হোসেন সাহেবের আর্থিকসহযোগিতায় মিশন ক্যাম্পাস থেকে এদিন ২০০০ মানুষকে খাদ্য সামগ্রী তুলে দেয়া হয়। সাহিদ আকবার আরো জানান, এবছর বন্যায় খানাকুলে বহু ক্ষয়-ক্ষতি হয়েগেল। সেই সঙ্গে নবাবিয়া মিশন ডুবে গিয়েও মিশনের প্রয়োজনীয় সামগ্রী নষ্ট হয়ে কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সে সময় আমারা নিজেরাও বন্যা পরিস্থিতির শিকার হয়ে খাদ্যসংকটে ভুগেছি আমরাও। বিশেষ করে পানীয় জলের হাহাকার দেখা দিয়েছিল। ইলেকট্রিক না থাকার কারণে সাপের উপদ্রব ছিল চরম। আমার জীবনের অনেক দুর্যোগ দেখেছি কিন্তু ২০২১ সালের বন্যার মতো ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি এর আগে কখনও দেখিনি। আস্তে আস্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতেই, বিভিন্ন সময়ে আমরা যেভাবে মানুষের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিই ঠিক এবারেও একইভাবে মানুষের মুখে দু’বেলা দু’মুঠো আহারের ব্যবস্থা করেছি। এলাকায় এলাকায় খিচুড়ি রান্না করে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছি। মিশনের শিক্ষক শিক্ষিকা ও সমস্ত কর্মচারীদের দিনরাত পরিশ্রমের মাধ্যমে আজকে মিশনের মেন গেট থেকে ত্রাণকার্য শুরু হলো। বেশ কিছু দিন চলবে ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি। যে সমস্ত সহৃদয় ব্যক্তিদের এই মুহূর্তে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাদের জন্য স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা চির কৃতজ্ঞ থাকব সর্বোপরি মোস্তাক হোসেন সাহেব এর জন্য স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করি প্রাক্তন আইএএস নুরুল হক সাহেব শরীফ হোসেন মোতাহার হোসেন মোশরেফা হোসেন গণেশ সেন শহীদুল খান সকলের কাছে চির কৃতজ্ঞ। এই মুহূর্তে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য প্রতি নিহত আমাদের খবর নিয়েছেন এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন আরামবাগের এসডিও ম্যাডাম এসডিপিও সাহেব থেকে শুরু করে খানাকুল ১নং বিডিও খানাকুল থানার ওসি সহ অন্যান্য আধিকারিক। প্রতিনিয়ত রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিশনের শুভানুধ্যায়ী পরিস্থিতির উপর খেয়াল রেখেছেন এবং বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে আসছেন।

    এদিন এই মহতী ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন আরামবাগের মাননীয় এসডিপিও মহাশয় খানাকুল থানার মাননীয় মহাশয় অন্যান্য আধিকারিকগণ। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে সমাজসেবী মীর সম্রাট, জাহির হোসেন, মোল্লা বাহারুল ইসলাম, পঞ্চায়েত প্রধান শীতল মণ্ডল, উপপ্রধান মনির উদ্দিন সহ একাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে ত্রাণ সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। খানাকুল থানার পুলিশ প্রশাসন সকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সার্বিক সহযোগিতা করেন।

    বলা বাহুল্য, শিক্ষাক্ষেত্রে নবাবিয়া মিশন বাংলার বুকে যেভাবে সুনাম অর্জন করেছে ঠিক তার সাথে সাথে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আম্ফান-ইয়াস ঘূর্ণিঝড় থেকে শুরু করে লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষকে সর্বদা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে সমাজের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষেরা মিশনের সাধারণ সম্পাদক শেখ শাহিদ আকবারে প্রশংসায় পঞ্চমুখ।